|
ভিন স্বাদের দুনিয়ায় |
হাত বাড়ালেই...
সুচন্দ্রা ঘটক |
|
জাপানি ভাষার ক্লাসে বসে কয়েক বছর আগেও সুশি আর তেম্পুরার নাম শুনে অবাক হয়েছিলেন অধিকাংশই। খাবারগুলো ঠিক কেমন, তা বোঝাতে ছবিও নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক। তবে চেখে দেখার সুযোগ হয়নি কলকাতার ওই পড়ুয়াদের। তখনও মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে কোনও রেস্তোরাঁয় এ ধরনের খাবার প্রায় পাওয়াই যেত না। তাই সাধারণ বাঙালির কাছে জাপানি-সহ অধিকাংশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় খাবার ছিল অপরিচিতই। নতুন ধরনের খাওয়াদাওয়ায় খুব উৎসাহী কয়েক জন বড়জোর তাই খাবার চেখে দেখতে গ্র্যান্ড হোটেলের ‘বান তাই’ রেস্তোরাঁ পর্যন্ত যেতেন। কলকাতাবাসীর কাছে তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় খাবার মানেই ছিল তাই স্যুপ আর দু’-একটি এটা-সেটা পদ। |
|
তবে কয়েক বছরেই বেশ বদলাতে শুরু করেছে পরিস্থিতিটা। ছোট-বড় নানা ধরনের রেস্তোরাঁর মেনু কার্ডে মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছিল তাই-জাপানি সুখাদ্যের নাম। আয়োজন হচ্ছিল ওই অঞ্চলের রান্না নিয়ে ছোটখাটো খাদ্যোৎসবেরও। আরও একটু এগিয়ে এখন অবশ্য শহরে তৈরি হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সুখাদ্যের জন্য রীতিমতো আলাদা ঠিকানা। শীত শুরুর আগেই কোনও এক দিন চেখে দেখা যায় তেমন কোনও রেস্তোরাঁয় তোম খা, ক্রিস্পি ডাক স্যালাড বা মালাকা মাশরুম।
স্বল্প পরিচিত তাই-জাপানি রান্নার পাশাপাশি প্রায় অপরিচিত ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা কোরিয়ার মতো দেশের খাবারও চেখে দেখতে চাইলে চলে যাওয়া যায় ‘দ্য ফ্লাইং মঙ্ক’-এ। উডবার্ন পার্কের এই নতুন রেস্তোরাঁয় ঝাল ঝাল চিলি বিন সসে রান্না করা চিংড়ি বা তেরিয়াকি সসে ম্যারিনেট করে রাঁধা হাসের মাংসের সঙ্গে কিছু গ্রিল্ড সব্জি কলকাতার জিভে একেবারেই নতুন স্বাদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নানা সসের সম্ভারের স্বাদ আস্বাদন করতে চেখে দেখা যায় ফিশ ইন হট ব্ল্যাক বিন সস্, স্টার ফ্রায়েড চাইনিজ গ্রিন্স ইন চিলি মাস্টার্ড সস্ বা কর্ন অ্যান্ড তোফু ইন চিলি সিল্যান্ট্রো সস্। মশলাদার কাটসু সস্ দিয়ে বিখ্যাত জাপানি পদ পাংকো ফ্রায়েড প্রনও ভারতীয় জিভে বেশ লাগতে পারে। পাশাপাশি, হর গাও, সুই মাই, প্রন গিয়োজার মতো রকমারি ডিমসাম তো রয়েছেই। সঙ্গে চলতে পারে সে অঞ্চলের বিখ্যাত জ্যাসমিন চা। |
|
পিছিয়ে নেই অপেক্ষাকৃত নতুন রেস্তোরাঁ ‘ওয়াসাবি’ও। সেখানে আবার চেখে দেখা যায় নানা ধরনের সুশি আর তেম্পুরা। ইতিমধ্যেই সেখানকার গিওজা, মোমোর জাপানি সংস্করণ, জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে বেশ। ওয়াসাবি সসের সঙ্গে ছোট্ট গোল ডাম্পলিংয়ের মধ্যে সব্জি অথবা মাংস ভরা এই সুখাদ্যে জমিয়ে তোলা যায় যে কোনও দুপুর অথবা সন্ধ্যা। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রান্না এবি সোবা সি ফুড র্যামেন স্যুপেও সারা যায় অন্য
রকম ভোজ।
রকমারি তাই খাবারের জন্য ইতিমধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে ‘বেনজারং’। দক্ষিণ কলকাতার এই রেস্তোরাঁয় চেখে দেখা যায় অল্পপরিচিত কিছু তাই রান্না। তার মধ্যে কলকাতার পছন্দের তালিকায় বেশ জাঁকিয়ে জায়গা করে নিয়েছে রেড কারি
পেস্টে হাল্কা ভাজা কাঁকড়ার মাংস পু পাড চা আর গলদা চিংড়ি, টক-ঝাল তাই স্যুপ
টম ইয়াম। |
|
জাপানি খাদ্যপ্রেমীদের উৎসবের মেজাজটা আরও কিছু দিন ধরে রাখতে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে চালু হয়েছে সেখানকার খাবার নিয়ে এক অভিনব উৎসব। সে দেশ থেকে উড়ে এসে বিশেষজ্ঞ শেফেরা কলকাতার রসিক জনেদের জন্য তৈরি করছেন নিত্য নতুন জাপানি সুখাদ্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রসনায় মুগ্ধরা চেনা তেম্পুরা আর সুশির সঙ্গে সেখানে চেখে দেখতে পারেন টোকিও উড়োনের মতো অচেনা নুডল্স স্যুপও। থাকছে রাইস বল ‘ওনিগিরি’, স্টিক বল ‘ইয়াকিতোরি’, ভাজা মাংস কারাজের মতো অচেনা নানা রান্নাও। |
|