জটিলতায় লাইসেন্স
‘অবৈধ’ সুরা
‘ক্ষমতা বিভাজন’ নিয়ে প্রশাসনিক টানাপোড়েন। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে আবগারি লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের কাজ। তাই প্রায় আট মাস ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে হাওড়া শহরের অধিকাংশ পানশালা এবং দেশি ও বিলিতি মদের দোকান। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফি জমা দেওয়ার পরেও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কমিশনারেটে দিনের পর দিন ছোটাছুটি করেও লাইসেন্স পাচ্ছেন না তাঁরা। জানতে চাইলে কর্তারা একে অন্যের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন।
হাওড়ায় পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হয় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যের আবগারি সচিব এইচ কে দ্বিবেদী বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দেন, রাজ্যে যে সব অঞ্চলে পুলিশ কমিশনারেট হয়েছে, (হাওড়া ও আসানসোল-দুর্গাপুরে) সেই সব এলাকায় আবগারি দফতরের লাইসেন্স পেতে হলে বা পুনর্নবীকরণ করতে গেলে প্রশাসনকে অবশ্যই পুলিশ কমিশনারেটের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিতে হবে। পুলিশের ছাড়পত্র না পেলে জেলা প্রশাসন লাইসেন্স দিতে পারবে না।
রাজ্য আবগারি দফতর সূত্রে খবর, আগে নতুন লাইসেন্স দেওয়া বা লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের একমাত্র ক্ষমতা ছিল আবগারি দফতরের। পদাধিকার বলে প্রত্যেক জেলাশাসক সেই অনুমোদন দিতেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরে ‘বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট, ১৯০৯’ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের হাতে এই ক্ষমতা কিছুটা হস্তান্তরিত হয়।
আর সেই বিভাজনের জেরেই আবগারি লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ নিয়ে হাওড়ায় জেলা প্রশাসন ও সিটি পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।
‘বেঙ্গল জোন ফরেন লিকার অফ অ্যান্ড অন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি হিমাংশুশেখর চৌধুরীর অভিযোগ, “গত ৩১ মার্চ আবগারি দফতরে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্য নির্ধারিত শুল্ক দেওয়ার পরেও গত ছ’মাস তা নবীকরণ হয়নি। শুল্ক জমা দেওয়ার পরেও কেন লাইসেন্স ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না, এর উত্তরে জেলাশাসকের অফিস থেকে দায় চাপানো হয়েছে সিটি পুলিশের উপরে। আবার সিটি পুলিশ দায় চাপিয়েছে জেলাশাসকের উপরে। সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।”
হাওড়া কমিশনারেট সূত্রে খবর, সমস্যা মেটাতে খোদ পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে দু’দফায় জেলাশাসককে চিঠি লেখেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশের ছাড়পত্র না নিয়ে আবগারি লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ত কি না জানতে চাওয়া হচ্ছে না। তাই অবিলম্বে লাইসেন্সধারীদের তালিকা পাঠানো হোক।
কমিশনার প্রথম চিঠিটি লেখেন গত ১০ মার্চ। ২৭ অগস্ট তিনি জেলাশাসককে ফের চিঠি দিয়ে আবগারি লাইসেন্সধারীদের তালিকা চেয়ে পাঠান এবং লাইসেন্স অনুমোদনের আগে পুলিশের ছাড়পত্র নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। তার পরেও আজ পর্যন্ত জেলাশাসকের দফতর থেকে কোনও তালিকা বা ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ চাওয়া হয়নি। ফলে আবগারি লাইসেন্স নবীকরণও হয়নি।
এ ব্যাপারে হাওড়ার নতুন জেলাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “আমি জানতাম না সরকারের এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ আছে। সম্প্রতি জেনেছি লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ‘নো অবজেকশন’ বাধ্যতামূলক। এ বার কমিশনারেটে লাইসেন্সধারীদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.