|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
নাটকীয় সংঘাত তা সে জীবন হোক বা প্রকৃতি |
সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল শূদ্রক নাট্যগোষ্ঠীর সম্মেলক প্রদর্শনী। দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ। |
গত কয়েক বছর যাবৎ শূদ্রক নাট্যগোষ্ঠী তাদের নাট্যোৎসবের সঙ্গে চিত্র ও ভাস্কর্যের একটি প্রদর্শনীও করে থাকে। নাটকের সঙ্গে অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এটাকেই তাঁরা নানা দিক থেকে অনুধাবন করতে চান। প্রদর্শনী ছাড়া সঙ্গীত এবং বিভিন্ন মাধ্যমের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে নাট্যোৎসবের সঙ্গে। এ বারের প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল- ‘নাটকীয় সংঘাত: জীবনে ও প্রকৃতিতে।’ ৩০ জন চিত্রী ও ছ’ জন ভাস্করের কাজের মধ্যে এই ভাবনাকেই নানা ভাবে অনুধাবনের ইঙ্গিত ছিল যে নাটকীয়তা কী ভাবে কাজ করে ছবি বা ভাস্কর্যে। এই প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত শিল্পীরা সৃজনের ক্ষেত্রে এসেছিলেন ১৯৬০-এর দশক থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যে। ফলে পাঁচটি দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের চর্চায় ছবির যে বিবর্তন, সেটাও এসেছে।
ছবিতে ষাটের দশকের শিল্পীদের মধ্যে রবীন মণ্ডলের কাজটি আদিমতাসম্পৃক্ত একটি মুখাবয়ব। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভ্র চিত্রপটের সম্পূর্ণ পরিসরকে শূন্য রেখে মাত্র একটি জঙ্গম রেখায় এঁকেছেন একটি মুখের আভাস। সনৎ করের ছবিতে ছিল কল্পরূপাত্মক মানব-মানবীর স্বপ্নের আবেশ। তা থেকেই জেগে উঠেছিল স্নিগ্ধ এক নাটকীয়তা। গণেশ হালুই-এর বিমূর্তায়িত নিসর্গ, সুনীল দাসের ‘স্প্যানিশ বুল’ এবং যোগেন চৌধুরীর ফুল ও পল্লবের ড্রয়িং তাঁদের প্রচলিত রীতির কাজের দৃষ্টান্ত।
সত্তরের শিল্পীদের মধ্যে পার্থপ্রতিম দেবের ‘ম্যান অ্যাট দ্য কনস্ট্রাকশন সাইট’ শীর্ষক ছবিটিতে আধুনিক নির্মাণের বিশালতার মধ্যে একক মানুষের অসহায়তার নাটকীয়তা ফুটে উঠেছে। কাঞ্চন দাশগুপ্ত তাঁর স্বাভাবিকতা-আশ্রিত রূপারোপে তুলে ধরেছেন মুখ ও মুখোশের নাটকীয় সংঘাত। দেবব্রত চক্রবর্তী এঁকেছেন বিমূর্তায়িত নিসর্গ। অসিত পাল কালীঘাটের পটের আঙ্গিকে এঁকেছেন বিড়াল কোলে নারীর আলেখ্য। |
|
শিল্পী: স্বপনকুমার মল্লিক |
আশির দশকের শিল্পীদের মধ্যে ওয়াসিম কপূর অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতায় এঁকেছেন কণ্টকাবৃত যিশুখ্রিষ্টের মুখ। গৌতম চৌধুরীর ‘নিঃসীম লিঙ্গ পরিচয়’ শীর্ষক ছবিতে মানবিকতার অন্তঃস্থ শূন্যতার নাটকীয়তা অত্যন্ত সূক্ষ্ম পর্দায় উদ্ভাসিত হয়েছে। অরুণিমা চৌধুরী তুলে ধরেছেন নারীর আত্মআবিষ্কারে অন্তরালবর্তী বিমানবিকতার নিগূঢ় ভয়াবহতাকে। আদিত্য বসাকের ছবিতে রয়েছে আবিশ্ব সন্ত্রাসের উগ্র উল্লাসের সঙ্গে মগ্ন চৈতন্যের তমসাদীর্ণ সংঘাত। অশোক ভৌমিকের পত্রিকার একটি পৃষ্ঠার উপর কালিতে আঁকা ছবিটি অন্ধকার শূন্যের ভিতর ব্যক্তির তীব্র আর্তির নাটকীয়তাকে উদ্ঘাটিত করেছে। আদিমতার ভাষায় আধুনিকতার তীব্র আর্তিকে অভিব্যক্ত করেছেন জয়া গঙ্গোপাধ্যায়। বিমূর্তের ভিতর দিয়েই জীবনের নাটকীয়তাকে তুলে ধরেছেন সমীর আইচ।
পরবর্তী তরুণতর প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে শমীন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘ট্রিবিউট টু স্ক্রিম’ ছবিটি এডওয়ার্ড মুঙ্খ-এর ভয়াবহ নৈরাজ্যের পরিসরের পুনর্নির্মান। রবীন রায়ের ছবিটিতে অসামান্য ঋদ্ধতায় রূপায়িত হয়েছে পরিসরের শূন্যতার সঙ্গে প্রায়-বিমূর্ত প্রতিমাকল্পের নিঃসীম নাটকীয় সংঘাত। সমীর রায়ের ‘লাইট অ্যান্ড মাইসেল্ফ’ শীর্ষক কল্পরূপাত্মক রচনায় ব্যক্তির আত্মগত গভীর নৈরাজ্য উঠে এসেছে। এই নৈরাজ্যেরই আর এক সোচ্চার রূপ স্বপনকুমার মল্লিকের অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতায় আঁকা যৌনতার সঙ্গে সন্ত্রাসের সুররিয়ালিস্ট রূপায়ণটি। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন শান্তনু মাইতি, ঈলিনা বণিক, মৃণাল মণ্ডল, নবীনা গুপ্তা, মল্লিকা দাস সুতার, বর্ণালি দাস ও সুমনা ঘোষ, দিলীপ গুছাইত, তরুণ ঘোষ।
তাপস সরকার করেছেন কালীঘাটের পটের আঙ্গিকে একমাথাবিশিষ্ট বিড়াল। মেকি অসাধুতার প্রতীক। তার সামনে স্থাপিত রবীন্দ্রনাথের একটি ছোট ছবি। বাকি সকলেই ব্রোঞ্জে কাজ করেছেন। অসীম বসুর ‘ইন আ ট্রান্স’ বেহালা বাদনরত একজন শিল্পীর রূপারোপ। বিমল কুণ্ডুর মুখাবয়বটিতে রূপায়িত হয়েছে নৈঃশব্দ্য সঞ্চারিত ধ্রুপদী প্রশান্তি। এরই বিপরীত প্রান্তের হতাশাতাড়িত স্তব্ধতা এসেছে সুনীলকুমার দাসের ভাস্কর্যে। মাতৃরূপের দুই ভিন্ন প্রকাশ দেবব্রত দে ও দেবাশিস মল্লিক চৌধুরীর রচনায়। |
|
|
|
|
|