শতাব্দী প্রাচীন কাড়ালি পাহাড় চূড়ার কালীপুজোর সঙ্গে যেন ইতিহাস ছুঁয়ে রয়েছে। এক সময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ের চূড়ায় স্বামী পাগলানন্দ এই পুজোয় শুরু করেছিলেন। বাসিন্দাদের মতে, তাও প্রায় কয়েকশো বছরের পুরনো কথা। কথিত রয়েছে, এখানেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন পাগলানন্দ।
পাহাড়ের জঙ্গল এখন অনেক পাতলা হয়ে গিয়েছে। কিন্ত পাহাড়ে চড়ার রাস্তা এখনও কিছুটা দুর্গম। সিঁড়ি নেই। পাথরের খাঁজ বেয়ে বয়ে অনেকটা উপরে উঠলে পড়বে মন্দির। সেই মন্দিরেই মঙ্গলবার রাতে পুজো হল কালীর। এসেছিলেন ভক্তেরা।
বান্দোয়ান-পুরুলিয়া রাস্তা থেকেই চোখে পড়ে অপরূপ মন্দিরটি। পুজো দেখাশোনা করেন মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা সীতানাথ মাহাতো। তিনি বলেন, “স্বামী পাগলানন্দের এই পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছি আজও। পুজোর সিংহভাগ খরচ আমরাই বহন করি। স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন। বহু মানুষ পুজো দেখতে আসেন।” প্রায় ২৫০ মিটার খাড়া পাহাড়ে ওঠার নেই কোনও সিঁড়ি। পাথর সাজিয়ে সিঁড়ির ধাপের আকার দেওয়া হয়েছে। উপরে রয়েছে শিবমন্দিরও। বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে জঙ্গল অনেকটা পাতলা হয়ে গিয়েছে। না হলে আগে দিনের বেলাতেও মানুষ ওই পাহাড়ে যেতে সাহস পেতেন না। পাশের চাঁদড়া গ্রামের বাসিন্দা জগদীশ মাহাতো বলেন, “কালীপুজোর রাতে ওই পাহাড়ে পুজো দেখতে আসার অনুভূতিই আলাদা। প্রতি বছর আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা রাতে পুজো দেখতে আসেন। কোলাহল থেকে দূরে এই পাহাড়ের পুজো সকলের মনে শান্তি এনে দেয়।” সীতানাথবাবুর ভাই অশোক মাহাতো বলেন, “পাগলানন্দ মহারাজ মারা যাওয়ার পর প্রায় ৫০ বছর ধরে আমরাই পুজো চালিয়ে আসছি।”
বান্দোয়ানের ওসি দীপঙ্কর সরকার বলেন, “কাড়ালি পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ। পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দোয়ানের সমস্ত এলাকা দেখা যায়। নজরদারি চালানোর জন্য মাঝে মধ্যে আমরা সেখানে যাই। মন্দিরেও বসি।” কলকাতার বাসিন্দা বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “কর্মসূত্রে আমি কিছুদিন বান্দোয়ানে ছিলাম। ওই পাহাড়ে কালীপুজোর রাতে চূড়ায় পুজো দেখার অনুভূতি অসাধারণ। জায়গাটা পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয়।” |