ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ জয়ের ২৮ বছরের খরা কাটবে কী ভাবে, সেই রাস্তা বাতলাতে নেমে পড়লেন শেন ওয়ার্ন। কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় লেগস্পিনার রীতিমতো ধরে-ধরে পরামর্শমালা তৈরি করেছেন অ্যালিস্টার কুকদের জন্য। ২০০৪-এ ভারত সফরে অস্ট্রেলিয়া যে পরিকল্পনা নিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল, এক ব্রিটিশ সংবাদপত্রে সেই পরিকল্পনাই কুকদের সামনে মেলে ধরেছেন ওয়ার্ন। ধোনিবাহিনীকে কাত করতে।
মোতেরায় প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন ইংল্যান্ডকে ওয়ার্নের পরামর্শ, “রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে আক্রমণাত্মক বোলিং করো এবং আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে রক্ষণাত্মক বোলিং করো।” এ ভাবেই নাকি ২০০৪-এ ভারতে ২-১-এ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ওয়ার্নের দেশ। ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়ার্ন বলেছেন, “সে বার লক্ষ্মণ আর দ্রাবিড়ের পিছনে পড়েছিল ম্যাকগ্রা। ও এতটাই ভাল ও নিখুঁত বল করছিল যে, আমাদের আর আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোর দরকার ছিল না। জানতাম, ওর বলে ব্যাটসম্যান হয় কট বিহাইন্ড বা এলবিডব্লিউ হবে, নয়তো বোল্ড হবে।”
কিন্তু আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে রক্ষণাত্মক বোলিং ব্যাপারটা কী? ওয়ার্নের কথায়, “বোলার যখন আক্রমণাত্মক বল করছে না, বা করতে পারছে না, তখনই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিংয়ের প্রয়োজন হয়। ধরা যাক, অ্যান্ডারসন দু’দিকেই বল সুইং করাচ্ছে। তখন সেটা আক্রমণাত্মক বোলিং নয়, রক্ষণাত্মক। ওই সময় চারটে স্লিপ, লেগ-গালি রাখতে হবে। রক্ষণাত্মক বল করার সময় আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং না সাজালে ব্যাটসম্যান যে কোনও সময় বাউন্ডারি মেরে দিতে পারে।” |
ভারতে জেতার পাঁচ টোটকা |
• রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে আক্রমণাত্মক বোলিং।
আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে রক্ষণাত্মক বোলিং।
• ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বাউন্ডারি মারা যতটা বেশি সম্ভব আটকাতে হবে।
• অধিনায়ক কুকের সঙ্গে পিটারসেন-ব্রড-সোয়ানের মতো সিনিয়রদের ড্রেসিংরুমে একশো ভাগ তালমিল।
• ভারতীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইংরেজ ক্রিকেটারদের দ্রুত মানিয়ে নিতে পারা।
• শুধু স্পিন বোলিং নিয়ে বেশি না ভেবে উইকেটের সঙ্গে মানানসই বোলিং করা।
ব্যাটসম্যানদের ঘনঘন স্ট্রাইক রোটেট করতে হবে। |
|
ভারতীয়দের বাউন্ডারি মারতে দেওয়া চলবে না কুকদের আর একটা টোটকা ওয়ার্নের। তাঁর মতে, “ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি মারার জন্য ছটফট করে। কিন্তু ওদের ভাল শটেও যদি বাউন্ডারি হওয়া আটকে দেওয়া যায়, তা হলে ওদের হতোদ্যম করে তোলা যায়। চেষ্টা করেও অনেকক্ষণ বাউন্ডারি না পেলে ওরা হতাশ হয়ে যায়। ওদের ব্যাটসম্যানদের এ ভাবেই হতাশ করে দিতে হবে। বোলিং-ফিল্ডিংয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য এনেই এটা করা যায়।”
কুকের নেতৃত্বের উপর গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী ওয়ার্ন। তাঁর মতে, দলের সিনিয়রদের সঙ্গে অধিনায়কের তালমিল থাকাটা খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। যেটা একেবারে নিখুঁত ভাবে ছিল ২০০৪-এর অস্ট্রেলিয়া দলে। তা ছাড়া পিটারসেন, সোয়ান, ব্রড, অ্যান্ডারসনের মতো সিনিয়ররা সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই না করলে এই সিরিজ জেতা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ওয়ার্ন।
ভারতের পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গেও নিজেদের দারুণ ভাবে মানিয়ে নিতে হবে ইংরেজ ক্রিকেটারদের সিরিজ জেতার জন্য, এমনটাও ধারণা ওয়ার্নের। না হলে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে সিরিজ হারতে হবে কুকদের বলেও বিশ্বাস করেন ওয়ার্ন। স্পিনকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ইংরেজদের উইকেটের সঙ্গে মানানসই বোলিং করা এবং নিজেরা ব্যাট করার সময় ঘনঘন ‘স্ট্রাইক রোটেট’ করার প্রবণতা থাকাটাও খুব দরকার, বলেছেন তিনি। |