শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে, দাবি পুলিশের |
অতিষ্ঠ মানুষের অভিযোগ, শব্দদৈত্যকে
বোতলবন্দি করতে ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন |
কোথাও থেকে অভিযোগ, “দাদা, পুলিশকে একটু বলুন ব্যবস্থা নিতে। বিকট আওয়াজে আর থাকা যাচ্ছে না।” কারও অভিযোগ, থানায় ফোন করেছি। কিন্তু পুলিশ কোথায়? শব্দের চোটে প্রাণ ওষ্ঠাগত।” আবার বিপরীত ছবিও রয়েছে। আগের বার শব্দদানবের অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকটি জেলায় এ বার শব্দদানব প্রায় বোতলবন্দি। বস্তুত শব্দবাজির দাপট নিয়ে বস্তুত মিশ্র প্রতিক্রিয়াতেই কেটেছে দীপাবলির রাত।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় গত বছরের অভিজ্ঞতার জেরে এ বার কনা পুলিশ ব্যবস্থায় শান্তিতেই মঙ্গলবারের রাত কাটিয়েছেন হাবরা শহরের বাসিন্দারা। নির্বিঘ্নে পথেও বেরিয়েছেন প্রতিমা দর্শনে। দিন কয়েক আগেই লক্ষীপুজোর দিন অবশ্য হাবরায় বাজির তাণ্ডবে কার্যত অলিখিত বন্ধ পালিত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কেউ খুব প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হননি। রাতভর চলেছিল তাণ্ডব। গোটা শহরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কালীপুজোয় সেই আতঙ্ক উবে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের উপরে খুশি বাসিন্দারা।
গত ৪ নভেম্বর হাবরা পুরসভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে কালীপুজোর উদ্যোক্তারা ছাড়াও ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান তপতী দত্ত, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জমির হোসেন সহ সংশ্লিষ্ট মানুষেরা। ছিলেন বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়। হাবরা থানার আই সি অনিল রায় বৈঠকে অনিলবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শব্দবাজি বিক্রি ও ফাটানো হলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হবে। হাবরাবাসী মানুষের কাছে লজ্জার বিষয় লক্ষীপুজোর দিন শব্দবাজির দৌরাত্ম্য চলে এখানে। তিনি জানান, এখানকার মানুষ রুচিশীল এবং সংস্কৃতিমনস্ক। এটা লজ্জার যে শিক্ষিত মানুষ শব্দবাজি ফাটান। স্থানীয় সূত্রে খবর, অনিলবাবুর এ হেন পদক্ষেপ শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কম- বেশি শব্দবাজি ফাটলেও সেখানে অবশ্য তেমন পুলিশ টহলদারি ছিল না বলে স্থানীয় মানুষ জানান। বসিরহাট মহকুমা পুলিশ সূত্রের খবর, কালীপুজোর আগে আগেই অভিযান চালিয়ে প্রচুর বাজি আটক করায় এ বার শব্দবাজির দৌরাত্ম্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্থানীয় মানুষও জানান, শব্দবাজির দাপট এ বার অনেক কম ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশের উদ্যোগের প্রশংসাও করেন তাঁরা।
কালীপুজোর রাতে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায়। সেই সঙ্গে ছিল মাইকের আওয়াজ। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় শব্দবাজির দাপট একটু হলেও কম ছিল বলে ক্যানিং মহকুমা পুলিশের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, কালীপুজোর আগে বিভিন্ন বাজির দোকানে অভিযান চালিয়ে অনেক নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করা হয়। যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, শব্দবাজির দাপট ও মাত্রা ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এলাকাতে পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। শব্দবাজির তান্ডবে পিছিয়ে ছিল না অন্য দুই মহকুমা ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপও। বস্তুত কালীপুজোর আগের রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল শব্দবাজির দাপট। এলাকার মানুষের বক্তব্য, যা আগের বারের দাপটকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাঁদের অভিযোগ বহুক্ষেত্রেই পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। যদিও পুলিশের বক্তব্য ওই এলাকায় শব্দবাজি কম ফেটেছে। শব্দবাজি ফাটানো ও বিক্রির অভিযোগে কালীপুজোর দিন রাতে জেলায় মোট ৯১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোনারপুর, বারুইপুর, মহেশতলা ও বজবজ থানা এলাকা থেকে অধিকাংশ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “রাতভর তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় শব্দবাজি কম ফেটেছে।”
অন্যদিকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান, বাউড়িয়া সর্বত্র দেদার শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ফেটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে প্রচুর নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। কিন্তু সেটা যে কথার কথা তার প্রমাণ কালীপুজোর শব্দময় রাত। তবে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর দেওয়া সত্ত্বেও কোনও অভিযোগ আসেনি। জেলার দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাউড়িয়া এলাকা থেকে একটি অভিযোগ পেয়ে পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও যারা বাজি ফাটাচ্ছিল তারা পালিয়ে যায়।
হুগলির চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, চন্দননগর প্রভৃতি জায়গায় শব্দবাজির দাপট প্রায় ছিল না বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও বাসিন্দারা আগেরবারের তুলনায় কম থাকলেও শব্দবাজি যে ফাটেনি তা কখনও বলা যায় না।
তবে শব্দবাজির তাণ্ডব দমনে কড়া ভূমিকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও তা যে একেবারে দমন করা যায়নি তা মেনে নিয়েছে প্রশাসন। |