দশক পেরিয়ে ফের পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে দার্জিলিঙের লালকুঠি। সত্তরের দশকে তনুজা, রঞ্জিৎ মল্লিক, উৎপল দত্ত ও ড্যানি ডেনজংপা অভিনীত বিখ্যাত ‘লালকুঠি’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল যেখানে।
১১ বছর পর আজ, বৃহস্পতিবার থেকে লালকুঠির নির্দিষ্ট কিছু ঘর ও বাইরের বাগান-চত্বর খুলে দিচ্ছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। টিকিট কেটে এখন যে কেউ লালকুঠিতে ঢুকে সময় কাটাতে পারবেন। জিটিএ-র প্রধান সচিব তথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “দীর্ঘদিন লালকুঠিতে সাধারণ বাসিন্দা, পর্যটকেরা ঢুকতে পারতেন না। সরকারি সম্পত্তিতে সাধারণ মানুষ যেতে পারবেন না, এটা হয় না। পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তাই এলাকাটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।”
কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন আবাস হিসাবে দার্জিলিঙে গড়ে তোলা হয় লালকুঠি। পরবর্তীতে তা ব্রিটিশদের হাতে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েক হাত ঘুরে সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয় লালকুঠি। তখন থেকেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে লালকুঠি। ‘লালকুঠি’-র শুটিং হওয়ার পরে এর আকর্ষণ আরও বাড়ে। গথিক শৈলির বাংলো, সুদৃশ্য বিরাট বাগান, পুকুর, ঝর্ণা ছাড়াও দার্জিলিং শহরের একেবারে উপরে থাকায় লালকুঠি থেকে দেখা মেলে নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রায় গোটা শহরটাই নজরে আসে এখান থেকে। একের পর এক ছবির শুটিং-র পরে উত্তরোত্তর জনপ্রিয় হয় লালকুঠি। দার্জিলিঙের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে বোস ইনস্টিটিউট লাগোয়া এই এলাকা দিনভর ঘোরা, চড়ুইভাতির জন্য পর্যটকদের কাছে ছিল চেনা গন্তব্য। |
দার্জিলিঙের লালকুঠি। —ফাইল চিত্র |
আশির দশকে সুবাস ঘিসিং-এর নেতৃত্বে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ (ডিজিএইচসি) গঠনের পর লালকুঠি ঘিসিং-এর সদর দফতরে পরিণত হয়। তার পরেও পর্যটকেরা ভিতরে ঢুকতে পারতেন। ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে ঘিসিং-এর উপর হামলার পর লালকুঠিতে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চার দিকে উঁচু পাঁচিল, ফ্লাড লাইট এবং ঘাসের ঢিপিতে ঢেকে ফেলা হয় লালকুঠি। বাইরে থেকে অনেক পর্যটক এলাকাটি দেখতে যেতেন। ২০০৮ সালে মোর্চার আন্দোলনে ঘিসিং পাহাড় ছাড়ার পর তা দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে সেখানে ডিজিএইচসি-র প্রশাসক বসতেন।
জিটিএ গঠনের পর লালকুঠিতে চিফ এক্সিকিউটিভের দফতর এবং সচিবালয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়। অগস্ট থেকে নিয়মিত লালকুঠিতে বসছেন জিটিএ-র চিফ এক্সিকিউটিভ বিমল গুরুঙ্গ। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আবেদন যাওয়ার পর তিনি তা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অক্টোবরে গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চার পঞ্চম প্রতিষ্ঠা দিবসে গুরুঙ্গ লালকুঠি ফের খুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন। শুরু হয় লালকুঠির ভিতর এবং বাইরের বাগানের এলাকা সংস্কার করে সাজিয়ে তোলার কাজ। লালকুঠিকে ফের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন জিটিএ কর্তৃপক্ষ।
জিটিএ সূত্রের খবর, সংস্কারের পর প্রতি পর্যটক ১০ টাকা করে প্রবেশ কর নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনও টাকা দিতে হবে না। জিটিএ-র তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকরী সদস্য বিনয় তামাং বলেন, “পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা দিয়েই প্রতিবছর লালকুঠির সৌন্দর্যায়ন এবং সংস্কারের কাজ করা হবে। একমাত্র জিটিএ দফতরে পর্যটকেরা সব সময় ঢুকতে পারবেন না।” |