|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
অমিত চক্রবর্তী (৩১) স্ত্রী (২৫) মা (৫৪) বাবা (৫৯)
• অমিত সহকারী শিক্ষক • ২০০৭ থেকে কর্মরত • পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী
• গিন্নি চাকরি করেন না • সন্তান নেই • থাকেন বাবা-মার সঙ্গে নিজের বাড়িতে
• ভবিষ্যতের সঞ্চয় সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই
• আগামী দিনে লগ্নি বাড়ানো এবং পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত |
অমিত
মাসে নিট আয় ২৩,৯৯৭ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• জিপিএফ ১২,০০০ |
• জীবন বিমা: ১,২৮৮ |
মাসে খরচ (সংসার খরচ বাদে) |
• সংসার খরচ ১০,০০০ |
• গৃহঋণ: ৫,৩০৫ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
অমিত ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেরই বয়স কম। ফলে এটাই সঠিক সময় সম্পদ গড়ে তোলার। মনে হতে পারে সংসার সামলে এই অল্প আয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা যাবে না। কিন্তু ইচ্ছে এবং সঠিক পরিকল্পনা থাকলে তা আদৌ কঠিন নয়।
অমিতের লক্ষ্য কী ভাবে পূরণ করা যায়, তা দেখার আগে দু’টি কথা বলে নেওয়া ভাল
• প্রথমেই তাঁর একটি ভাল অঙ্কের জীবন বিমা করা প্রয়োজন। অমিত পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই তাঁর কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে পরিবারকে আর্থিক দিক থেকে সমস্যায় পড়তে না-হয়, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।
• দ্বিতীয়ত, পরিবারের সকলের জন্য স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা খরচের কথা মাথায় রাখলে যা এই মুহূর্তে প্রাথমিক কর্তব্য।
লক্ষ্য:
জীবনের সুরক্ষা
অমিতের একটি জীবন বিমা থাকলেও প্রিমিয়াম খুবই কম। প্রয়োজনের সময়ে সেই অর্থ পরিবারের কাজে আসবে না। এ বার প্রশ্ন, কত টাকার বিমা হলে তা পরিবারকে সুরক্ষা দিতে পারবে?
অমিতের মাসে আয় প্রায় ২৪,০০০ টাকা। বছরে ২,৮৮,০০০ টাকা। এই অর্থ আয় হলে বিমা মূল্য হওয়া উচিত প্রায় ৩৩.৮৮ লক্ষ টাকা। ধরে নিচ্ছি, বিমা থেকে পাওয়া সেই অর্থ তাঁর পরিবার ৮.৫% সুদ মেলে এমন সুরক্ষিত কোনও প্রকল্পে রাখবেন। ৩৩.৮৮ লক্ষ টাকা দেখতে খুবই বড়। কিন্তু একে টার্ম প্ল্যানের প্রিমিয়াম ক্যালকুলেটরে ফেলে দেখি
বয়স: ৩১ বছর, মেয়াদ: ২০ বছর
বিমা মূল্য: ৩৪ লক্ষ টাকা
এই হিসেবে প্রিমিয়ামের অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে বছরে ৮,৫০০ টাকা। টার্ম প্ল্যানে টাকা ফেরত মেলে না। এটি শুধুই জীবন বিমা। পরিবারের সুরক্ষাই এর মূল লক্ষ্য। বেতন বাড়লে ধীরে ধীরে কভারেজ বাড়ানো যেতে পারে। এর সঙ্গে যদি স্বাস্থ্য বিমা করে নেওয়া যায়, তা হলে প্রায় ১,৫০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। অমিতের শরীর খারাপ হলে যা সুরক্ষা দিতে পারবে। এই দুই মিলে মাসে খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮৩৫ টাকা।
লক্ষ্য: চিকিৎসার সুরক্ষা
অমিতের বাবা-মার বয়স হয়েছে। ফলে এখন যদি স্বাস্থ্য বিমার কথা না-ভাবা হয়, তা হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। বাবা-মায়ের জন্য কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা করা জরুরি। বাজারের অধিকাংশ সাধারণ বিমার নিয়মে বাবা-মা এখনও স্বাস্থ্য বিমার আওতায় পড়েন। এ জন্য মাসে প্রিমিয়ামের অঙ্ক দাঁড়াতে পারে প্রায় ১,০০০ টাকা। ফ্যামিলি ফ্লোটার নিয়ম অনুসারে এক সময়ে কোনও এক জনের অসুস্থতার জন্য এই বিমার সুবিধা নেওয়া যাবে। পাশাপাশি, অমিত ও তাঁর স্ত্রীরও উচিত নিজেদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি ফ্লোটার বিমা করিয়ে রাখা। এ জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হবে। |
|
লক্ষ্য: ভবিষ্যতের সঞ্চয়
এই দুই দিক সুরক্ষিত থাকলে এ বার মন দেওয়া যেতে পারে লগ্নির দিকে।
দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির জন্য পিপিএফ খুব ভাল। অমিতের উচিত এই অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে বছরে ২০,০০০ টাকা জমা দেওয়া। এখন না পারলেও আগামী দিনে কিন্তু তাঁকে ন্যূনতম এই অর্থ জমা করতেই হবে। পিপিএফ ধরে তাঁর জমা খরচের হিসাব দেখলে বোঝা যাবে জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা দেওয়ার পরও হাতে নগদ প্রায় ৩,৬০০ টাকা থাকছে।
অমিত গৃহঋণ দেন। অর্থাৎ তাঁর নিজের বাড়ি রয়েছে। সে দিক দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত। তবে তাঁকে একাই সংসার চালাতে হয়, তাই বেশি ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।
লগ্নির জন্য তাঁর সামনে আপাতত দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে
এক) হাতে থাকা ৩,৬০০ টাকার অর্ধেক সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে লগ্নি করুন। প্রথমে তাঁর উচিত মাঝারি ঝুঁকির ফান্ডে লগ্নি করা। মূলত লার্জ ক্যাপ বা ইন্ডেক্স ফান্ডে। এর পর টাকা জমলে ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি লগ্নির কথা মাথায় রেখেই এসআইপি-তে টাকা রাখুন।
দুই) ব্যাঙ্কে রেকারিং ডিপোজিট খুলুন। যা ১ বছর পর পর নবীকরণ করাতে পারবেন। হঠাৎ প্রয়োজনে কাজে আসবে এই টাকা।
লক্ষ্য: অবসর পরিকল্পনা
বর্তমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে অমিতের সুদূর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা সম্ভব হল না। কারণ এখন সংসার গোছাতে তাঁর বেতনের অনেকটাই খরচ হবে। তাই আপাতত জিপিএফ এবং পিপিএফের টাকাতেই অবসর পরিকল্পনা বেঁধে রাখতে হবে। আগামী দিনে টাকা জমলে তিনি অন্য খাতে লগ্নি করতে পারেন। তবে প্রস্তুত থাকতে হবে এখন থেকেই এবং পরিকল্পনাও করতে হবে সেই বুঝে।
লক্ষ্য: করের সুবিধা
অমিত গৃহঋণ, জিপিএফ, পিপিএফ, জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার টাকায় আয়কর ছাড় পাবেন। তাতেও না-হলে, পিপিএফে লগ্নি বাড়ান। |
|
|
|
|
|