ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি বোধহয় একেই বলে!
বহু সাধ্যসাধনা করেও ‘ন্যাশনাল এড্স কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ (ন্যাকো)-কে টলাতে পারল না স্বাস্থ্য দফতর। ন্যাকো-র সাফ কথা, যা দেওয়া হয়েছে, তা ব্যবহার করতেই হবে। ফেরত দেওয়া চলবে না। অতএব, ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার বিশাল ‘ব্লাড মোবাইল বাস’, যা দু’বছর ধরে মৌলালির গ্যারাজে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার পথে, এ বার বাধ্য হয়ে তাকেই পথে নামাবে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই শহরের সব মেডিক্যাল কলেজ ও সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, যাতে সপ্তাহে অন্তত এক দিন ওই বাসেই তারা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির করে।
আর এতেই মাথায় হাত স্বাস্থ্য-পরিবহণ বিভাগের। তাদের বক্তব্য, ওই বাস ব্যবহারের চেয়ে হাতি পোষার খরচও অনেক কম। গাড়ি বাবদ যে টাকা বরাদ্দ, তাতে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সগুলোই ঠিকমতো চালানো যায় না। তার উপরে এই বাসকে বাধ্যতামূলক ভাবে চালাতে গেলে কার্যত পথে বসতে হবে। |
বাসটি চালাতে কত খরচ পড়বে? স্বাস্থ্য-পরিবহণ বিভাগের অধিকর্তা পার্থসারথি পাল বলেন, “এই এসি বাসটি এতটাই বড় যে, এক সঙ্গে ছ’জন রক্ত দিতে পারবেন। এসি চালাতে জেনারেটর লাগবে। শুধু সেই বাবদই রোজ ২৫ লিটার পেট্রোল দরকার। তার উপরে বাসের ট্যাঙ্কে ২০০ লিটার জ্বালানি সব সময়ে মজুত রাখতেই হবে। না হলে বাস খারাপ হয়ে যাবে। ভিতরে টিভি চলবে। ফ্রিজ থাকবে। এই সব করতে গিয়ে রক্ত সংগ্রহে যা খরচ পড়বে, তাতে বাকি কাজকর্ম প্রায় মাথায় ওঠার জোগাড়।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বললেন, “আমাদের অবস্থা এখন ‘ভিক্ষা চাই না, কুকুর সামলাও’ গোছের। গোড়া থেকে বলছি, দান চাই না। এমন দান নিতে গেলে নিজেদের দৈনন্দিন কাজ চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! জোর করে গছিয়ে দিল জিনিসটা।” রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে (স্যাক্স) জানানো হয়েছিল, যাতে তারা বাস ফেরত নেওয়ার জন্য ন্যাকো-কে চাপ দেয়। উল্টে ন্যাকোই তাদের পাল্টা চাপ দিতে শুরু করেছে। ‘হয় বাস চালাও, নয়তো অন্যান্য সাহায্য নিয়েও আমাদের দু’বার ভাবতে হবে।’
এমন একটি বাস দেওয়া হল কেন? দিল্লি থেকে ন্যাকো-র এক মুখপাত্র বললেন, “এমন আধুনিক বাস বহু রাজ্য চেয়েও পাচ্ছে না। এতে রক্তদানের চেনা চেহারাটাই বদলে যাবে। বাড়ানো যাবে ক্যাম্পের সংখ্যাও। ফলে রক্তের সঙ্কট মিটবে।”
কিন্তু খরচ? ন্যাকো-র বক্তব্য, রক্তের মতো অতি জরুরি একটি বিষয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। ওই মুখপাত্রের কথায়, “এমন আধুনিক একটা বাস ব্যবহার না করে দু’বছর ফেলে রাখার মানেই হয় না। আমরা স্যাক্স-কে বলেছি, বাসটি নিয়মিত ব্যবহার করতে। প্রয়োজনে তার লগবুক আমাদের দেখাতে হবে। ওরা না করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” বাসটি ব্যবহার করা হবে না ধরে নিয়েই গত দু’বছরে তার রেজিস্ট্রেশনও করানো হয়নি। ন্যাকো-র চিঠি পেয়ে এ বার তড়িঘড়ি রেজিস্ট্রেশন-পর্ব সেরে ফেলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে টিভি দেখতে দেখতে রক্ত দেওয়ার ‘কর্পোরেট’ আবহ এখানে নেই। বরং বিশাল চেহারার জন্য বহু এলাকায় বাসটা ঢুকতেই পারবে না। তাই নামে মোবাইল ইউনিট হলেও কাজে তা জড়ভরত হয়ে থাকার আশঙ্কাই বেশি। |