মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর জন্য আবেগে ভেসে গেল রাজনীতির মনোমালিন্যও। পলাশিতে রেলের অনুষ্ঠানে অধীরের সামনেই রেজিনগরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, “অধীরবাবুর নেতৃত্বেই জেলার উন্নতির জন্য আমরা এগিয়ে যাব।” সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে হুমায়ুন তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে যে কথা উঠেছিল, তাতে এ ভাবেই জল ঢেওয়া হল বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ মহল।
রবিবার সকাল ১০.২০ মিনিটে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস পলাশি স্টেশনে থামতেই কাতারে-কাতারে মানুষ একবার দেখার জন্য পড়িমরি করে ছুটলেন ‘সেলুন-কার’-এর দিকে, যেখানে রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী রয়েছেন। কিছু ক্ষণ পরেই দরজা খুলে রেলের বিশেষ কামরা থেকে বের হতেই মানুষের বাঁধ-ভাঙা আবেগে বন্দি হয়ে পড়লেন তিনি। প্ল্যাটফর্মে পা রাখার জায়গা নেই। ভিড়ের চাপে ট্রেন থেকে তিনি নামতেই পারছিলেন না। তখন সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় প্ল্যাটফর্ম জুড়ে। |
এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির ছিলেন জেলার ১৩ জন কংগ্রেস বিধায়ক। ছিলেন নদিয়ার জেলা নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর সিংহ, যিনি বক্তব্য রাখতে উঠে অধীর চৌধুরীকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। পরে তিনি বলেন, “অধীর শুধু মুর্শিদাবাদের নন। কেউ যাঁকে মুর্শিদাবাদের মধ্যে বেঁধে রাখার চেষ্টা করবেন না। তিনি ভারতের কংগ্রেস নেতা। বাংলার উন্নয়নে তিনি সব সময় সচেষ্ট থাকেন। তিনি বাংলারও।” এদিন কলকাতা থেকে অধীরের সঙ্গী ছিলেন কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার। অপূর্ববাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের কোনও আতিথেয়তা অধীর চৌধুরীর নেননি। কলকাতা বিমানবন্দরে শনিবার রাত ৮টা নাগাদ নেমে গাড়িতে করে আলিপুরে রেলের অতিথি আবাসনে যান। সেখানে রাত কাটিয়ে এদিন সকালে কলকাতা স্টেশন থেকে পলাশি এবং পলাশিতে নেমে নিজের গাড়িতে করে বহরমপুরে ফেরেন। কোথাও রাজ্য সরকারের গাড়ি ব্যবহার করেননি তিনি।”
অনুষ্ঠানে অধীর বলেন, “কেউ কেউ হাততালির জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি হাততালি কুড়ানোর জন্য কোনও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। যে প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারব, শুধু সেটুকুই বলব।” অধীরের ব্যাখ্যা, “রেলের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কার জন্য, কেন রেলের এই দুরবস্থা তা আর আমি না-ই বা বললাম।”
তৃণমূল কেন্দ্র থেকে ছেড়ে চলে আসায় বাংলার রেল প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করা হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল। সে প্রসঙ্গে অধীর এদিন বলেন, “বাংলায় রেলের প্রকল্পগুলি রূপায়ন হবে না বলে কেউ কেউ বলছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বাংলাকে কোনও ভাবে বঞ্চিত করা হবে না।” উল্টে প্রতিটি রাজ্যেরই যা পাওনা, তা তাদের দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদের সাংসদ কংগ্রেসের মান্নান হোসেন বলেন, “প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন আর ফিতে কেটেছেন। কাজের কাজ কিছু করেননি।” একই সুরে বেলডাঙার বিধায়ক কংগ্রেসের শফিউজ্জামান বলেন, “পলাশি থেকে জিয়াগঞ্জ পর্যন্ত মানুষকে আশ্বস্ত করলেন অধীর চৌধুরী।” |
অনুষ্ঠানে সেই মেজাজেই অধীর চৌধুরী। |
এদিন পলাশি থেকে সারগাছি পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হল। ওই কাজের জন্য ৩৭ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। অধীর চৌধুরী বলেন, “পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে বলেছি, ৫৫ কিমি ডাবল লাইনের কাজের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারব না। কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে কাজে গতি এনে আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ করতে হবে।”
|