পুজোয় এখন ‘থিমে’র রমরমা। সে দুর্গাপুজোই হোক বা কালীপুজো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তাই ‘অন্য ধরনের প্রতিমা’ বানানোতেই মন দিয়েছেন হলদিয়ার মহিষাদল ব্লকের ইছাপুর গ্রামের পটুয়াপাড়ার জনা চোদ্দো মৃৎশিল্পী। কোথাও-কোথাও রীতিমতো কর্মশালা করে চলছে মূর্তি বানানোর কাজ। কাচের চুড়ি, ঝিনুক, বেত গাছের ফলপ্রতিমা তৈরির হরেক উপকরণ ছড়িয়ে চারিদিকে। |
চৈতন্যপুর থেকে গেঁওখালি যাওয়ার পথে ইছাপুরে রাস্তার ধারেই ত্রিপল টাঙিয়ে সারা বছর প্রতিমার গড়ার কাজ করেন তাপস বেরা, সুভাষ জানা, ছবিলাল মান্না, মাণিক জানারা। থিমপুজোর ক্ষেত্রে এতদিন কলকাতা থেকেই প্রতিমা আনতেন পুজো উদ্যোক্তারা। ফলে এলাকার মৃৎশিল্পীদের উপার্জনে টান পড়ছিল। চাহিদা মেনে তাই ইছাপুরের পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা মাটি ছেড়ে থিমের প্রতিমা গড়তে কোমর বেঁধেছেন। এ বছর শ্যামাপুজোয় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঁচটি থিমের প্রতিমা গড়ার বরাত পেয়েছেন বছর বত্রিশের সুভাষ জানা। তাঁর কথায়, “কলকাতা থেকে অন্য ধরনের প্রতিমা এনে পুজো হচ্ছিল আশপাশের এলাকায়। আমরা এতে ব্যবসায় মার খেতাম। তাই মাটি ছেড়ে থিমের পুজোর ঠাকুর বানাতে মন দিয়েছি। এতে লাভ একটু বেশি হলেও সময় লাগে অনেক।” এ বার তমলুকের ‘ফাইভ স্টারের’ লক্ষাধিক টাকার মুক্তোর প্রতিমা, দুর্গাচক ‘যুব সম্প্রদায়ের’ কাচের চুড়ির শ্যামা, হলদিয়ার রামনগরের ঝিনুকের প্রতিমা, সুতাহাটার ‘আকাশগঙ্গার’ বেত গাছের ফলের প্রতিমা, নন্দকুমারের হাকোলায় রাজস্থানী ধাঁচে প্রতিমা বানাচ্ছেন সুভাষ। তিনি বলেন, “কাঁচামাল কিনতে খরচ হয়েছে অনেক। ৮ হাজার টাকা কেজি দরে ২০ কেজি মুক্তো কিনেছি। সেই সোলপাট্টা থেকে বেত গাছের ফল জোগাড় করতে হয়েছে। তবে মজুরিতে ভালই লাভ হয়।” খুশি পুজোর উদ্যোক্তারাও। সুতাহাটার আকাশগঙ্গা ক্লাবের তপন জানা বলেন, “সম্প্রতি কাছেই ইছাপুর থেকে থিমের প্রতিমা আনতে পারায় আমাদের খুব সুবিধা হয়েছে।”
এ দিকে, লাভের মুখ দেখতে পেয়ে গ্রামের অল্পবয়সী রতন প্রামাণিক, অর্ধচন্দ্র ভীম, খোকন মাইতিরাও হাত লাগিয়েছেন সুভাষের সঙ্গে। রীতিমতো কর্মশালা গড়ে দিন-রাত এক করে চলেছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কর্মশালায় প্রশিক্ষণরত রতন প্রামাণিক বলেন, “থিমের কাজ তো সে ভাবে কোথাও হয় না। তাই এখানেই শিখছি কিছু। উপার্জনও করছি। থিমের প্রতিমার বাজার এখন ভাল। আশা আছে পরে নিজেরা স্বনির্ভর হতে পারব।” |