আর ক’টা দিন পরেই বড় সিরিজ। যে সিরিজ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে জোর আলোচনা চলছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ভারতীয় দলের ঠাসা ক্রিকেট ক্যালেন্ডার শুরু হতে চলেছে। শরীর ও মন নিংড়ে নেওয়া এই ক্রিকেটসূচি আরও বেশি উত্তেজক কেন শুনবেন? কারণ, ভারত ঘরের মাঠে খেলবে যেখানে প্রত্যেক বার আমরা জিতব বলেই ধরে নেওয়া হয়। ক্রিকেটভক্তের কাছে এটা ক্রিকেট-মহাভোজের সূচনা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চারটে টেস্ট আর দুটো টি-টোয়েন্টি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনটে ওয়ান ডে আর দুটো টি-টোয়েন্টি, তারপর ক্রিসমাসের ছুটি কাটিয়ে ভারতে ফেরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচটা ওয়ান ডে, আর সব শেষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চারটে টেস্ট। তিন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ যারা কখনও লড়াই থেকে পিছিয়ে যায় না, এবং ভারতের বিরুদ্ধে বরাবর যারা আরও তেতে থাকে এই উত্তেজনায় গা না ভাসিয়ে থাকা সম্ভব?
এমএস আর ওর ছেলেদের কাছে ইংল্যান্ড সিরিজটা হবে গত মরসুমের স্মৃতি মুছে দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। আজ আমি অবসর নিয়ে খুব সুখে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু এখনও শেষ ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা ভাবলে ভীষণ দুঃখ হয়। দুটো সফরেই এই বিশ্বাসটা নিয়ে গিয়েছিলাম যে, আমরা সমানে সমানে লড়তে পারব। |
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দুটো দেশের একটাতেও আমরা ভাল খেলতে পারিনি। দু’দেশেই টেস্ট সিরিজের ফল এক, ০-৪। ভারতের সামনে তাই এখন নিজেদের হারানো গর্ব ফিরে পাওয়ার সেরা সুযোগ। তবে আমি বারবার বলব, বদলা নিয়ে ভেবে-ভেবে সময় নষ্ট না করাই ভাল। আন্তর্জাতিক খেলার মঞ্চে আবেগের একটা জায়গা আছে ঠিকই। কিন্তু সেই আবেগ যেন কখনও আপনার বিচারবুদ্ধি বা ভাবনাচিন্তার ক্ষমতাকে ধোঁয়াশায় না ভরিয়ে দেয়।
যারা সিরিজের মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে আছে, তারা তো এটাকে বদলার সিরিজ বলে টিআরপি বাড়াতে চাইবেই। ক্রিকেটভক্তরাও সেটা উপভোগ করবে। কিন্তু এমএস, সচিন, ডানকান ফ্লেচারদের আমি যা চিনি, তাতে খুব জোর দিয়ে বলতে পারি যে, ওরা পদ্ধতিটার উপর জোর দেবে। ফলাফলের উপর নয়। যদি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমিও নামতে পারতাম তা হলে দারুণ হত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি খুব খুশি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পূজারা আর বিরাটের খেলা দেখে বেশ ভাল লেগেছিল। ইংল্যান্ড সিরিজে তো বটেই, আমি নিশ্চিত তার পরেও এই দু’জন দেশের কাজে আসবে।
যুবরাজের টেস্ট দলে ফেরা নিয়ে আমি ভীষণ খুশি। শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠে যে ভাবে ফিরে এসেছে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, যুবরাজ এত ভাল ক্রিকেটার, যে টেস্টেও সফল হবে।
২০০৮-এ ইংল্যান্ড যে বার শেষ ভারতে এসেছিল, সেই সিরিজটার কথা খুব মনে পড়ছে। মুম্বইয়ে জঙ্গিহানার জেরে ওয়ান ডে সিরিজটা ভেস্তে গিয়েছিল। কিন্তু তার এক মাসের মধ্যে ভারতে ফেরাটা কেভিন পিটারসেন আর ওর টিমের পক্ষে দারুণ সিদ্ধান্ত ছিল। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা সেটা খুব পছন্দ করেছিলেন। যার পর থেকেই ওঁদের মনে কেভিনের জন্য আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়ে যায়।
যাই হোক, ইংল্যান্ড এ দেশে ফেরার পর আবার ক্রিকেটের উপর ফোকাস চলে এসেছিল। যদিও মুম্বইয়ের মর্মান্তিক ঘটনা মন থেকে একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব ছিল না। এই পরিস্থিতিতে চেন্নাইয়ে আমরা দুর্দান্ত ভাবে জিতেছিলাম। বীরুর শুরু করা কাজটা শেষ করেছিল সচিন আর যুবি। জয়ের জন্য আমাদের ৩৮৭ রান দরকার ছিল। তার আগে ভারতের মাটিতে সফল ভাবে তাড়া করা লক্ষ্যের চেয়ে একশো রান বেশি। যে ভাবে রানগুলো করেছিলাম, সেটা সত্যিই দুর্দান্ত ছিল। আজও ওই ম্যাচটার কথা ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। ক্রিকেটীয় বিচারে অসাধারণ ওই জয় আরও স্পেশ্যাল হয়ে উঠেছিল কারণ, গভীর সঙ্কটের মধ্যে ওই জয় দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। বিশ্বাস করুন, সেই অনুভূতির কাছাকাছি আর কিছুই আসতে পারে না।
|
আগামিকাল লন্ডন থেকে প্রতিবেদন বিখ্যাত ইংরেজ
সাংবাদিক শিল্ড বেরির। বিষয়? সচিন তেন্ডুলকর। |
|