সন্দেহ, ঘুমপাড়ানি গুলিতেই চলছে গন্ডার নিধন
নরক্ষীদের নজর এড়িয়ে গন্ডার নিধনে নিঃশব্দ আক্রমণের উপায় খুঁজে নিয়েছে চোরাশিকারিরা। দিন কয়েক আগে বোকাখাত এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ঘুমপাড়ানি তরলের একাধিক বোতল মেলার পরেই এমন আশঙ্কা বন বিভাগের। তবে পশুবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ওই তরল বাঘকে অজ্ঞান করতে সক্ষম হলেও তা দিয়ে গন্ডারকে কাবু করা দুঃসাধ্য।
গন্ডার মারতে গুলি চালানো ছাড়াও ফাঁদ পাতা, বিদ্যুতের তার গায়ে ছুঁইয়ে দেওয়ার মতো নানা অপকৌশল প্রয়োগ করেছে চোরাশিকারিরা। কিন্তু গত মাসে একের পর এক গন্ডারকে জীবিত রেখে যে ভাবে খড়্গ কেটে নেওয়া হয়েছে তাতে ধন্দে পড়েছিলেন বনকর্তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুলির শব্দ অনুসরণ করে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বনরক্ষীদের। এর পরেই বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছিল, চোরাশিকারিরা সম্ভবত ঘুমপাড়ানি গুলি ব্যবহার করছে। গন্ডার হত্যার ঘটনা নিয়ে শুরু হয় সিআইডি ও সিবিআই তদন্ত।
গত এক মাসে পুলিশ ও বনরক্ষীরা কাজিরাঙার আশপাশে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছেন। জনা তিরিশ চোরাশিকারি ও লিংকম্যানকে হাজতে পোরা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি এ কে--৪৭ রাইফেল, আটটিট ৩০৩ রাইফেল ও দু’টি দোনলা বন্দুক। ৬ নভেম্বর রাতে গোলাপ পাটগিরি নামে এক চোরাশিকারিকে চার সঙ্গী-সহ গ্রেফতার করে দিফু থানা। তাকে জেরার সূত্রে কাজিরাঙার আশপাশ থেকে আরও চারজন শিকারি ধরা পড়ে। তাদের নাম শিবরাম পেগু, শিশুরাম পেগু, কার্তিক পেগু ও রাজেশ মুন্ডা। সেই সঙ্গে, আগরাতলি রেঞ্জের ধুবাবতী ভেলাগুড়ি এলাকায় গোলাপের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেই মেলে ‘অ্যানিকেট’ নামে একটি ওষুধ, যার রাসায়নিক মিশ্রণ হল ‘কেটামিন হাইড্রোক্লোরাইড’। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার চিকিৎসক ভাস্কর চৌধুরি জানান, ২০০৭ সালে, কাজিরাঙার লতাবাড়িতে একটি ট্র্যাঙ্কুলাইজার বন্দুক মিলেছিল। সেটি ছিল নাগাল্যান্ড বন দফতরের । কিন্তু, ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করে গন্ডার অবশ করার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি। তাঁর মতে, কাজিরাঙার ক্ষেত্রে ওষুধ মিললেও তা প্রয়োগ করা হয়নি। গন্ডারদের মারা হয়েছে গুলি করেই।
গন্ডারকে ঘুম পাড়াতে সারা বিশ্ব দক্ষিণ আফ্রিকায় তৈরি ‘এটরফিন হাইড্রোক্লোরাইড’ বা ‘এম ৯৯’ ব্যবহার করে। মরফিন গোত্রের হলেও, ‘এম ৯৯’ মরফিন অপেক্ষা, কয়েক হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ জানান, ‘এম ৯৯’ কেনার জন্য প্রথমে বন দফতর রাজ্য সরকারকে জানায়। রাজ্য জানায় কেন্দ্রকে। আন্তর্জাতিক মাদক আইন সংক্রান্ত নিয়মের জটিলতা কাটিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এটরফিন ভারতে আসে। তার পর রাজ্যের হাতে ওষুধ পৌঁছায়। চিড়িয়াখানার চিকিৎসক এম এল স্মিথ জানান, ‘এম ৯৯’ মাত্র এক বছর কার্যক্ষম থাকে। তাই বেশি পরিমাণ ওষুধ মজুত রাখা হয় না। অসমে একমাত্র গুয়াহাটি চিড়িয়াখানাতেই তা মজুত থাকে।
তাহলে, শিকারিদের আড়তে ঘুম পাড়ানি ওষুধ কেন?
কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্রের চিকিৎসক অভিজিৎ ভাওয়াল বলেন, “অ্যানিকেট দিয়ে রয়্যাল বেঙ্গল, চিতাবাঘদের ঘুম পাড়ানো সম্ভব। মানুষকেও অজ্ঞান করা যায়। তবে, গন্ডার অজ্ঞান হবে না। জীবন্ত অবস্থায় খড়্গ কাটা দুটি গন্ডারের ময়না তদন্ত করে দেখেছি একটি ক্ষেত্রে গুলি মাথায় লাগলেও মস্তিষ্কে না ঢুকে বের হয়ে গিয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে দু’টি গুলির একটি মাথায় লেগেছে, অন্যটি ট্র্যাকিয়া ফুটো করেছে। কিন্তু গন্ডার অজ্ঞান হলেও মরেনি।” গন্ডারের শরীরে চোরাশিকারিরা ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করেছে কিনা তা বোঝার উপায় নেই। অভিজিৎবাবু জানান, ওষুধের প্রভাব একদিন পরে মিলিয়ে যায়।
পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের দাবি, কার্বি ও নাগা জঙ্গিদের সঙ্গে চোরাশিকারিদের যোগাযোগ আছে। জঙ্গলে জখম হওয়া সঙ্গীদের ঘুম পাড়াতে এই ধরনে ওষুধ জঙ্গিরা রাখে। হয়ত, রাতে জঙ্গলে ঢুকতে হয় বলে তেমনই ওষুধ শিকারিদেরও দেওয়া হয়েছিল। তবে, ‘এসইউজি ২০১০৮’ নম্বর থাকা বোতলের তরলে ঠিক কোন রাসায়নিক রয়েছে, তার কি প্রভাব পড়তে পারে, তা পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত করা বলা যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.