কালীপুজোর রাতে নিষিদ্ধ শব্দবাজির দাপাদাপি রোখা পুলিশের কাছে এ বার বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা পুলিশের কর্তারা এমন দাবি করলেও আশ্বস্থ হতে পারছেন না বাসিন্দারা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এ বারও তাঁরা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর দাবি করেছেন, “দুর্গাপুজোর আগেই পুজো উদ্যোক্তাদের ডেকে শব্দ-বিধি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কালীপুজোর আগে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি বন্ধ করতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। তাতে ফলও মিলছে।” তিনি জানান, বাসিন্দাদের সচেতন করতে স্থানীয় কেবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি কেনা-বেচা করতে নিষেধ করা হচ্ছে। মোবাইলে এসএমএস করেও প্রচার চালানোর ভাবনা রয়েছে পুলিশের।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, “গোটা জেলা জুড়ে বাজির দোকানগুলিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি পেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুজোর আগে মাইকে প্রচারও চালানো হবে। বাঁকুড়া, সোনামুখী, খাতড়া-সহ গোটা জেলা জুড়েই পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।” তিনি জানান, সাদা পোশাকেও মোতায়েন থাকবে পুলিশ। ইভটিজিং-সহ সবরকম বিশৃঙ্খলা রুখতেই তাঁরা নজরদারি চালাবেন।
পুরুলিয়া শহর-সহ রঘুনাথপুর মহকুমার ৬টি ব্লকে কালীপুজোর আড়ম্বর বড়মাপেরই। বিশেষ করে রেলশহর আদ্রায় বেশ কয়েকটি বড়মাপের পুজো হয়। পিছিয়ে থাকেনা রঘুনাথপুরও। দীপাবলির আগে থেকে শুরু হয় বাজি ফাটানো। চলে ভাইফোঁটার পরেও। প্রায় একসপ্তাহ ধরে নির্বিচারে এক ধারে শব্দবাজি, অন্য ধারে মণ্ডপে ঊচ্চস্বরে বেজে যাওয়া লাউড স্পিকারের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। মাত্রা ছাড়ায় বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, প্রতিটি ভ্যানে অনন্ত ৮-১০টি সাউন্ডবক্সের সঙ্গে ১৫-২০টা মাইক বেঁধে আইটেম গানের সঙ্গে চলে উদ্দাম নাচ। শোভাযাত্রায় পুলিশ থাকলেও লাউড স্পিকার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁদের দেখা যায় না।
রঘুনাথপুরের বাসিন্দা জিডিল্যাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস সরখেলের অভিজ্ঞতা, “পুলিশ যা দাবি করুক, দুর্গাপুজোর সময় থেকে কালীপুজোর শেষ পর্যন্ত শব্দবাজির অত্যাচার চলে।”একই অভিজ্ঞতা পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা রঞ্জন আচার্য ও ঝুমুর শিল্পী সুনীল মাহাতোদের। তাদের কথায়, “শব্দবাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ নিশ্চয় থাকে। কিন্তু তার প্রয়োগের দিকটা চোখে দেখা যায় না।” বস্তুত জেলাবাসীর অভিযোগ মনে করিয়ে দেয়, ২০০৬ সালে কালীপুজোর দিনে শব্দবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় সাঁওতালডিহির সুবোধ মাহাতো। তারপরেও কী পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে? প্রশ্ন পুরুলিয়াবাসীর।
একই অবস্থা বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও দেখা যায়। বাঁকুড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক দেবাশিস লাহা বলেন, “পুলিশ তো দুর্গাপুজার আগেও নিষিদ্ধ শব্দবাজি রোখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু প্রতি বারের মতো এ বারও দুর্গা প্রতিমার ভাসানে লক্ষ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটল পুলিশের চোখের সামনেই। বাড়িঘর কাঁপছিল, কিন্তু পুলিশ কর্মীরা হাত গুটিয়ে দেখলেন!”
শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবি মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন দরিপা-রও অভিযোগ, “মনসা পুজো থেকে বাঁকুড়া শহরে মাইকের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। থামে কালীপুজোর পর। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “হাসপাতালের পাশের রাস্তা দিয়েও তীব্র শব্দে মাইক বাজিয়ে শোভাযাত্রা যায়। রোগীদের সমস্যার কথা অনেকেই ভাবেন না।”
তবে শুধু শব্দবাজিই নয়, উচ্ছৃঙ্খল ও নেশাগ্রস্তদের দৌরাত্ম্যে মহিলারা রাতে বাড়ির বাইরে বের হতে চান না। মহিলাদের কটূক্তি, বা মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় দাপাদাপি করতে অনেক ছেলেকে দেখা যায়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে দেখা যায়? প্রশ্ন বাসিন্দাদের। |