|
|
|
|
লক্ষ্য সংসদে চার বিল পাশ |
মায়াবতীর সঙ্গেও এ বার আলাদা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দু’দিন আগে সমাজবাদী পার্টি সভাপতি মুলায়ম সিংহকে পুত্র-সহ নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ সাত রেস কোর্স রোডে, নিজের বাসভবনে, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন তিনি। সেখানেই নৈশভোজে ডাকলেন শরদ পওয়ার, টি আর বালু, লালুপ্রসাদের মতো শরিক-সমর্থকদের। আর্থিক সংস্কার নিয়ে সওয়ালের পাশাপাশি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সরকারের পক্ষে সংখ্যা ধরে রাখতে এ ভাবেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নেমে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটের আর দেড় বছর বাকি। তার আগে এ বারের শীতকালীন অধিবেশন যে অন্য বারের তুলনায় অনেক বেশি উত্তপ্ত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও মহলেই। বিশেষ করে ডিজেল, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো বিষয়ে সরকারকে কোণঠাসা করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি, বাম, তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের জবাব দিতে প্রস্তুত। বিশ্বজনীন সঙ্কটের বাতাবরণে এ দেশে সংস্কারের দাওয়াই কতটা জরুরি, তা সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে আগ্রহী মনমোহন। কিন্তু শীতকালীন অধিবেশনকে কেন্দ্র করে তাঁর তথা সরকারের উদ্বেগ ভিন্ন। ভর্তুকি ছাঁটাই-সহ একাধিক সরকারি পদক্ষেপের বিরোধিতা করে সবক’টি বিরোধী দল যদি একজোট হয়ে সংসদে ভোটাভুটি দাবি করে, সে ক্ষেত্রে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করাই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। জন্মলগ্ন থেকেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু। তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ার পর এখন লোকসভাতেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তাদের। এক মাত্র মায়া-মুলায়মের মতো সমর্থক দুই দল একত্রে উভয় সভায় সরকারের পাশে দাঁড়ালে তবেই প্রয়োজনীয় সংখ্যা পাবে সরকার। সে কারণেই কংগ্রেস ও সরকারের পক্ষে মায়া-মুলায়মকে তুষ্ট রাখতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক দিকে উত্তরপ্রদেশে সপা সরকারকে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে অভিযোগ, বসপাকে পাশে পেতে মায়াবতীর বিরুদ্ধে তাজ করিডর-সহ একাধিক মামলায় সরকার ঢিলে দিয়েছে। মায়ার দাবি মেনে সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে তফসিলি জাতি, উপজাতির সংরক্ষণ নিয়ে সংবিধান সংশোধন বিল আনতেও প্রস্তুত কংগ্রেস।
সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, মায়া-মুলায়মের সমর্থন নিয়ে সরকার বাঁচানোই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন পেনশন ও বিমা বিলের মতো আর্থিক সংস্কারের কিছু বিষয়ও যাতে এ দফায় সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া যায়। তা ছাড়া জমি অধিগ্রহণ বিল এবং খাদ্য সুরক্ষা বিলও সংসদের আসন্ন অধিবেশনে পাশ করাতে চায় সরকার।
আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে সম্প্রতি যে সব পদক্ষেপ মনমোহন সরকার করেছে, তার মধ্যে সংশোধিত পেনশন ও বিমা বিলে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন অন্যতম। ওই বিল দু’টি এ বার সংসদেও পাশ করাতে গেলে মন্দার বাতাবরণে আরও বিদেশি বিনিয়োগ টানার দরজা খুলে যাবে। সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ভাবে আগ্রহী। তাৎপর্যপূর্ণ হল, নীতিগত ভাবে পেনশন ও বিমা বিল নিয়ে বিজেপিরও কোনও বিরোধিতা নেই। বরং পেনশন বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত সিনহা যে সব পরামর্শ দিয়েছিলেন, সরকার তার প্রায় সবক’টিই মেনে নিয়েছে।
এবং সেই বার্তা বিজেপিকে দিতে লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার কাছে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীপি চিদম্বরমকে দূত করে পাঠিয়েওছেন মনমোহন।
কংগ্রেসের বক্তব্য, এর পরেও বিজেপি শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে অন্য কথা। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, দু’দিন আগে মুলায়ম ও আজ মায়াবতীর সঙ্গে বৈঠকে পেনশন ও বিমা বিল পাশের জন্য তাঁদের সাহায্য চেয়েছেন মনমোহন। পেনশন খাতে জমা টাকা বাজারে খাটলেও কোনও ব্যক্তি চাইলে যে ন্যূনতম সুনিশ্চিত ফেরত পেতে পারেন, তা-ও তাঁদের বুঝিয়েছেন তিনি।
একই ভাবে জমি বিলের যে সর্বশেষ খসড়া সরকার প্রস্তুত করেছে, তা নিয়ে মুলায়ম ও মায়ার আপত্তি থাকার কথা নয় বলেই মনে করছে কংগ্রেস। কারণ, জমি বিলে যে সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে তার সঙ্গে মুলায়মের মতের ফারাক নেই। আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মায়াবতী যে জমি নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার সঙ্গে কেন্দ্রের বর্তমান জমি বিলের প্রচুর মিল রয়েছে। তবে কোনও দলই খাদ্য সুরক্ষা বিলের বিরোধিতা করবে না বলে মনে করছে সরকার। কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতাদের মতে, শীতকালীন অধিবেশনে এই চারটে বিল পাশ করাতে পারলেই যথেষ্ট।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বাম ও বিজেপির সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, যে হেতু বামেরা এই মুহূর্তে লোকসভার ভোট চান না, তাই তাঁরা এমন কিছু করবেন না যাতে সরকার পড়ে যেতে পারে। তাই মুলায়মকে বোঝাতেও সিপিএম নেতাদের ব্যবহার করতে চায় কংগ্রেস।
তবে এ সবই হল প্রস্তুতি ও আগাম কৌশলের অঙ্গ। পাল্টা কৌশল নিচ্ছে বিজেপিও। সরকার যাতে বিল পাশ করিয়ে কৃতিত্ব না নিতে পারে, সেই চেষ্টাও চালাবেন তাঁরা। সংসদ অচল থাকলে সরকারের পক্ষে কোনও কিছু পাশ করানো সম্ভব হবে না। ফলে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নামলেও শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবেন, তা সময়ই বলবে। |
|
|
|
|
|