অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে একবার পুরসভা কাজ বন্ধ করা সত্ত্বেও খোদ শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগ, কমিশনার, সচিবদের এড়িয়ে লিখিত ভাবে সংস্কারের অনুমতি দিলেন কী ভাবে তা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ দানা বাঁধছে। ওই ঘটনা নিয়ে শহরে আলোড়ন পড়তেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। ঘটনাচক্রে যিনি এখনও পুরসভার কাউন্সিলর পদেও রয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, “আমার তো মনে হয়, আইনের লোক হয়েও মেয়র কেন বেআইনি কাজ করছেন। কারণ, ওই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ছিল। সেখানে বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করা মানে ভবনের চরিত্র পাল্টাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নকশা তৈরি করে বিধি মেনে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হবে। তা ছাড়া ওই ভবনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। সেখানে বাণিজিক কেন্দ্র গড়ার অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল? মেয়র এভাবে ব্যক্তিগত ভাবে অনুমতি দিতে পারেন না।” |
ঘটনা হল, শুক্রবার বিধিভঙ্গের অভিযোগে ওই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মেয়র পারিষদ সীমা সাহা। কিন্তু, এদিনও সেখানে নির্মাণ হয়েছে। তা নিয়ে সীমা দেবীর মন্তব্য, “এটা নিয়ে যা বলার মেয়র বলবেন। আমরা ওঁর নেতৃত্বেই পুরসভা চালাচ্ছি।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই সীমা দেবীকে অবস্থান বদলাতে হয়েছে। মেয়র গঙ্গোত্রী দেবীও সমালোচনার বিষয়টি শুনেছেন। মেয়র বলেন, “নিয়ম না মেনে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে নির্মাণ কাজ হচ্ছে কি না তা খোঁজ নেব। আগে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা সরিয়ে নিয়েছেন মালিকপক্ষ। তবে তাঁরা ওই সময় থেকেই বাণিজ্যিক ভবন হিসাবেই বরাবর পুরকর দিতেন।”
মেয়র খোঁজ নেবেন বললেও পুরসভার অনেকেই সেখানে জোরকদমে নির্মাণ চলার বিষয়টি শুনেছেন। অথচ পুরসভার সেই মুখ্য বাস্তুকার চিত্তরঞ্জন বর্মন বা পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেবিড প্রধান, পুর সচিব কাজলকান্তি সাহা, কেউ-ই কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভবনের নির্মাণের অনুমতি যাতে মেলে সে জন্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান সবিতা অগ্রবাল মেয়রের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন। এর পরেই মেয়র অনুরোধে সাড়া দিয়ে আইন মেনে সংস্কারের অনুমতি দেন বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। সবিতা দেবী বলেন, “একটি সংস্থার পক্ষ থেকে ভবনটি সংস্কার হচ্ছে। ওঁদের অনুরোধে মেয়রের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। এর বেশি আমার কোনও ভূমিকা নেই।”
ঘটনার কথা শুনেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এভাবে অনুমতি দেওয়া যায় না। বাণিজ্যিক ভবন হলে তার নিয়ম মেনে জায়গা ছাড়া রয়েছে কি না দেখা দরকার। এখন যারা এ ব্যাপারে সাধু সাজার চেষ্টা করছেন তাঁদের অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত বলে আমাদের সন্দেহ।” বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম জানান, মেয়র যদি নির্মাণ কাজের অনুমতি দিয়ে থাকেন, তা হলে তিনি নিজের অধিকার এবং এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করছেন। |