মেয়েদের জন্য লড়ে যাচ্ছে এই রাজ্যের অন্য মালালা
নিজের দিদি পোলিওতে পঙ্গু। তাকে দেখে এক বালিকা পণ করেছিল, মুসলিম পরিবারগুলিতে সন্তানরা যেন পালস পোলিওতে আক্রান্ত না হয়, তা নিশ্চিত করবে সে। প্রাণপণ চেষ্টা করবে, যেন পড়াশোনা করতে পারে মুসলিম পরিবারের মেয়েরা, অকালে বিয়ে না হয়ে যায় তাদের। সেই বালিকা আজ পঁচিশের তরুণী, লায়লা খাতুন থান্ডার। নয় ভাইবোনের সংসারে চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সে আজ বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মী। বাইক নিয়ে বারুইপুর, ভাঙড়, বজবজ, বিষ্ণুপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মুসলিম পরিবারগুলিতে নিয়মিত পোলিও-র প্রচার চালায় সে। সেই সঙ্গে দাঁড়ায় অত্যাচারিত মেয়েদের পাশে।
১০ নভেম্বর-কে ‘মালালা দিবস’ বলে ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। তালিবান-হুমকি উপেক্ষা করে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে লেখার জন্য গুলিবিদ্ধ হয়েছিল চোদ্দো বছরের পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। ব্রিটেনের এক হাসপাতালে এখন সে একটু একটু করে সেরে উঠছে। মালালার সম্মানে আজকের দিনটি চিহ্নিত করে রাষ্ট্রপুঞ্জ বার্তা দিল, গোটা বিশ্বেই মেয়েদের শিক্ষা এবং সুস্থ জীবনের অধিকার সুরক্ষিত করার দরকার।
বাইকে সওয়ার লায়লা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র
নানা দেশে সেই কাজ করে চলেছে মালালার মতো মেয়েরাই। লায়লার মতো মেয়েরা হয়তো প্রচারের আলোয় আসেনি, কিন্তু চারপাশের মানুষেরা অকুণ্ঠ ভাবে স্বীকার করেন তাদের সাহস আর সাফল্য। “লায়লাকে অন্তত ছ’টা বালিকা বিবাহ রুখে দিতে আমিই দেখেছি,” বললেন মহেশতলার নয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস হালদার। “সকলকে বোঝানোর ক্ষমতা ওর এত ভাল, যে সমস্যা হলে আমি আগে ওকেই ডাকি। আমার দেখা মেয়েদের মধ্যে ও সত্যিই অসাধারণ। সবার জন্য কাজ করবে বলে ও অনেক কিছু ত্যাগ করেছে।”
একই কথা বললেন বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার পোলিও প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত। “আমাদের ফিল্ড-ওয়ার্কারদের মধ্যে মহিলা খুব কমই রয়েছে। লায়লা এই কাজের তাগিদে নিজে বাইক কিনে চালাতে শিখেছে। পরিবারের কেউ লেখাপড়া তেমন করেনি। ওকে উৎসাহ দেওয়ারও কেউ ছিল না। নিজের উৎসাহে স্নাতকোত্তর অবধি পড়াশোনা করেছে।” রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারগুলির অনেকেই পোলিও খাওয়াতে নারাজ। একটি অল্পবয়সী, অবিবাহিত মেয়ের কথা সহজে কেউ শুনতেও চায় না। কিন্তু তাতে নিরস্ত হয় না লায়লা। “ও এমন ভাবে বোঝায়, যে খুব কাজে দেয়,” বললেন অনিরুদ্ধবাবু।
কারা সাহায্য করে এই কাজে? “আগে পোলিও-র জন্য মৌলবীদের নিয়ে মিটিং হত, এখন আর হয় না। মসজিদ কমিটি ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে। অনেক কাউন্সিলরও পোলিও-র প্রচারে আসতে চান না। মনে করেন ওটা বেকার খাটুনি,’’ বলেন লায়লা। তাঁর কথায়, “যারা পোলিও খাওয়াতে চায় না, তাদের ওঠাবসা কাদের সঙ্গে, সেটা লক্ষ করি। তার পর তাদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলি।”
তবে লায়লার কাছে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে অবৈধ তালাকের ঘটনাগুলি। “তিন বার তালাক উচ্চারণ করলেই আইনত বিচ্ছেদ হয় না, অথচ এ ভাবেই ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয় অনেক মেয়েকে। এমন একটি ঘটনায় এক জন স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছিলেন, পড়শিরাও ছিল স্বামীর পক্ষে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে বলে, ‘তুমি আইবুড়ো মেয়ে, তুমি তালাক-দেওয়া বউকে ঘরে তুলে দিয়ে গেলে সব দায় তোমার।’ আমি ওদের বোঝাই, যারা কিছু না জেনে ঘর থেকে মেয়েদের বার করতে চায়, দায় তাদের। সে দিন মেয়েটিকে ঘরে ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি। এখন কিন্তু সেই স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গেই রয়েছে।”
মুসলিম পরিবারগুলি যে এখনও অষ্টম শ্রেণির পরেই মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে, পড়াশোনা শেষ করতে দেয় না, এটা আঘাত করে লায়লাকে। “মেয়ের জন্ম হলে ফালতু মার খায় মায়েরা। ক্রোমোজোম কী জিনিস জানলে ওরা বলতে পারত, যে মায়েদের কোনও দায় নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.