দুবরাজপুরের লোবায় জমি-আন্দোলনকে ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছে।
দুবরাজপুরে নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে শনিবার অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। কেন পুলিশ সেখানে গিয়েছিল, কার নির্দেশে গিয়েছিল, তা প্রকাশ্যে আনার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আগেই দুবরাজপুর-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কাল, সোমবার লোবায় যাচ্ছেন দীপা।
মন্ত্রী হওয়ার পরে শনিবার প্রথমবার প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে এসে কর্মী-সমর্থকদের অভিনন্দন-পর্বের পরে দীপা দুবরাজপুরের ঘটনার জন্য প্রকারান্তরে রাজ্য সরকারের জমির ব্যাপারে নীতিহীনতাকে দায়ী করেন। তাঁর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজ্যে বিনিয়োগ করুন। বলছেন, সরাসরি জমি কিনুন। দালালদের থেকে জমি কিনবেন না। অথচ জমিনীতিই স্পষ্ট হল না! ল্যান্ড-ব্যাঙ্কটাই বা তৈরি হবে কী ভাবে? বিনিয়োগের কথা ভাবলেই তাঁরা প্রথমে প্রশ্ন তুলবেন, কার থেকে জমি কিনব?”
দুবরাজপুরের লোবা গ্রামে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের নামে এফআইআর নিয়েও এ দিন রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করেন প্রদেশ নেতৃত্ব। দীপাকে পাশে বসিয়ে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যসচিবের কাছে অনুরোধ করব, কৃষিজমি রক্ষা কমিটির কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। গ্রেফতার করলে পুলিশ ও তৃণমূল নেতাদের করুন, যাঁরা লোবা গ্রামে গিয়ে সে দিন ঘটনা ঘটিয়েছিল।” |
লোবা নিয়ে একই ভাবে সুর চড়াচ্ছে বিজেপিও। তারাও সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে। এ দিন নলহাটিতে একটি সভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ প্রশ্ন তোলেন, “লোবার ঘটনায় পুলিশ যদি গুলি না চালায়, তা হলে গুলি এল কোথা থেকে?” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি আরও বলেন, “নন্দীগ্রামে কৃষকদের উপর গুলি চললেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন চলেনি। তিনিও ওই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীদের জড়িত থাকার কথা বলতেন। পরিবর্তনের পর ঠিক একই কায়দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কৃষকদের উপরে গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করছেন। মাওবাদীদের হাত খুঁজছেন।” আগামী সোমবার বিকেলে রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে গত মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত গ্রামবাসীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাবে বলে তিনি জানান।
পিছিয়ে নেই পিডিএসও। শনিবার লোবায় এসে পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড ধর্নামঞ্চের সামনে শ’দেড়েক গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে একটি সভা করেন। সেখানে শুক্রবার বিধানসভায় জমিজট ছাড়াতে এবং বিতর্কিত পুলিশি অভিযান নিয়ে সরকারের সঙ্গে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি দলের কী আলোচনা হয়েছে তা জানান সমীরবাবু। তিনি বলেন, “আমরা সাতদিন অপেক্ষা করব। সরকার পক্ষ থেকে সমস্যা মেটানোর যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করছে কিনা তা দেখে নেব। তারপরই ভবিষ্যতের কর্মপদ্ধতি ঠিক হবে।”
এর আগে দুপুরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত গ্রামবাসীদের দেখতে যান তিনি। তাঁদের মধ্যে রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া দুঃস্থ পরিবারগুলিকে দলের তরফে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সমীরবাবু বলেন, “আহতদের পাশে দাঁড়াতে আমরা সব দলকেই অনুরোধ করছি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আহত পুলিশকর্মীদের মতো গ্রামবাসীদেরও পৃথক ভাবে রাখার ব্যবস্থা করুন।” লোবার ঘটনার তদন্তে সরকার গড়িমসি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
|
বীরভূমের নলহাটি বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রচারে নেমে পড়ল বিজেপি। শনিবার নলহাটিতে জেলা বিজেপির তরফে একটি সভা করা হয়। সেখানে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ। কালীপুজোর পর উপনির্বাচনে দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। এ দিন সভায় রাহুলবাবু বলেন, “আমরা জঙ্গিপুরে ভোট বাড়িয়েছি। এ বার নলহাটিতে ইতিহাস তৈরি করবে বিজেপি। আগামী দিন হবে বিজেপির।” |