সম্পাদকীয়...
রাম রাম
জেঠমালানি বলিলেন, রামচন্দ্র অতি খারাপ স্বামী ছিলেন এবং উনি রামকে একেবারেই পছন্দ করেন না। যদিও উনি বিতর্কিত মন্তব্য করিতে খুবই ভালবাসেন এবং তজ্জনিত কলরব বেশ চাটিয়াপুটিয়া উপভোগ করেন বলিয়াই মনে হয়, তবু বিজেপি সাংসদ হইয়া মহাকাব্যের নায়কের কর্কশ বিশ্লেষণ এবং তাঁহার প্রতি নিজ বিতৃষ্ণা প্রকাশ যেন একটু বেশিই বিস্ময়কর কার্য হইল। বিজেপি আর কিছু লইয়া স্পর্শকাতর হউক না-হউক, রাম চরিত্রের অলোকসামান্য মহিমা লইয়া অত্যন্ত শুচিবায়ুগ্রস্ত। রামই তাহাদের ভিত্তি। এবং সম্ভবত, রামই ক্যাডারদের উত্তেজিত রাখিবার ভবিষ্যৎ পাথেয়। ‘ওই ওই রামচন্দ্রের অপমান হইল রে!’ হাঁক পাড়িয়াই তাহারা থাকিয়া থাকিয়া তথাকথিত হিন্দুত্বের পালে উদগ্র বাতাসের ব্যবস্থা করিয়া থাকে। তাহারা মনে করে, সহস্র সমস্যাদীর্ণ দেশে সব ফেলিয়া রামের জন্মস্থানের চুলচেরা ভৌগোলিক নির্ণয়ই নেতাদের আশু কর্তব্য হওয়া উচিত। এই দলের সদস্য হইয়া জেঠমালানি কিনা লক্ষ্মণকেও ছাড়িলেন না! সীতাকে খুঁজিতে আদিষ্ট হওয়ায় লক্ষ্মণ নাকি বলিয়াছিলেন, তিনি সীতার পদদ্বয় ব্যতীত কিছুই দেখেন নাই, মুখ দেখিয়া চিনিতে পারিবেন না। জেঠমালানির মতে, ‘মনুষ্যেরা এই রূপ চাতুরি করিয়া থাকে’! লক্ষ্মণকে চতুর অজুহাতপ্রিয় ঝুঁকিবিমুখ বলিয়া তিনি সাঁকো প্রবল নাড়াইয়া দিলেন। সম্ভবত তাঁহার উপর আকস্মিক নির্ভয়তা ভর করিয়াছিল। রামের প্রতি অভিযোগের অঙ্গুলি তুলিয়া বলিলেন, ‘কী করিয়া তুমি এক মৎস্যজীবীর কথা শুনিয়া একটি বেচারা নারীকে বনবাসে পঠাইলে?’ ইহা অবশ্য কেবল রাম নহে, মৎস্যজীবীদের পক্ষেও অপমানজনক (তাহার কথা স্বতঃই গুরুত্বহীন হইবে কেন?), তবে তাহা লইয়া এখনও দলিত আন্দোলনের খবর আসে নাই।
কাব্যের নায়কদের নিতান্ত সাহিত্যের চরিত্র ধরিয়া, তাঁহাদের উপর অযথা দেবত্ব আরোপ না করিয়া, তাঁহাদের কর্ম ও ভাবনার নির্মম ব্যবচ্ছেদ কোনও আশ্চর্য নূতন কাণ্ড নহে। কিন্তু তাহা করেন প্রধানত রসের কারবারিরা: লেখক বা মহাকাব্য-অনুধ্যানী। কোনও রাজনীতিক এই সকল বৃত্তে বড় একটা অগ্রসর হন না, কারণ এই মতগুলিতে ধর্ম-ন্যাওটা দেশের জনগণের হৃদয়ে আঘাত লাগিতে পারে। জনগণ সাধারণত সত্যকে সহজে লয় না এবং তাহাদের এই প্রবৃত্তিকে ভোট-পিপাসুরা সাতিশয় ডরাইয়া চলেন। তদুপরি বিজেপি নিজ স্বার্থেই রাম সম্পর্কে নিরপেক্ষ যুক্তিসিদ্ধ আলোচনায় উৎসাহী নহে, রামকে প্রশ্নাতীত আনুগত্যে পূজা করায় বিশ্বাসী। সেই জমিতে দাঁড়াইয়া সহসা এমন মুক্তচিন্তার অনুশীলন এবং জনপ্রিয়তার তোয়াক্কা না করিয়া নিজ রথে উড্ডীন পতাকাকে ঝাঁকাইবার সাহস জেঠমালানি কেন সংগ্রহ করিলেন, ভাবিবার।
রাম বা কৃষ্ণ কেহই কেবলমাত্র গুণের আকর নহেন। তাঁহাদের বহু অতিমানবিক গুণ রহিয়াছে, বহু প্রবল দূষণীয় কার্যকলাপও রহিয়াছে। সেই জন্যই চরিত্রগুলি এমন বর্ণময়, সজীব, যুগ যুগ ধরিয়া লক্ষ পাঠককে আকৃষ্ট করিয়া রাখিতে সক্ষম। বহুমাত্রিক চরিত্রগুলিকে লইয়া তর্কও অনন্ত, একই ঘটনাকে বহু দিক হইতে বিচার করিয়া একই চরিত্রকে কেহ উত্তম কেহ অধম বলিয়া অভিহিত করিলেন, এমন নমুনারও অভাব নাই। এমন আলোচনা যত চলিবে, মহাকাব্যকে ধর্মগ্রন্থ বলিয়া গুলাইয়া ফেলিবার অভ্যাস তত কমিবে, মানুষ সাহিত্যের রস পাইবে এবং ভিত্তিহীন পূজায় নিজ বোধবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করার অভ্যাস ত্যাগ করিবে। এই কাজে যদি বিজেপি-রাজনীতিকরা যাঁহারা হিন্দু ধর্ম-সম্পর্কিত সামান্য বিরূপ আলোচনা শুনিলেই মারমূর্তি ধরিয়া তাড়না করিতে ও তাবৎ উগ্র মতামত কেবল অন্য ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে তুলিয়া রাখিতে অভ্যস্ত আগাইয়া আসেন, অভূতপূর্ব বৌদ্ধিক তড়িৎ উৎপন্ন হইবে। কে জানে জেঠমালানি তাহারই সূচনা করিলেন কি না। ইহাই বা কে জানে, তাঁহার দল উচ্চণ্ড হুড়া লাগাইয়া ‘রাম’ জেঠমালানির নিজ নাম ভুলাইয়া দিবে কি না!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.