এক নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজে আসা আত্মীয়-পরিজন ও রাজনৈতিক কর্মীদের হটাতে লাঠি ও শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল জামুড়িয়ার একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ সাত রক্ষীকে গ্রেফতার করে তাঁদের তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। দিনভর টানাপোড়েনের পরে অবশ্য শনিবার বেশি রাতে ওই শ্রমিকের খোঁজ মিলেছে।
শনিবার সকালে বর্ধমানের জামুড়িয়ায় ইকড়া শিল্পতালুকে ঘটনার সূত্রপাত। বিবেকানন্দ ধীবর নামে বছর ছাব্বিশের যে শ্রমিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তাঁর বাড়ি বীরভূমের কাঁকরতলা থানার ভেলেনি গ্রামে। সম্প্রতি তিনি ইকড়ার ওই কারখানায় কাজে যোগ দেন। তাঁর দাদা রামকৃষ্ণ ধীবর ওই কারখানাতেই কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারখানাতেই ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর শেষ বার দেখা হয়েছিল। খানিক পরে তিনি শোনেন, ভাই যে বিভাগে কাজ করে, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। খবর নিতে গেলে বলা হয়, তিনি কাজ করছেন। ঘণ্টাখানেক পরে ফের খোঁজ নিতে গেলে বলা হয়, বিবেকানন্দ বেরিয়ে গিয়েছেন। অথচ কারখানা থেকে বেরনোর সময়ে খাতায় যে সই থাকার কথা, তা ছিল না। |
দুর্গাপুর-আসানসোলে স্পঞ্জ আয়রন বা ফেরো অ্যালয় কারখানায় শ্রমিক-সুরক্ষা নিয়ে বহু দিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। বছর তিনেক আগেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া এড়াতে দুর্গাপুরের অঙ্গদপুরে দুর্ঘটনায় মৃত এক শ্রমিকের দেহ কারখানার পিছনে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গত এক বছরে এ রকম বেশ কিছু দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেন, বিবেকানন্দ খাতায় সই না করেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণবাবুরা তা বিশ্বাস করতে পারেননি। তাঁর কথায়, “সে দিন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই কারখানায় পুলিশ ঢুকতে দেখেছিলাম। তাতেই আমার সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় যে, ভাইয়ের খারাপ কিছু ঘটেছে। হয়তো দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে।”
জামুড়িয়া থানার ওসি চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অবশ্য তা অস্বীকার করে বলেন, “কোনও দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি না। পুলিশ যায়ওনি। প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু বোঝা গিয়েছে, ওই শ্রমিক কাজ করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।” কিন্তু সন্দেহের বশেই সকালে রামকৃষ্ণবাবুরা কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চান। রক্ষীরা তাঁদের ঢুকতে দেননি। তর্কাতর্কি বাধে। অভিযোগ, সেই সময়েই কয়েক জন অফিসার বেরিয়ে আসেন। তাঁদের নির্দেশে রক্ষীরা বেপরোয়া লাঠি চালাতে শুরু করেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৌস্তুভ চক্রবর্তীদের অভিযোগ, রক্ষীদের মারে তাঁদের বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। কারখানার অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি অরুণ তুলসিয়ানের পাল্টা অভিযোগ, বিক্ষোভের নামে তাঁদের তিন আধিকারিককে স্থানীয় কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের লোকজন। পুলিশের সাহায্যে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
আচমকা লাঠি চলায় গ্রামবাসী প্রথমে পিছু হটে গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের দিক থেকেও ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। এরই মধ্যে কারখানার রক্ষীরা শূন্যে গুলি ছোড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। আসানসোল-দুর্গাপুরের এসিপি (সেন্ট্রাল) অজয় প্রসাদ বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কারখানার রক্ষীরা গুলি ছুড়েছেন বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন। সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি একনলা বন্দুক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবে ওই শ্রমিকের খোঁজ মেলেনি। তদন্ত চলছে।”
জোরদার খোঁজাখুঁজি শুরু হওয়ার পরে রাতেই অবশ্য বিবেকানন্দের খোঁজ মেলে। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার জানান, কারখানা থেকে বেরিয়ে ভেলেনি গ্রামের কাছে মামার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। সেখানেই ছিলেন। তাঁকে জামুড়িয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। |