নিউ জলপাইগুড়িগামী তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেসের সামনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন সঙ্গীতা হোড় নামে এক ছাত্রী। বুধবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে এদিন দুপুরে তার মৃতদেহ বহরমপুর নিমতলা মোড়ের কাছে নয়া সড়ক রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শেষ বারের মতো তাকে দেখতে পাড়া-প্রতিবেশী থেকে সহপাঠীদের ভিড় উপচে পড়ে। একমাত্র সন্তান আদরের পূজাকে হারিয়ে পাগলের মতো অবস্থা মা রেশমিদেবীর। ভেঙে পড়েছেন বাবা প্রবীর হোড়ও। মন খারাপ পাড়া-প্রতিবেশীদেরও। সঙ্গীতাকে চোখের সামনেই যে বড় হতে দেখেছেন তাঁরা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সঙ্গীতার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফোন আসে। ফোনে জানানো হয়টেঁয়া স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সঙ্গীতা। সেই সঙ্গে স্থানীয় এক জনের মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করার কথাও বলা হয়। সেই মোবাইল নম্বরে ফোন করে সঙ্গীতার দুর্ঘটনার কথা জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। নিত্যযাত্রী কালোসোনা বৈরাগ্য বলেন, “ওই ছাত্রীর মোবাইলে কোনও সিম কার্ড ছিল না। ব্যাগের মধ্যে কম্পিউটার সেন্টারের ফোন নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করি। এর পাশাপাশি গোটা বিষয়টি কাটোয়া জিআরপি থানাকে জানানো হয়। সেই মত রেল পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।” কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে এই দিন দুপুরের দিকে ফেরে সঙ্গীতার দেহ। পরে গোরাবাজার শ্মশান ঘাটে শেষ কৃত্য হয়। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া খাগড়াঘাট স্টেশন। কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, যার জন্য বহরমপুর থেকে খাগড়াঘাট গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে টেঁয়া পৌঁছে আত্মহত্যা করতে গেল সঙ্গীতা! ঘটনার পর থেকে ওই প্রশ্ন প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়দের মুখে ঘোরাফেরা করছে। রেল পুলিশও গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
সঙ্গীতার গৃহশিক্ষক দেবজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “অন্য দিনের তুলনায় মঙ্গলবার দুপুরে সঙ্গীতা চুপচাপ ছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পেটে ব্যথা বলে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু ওই কাণ্ড করবে তা ভাবতে পারিনি।” সঙ্গীতার এক জ্যাঠামশায় দিলীপকুমার হোড় অবশ্য বলেন, “পুজা খুব অভিমানী ছিল। কিন্তু এমন কী ঘটল যার জন্য এত বড় সিদ্ধান্ত নিল, তা আমরা জানি না!”
রেশমিদেবী বলেন, “দুপুরের গৃহশিক্ষকের বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খাব বলে মেয়ে গেল। এর পরে মেয়ে দীর্ঘ ক্ষণ আসছে না দেখে ওর এক বন্ধুকে ফোন করি। তখনই জানতে পারি বাড়ি আসার কথা বলে পুজা অনেক আগেই স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এর পরেই সর্বত্র মেয়ের খোঁজ-খবর শুরু করি। ওর সহপাঠীদের ফোন করেও জানতে চাই। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনি।” তখনই কম্পিউটার সেন্টার থেকে ফোন করে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। |