পাড়ার মাঠেই দেখা যাচ্ছে নাইজেরিয়া বা আফগানিস্তানের ফুটবলারদের।
এমনিতেই ডোমকলে ফুটবল মাঠে ভিড় উপছে পড়ে। সেই সঙ্গে পাড়ার মাঠে বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলা দেখার উৎসাহ, উন্মাদনা এ বার রীতিমতো বেশি। যদিও এই বিদেশি খেলোয়াড়দের দাপটে কপালে ভাঁজ পড়ছে পুলিশ প্রশাসনের। কারণ বিদেশি খেলোয়াড়রা মাঠে এলেই দর্শকের ভিড়ের পাশাপাশি সমর্থকদের আবেগের পারদটাও চড়ে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে বহু জরুরি কাজ ফেলে পুলিশকেও ছুটতে হচ্ছে খেলার মাঠে। তবে সব পুলিশকর্মীই যে এতে বিরক্ত হচ্ছেন এমনটা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “এই সুযোগে তো আমরাও একটু খেলা দেখে নিতে পারছি।”
গত মাসখানেক ধরে জলঙ্গির টিকরবাড়িয়া গ্রামের নিউ অ্যাথলেটিক ক্লাবের পরিচালনায় চলছিল ১৬ দলের একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট। গত বুধবার সেই খেলার ফাইনালে অ্যাথলেটিক ক্লাবের পক্ষে এসেছিলেন তিন নাইজেরিয়ান খেলোয়াড়। অন্যদিকে মেহেদিপাড়া ফুটবল দল জেলার বাছাই করা ফুটবলারদের নিয়ে গড়েছিল নিজেদের দল। ১-০ গোলে মেহেদিপাড়ার কাছে হেরে যায় আয়োজক ক্লাব। টিকরবাড়িয়া দলের অধিনায়ক কামাল হোসেন বলেন, “খেলার আয়োজন করে যতটা না আনন্দ পেয়েছি, তার থেকে বেশি চাপে ছিলাম দর্শকের ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে। প্রতিদিন দর্শকদের সামাল দিতে মাঠের চারপাশে কর্মকর্তাদের নেমে আবেদন নিবেদন করতে হয়েছে। এমনকি ফাইনালের দিনে বিরাট পুলিশ বাহিনী দর্শকদের সামাল দিতেও হিমশিম খেয়েছে।”
একই অভিজ্ঞতা মেহেদিপাড়া দলের কর্তা কিরণ সরকারের। তাঁর কথায়, “ফাইনালে জেতার পরে গ্রামের চেহারাটা বদলে গিয়েছে। সারারাত ধরে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে খাসির মাংস আর খিচুড়ি খেয়ে হইচই করেছে গোটা গ্রামের মানুষ। ইদুজ্জোহা আর মহরমের মাঝখানে এ যেন এক অন্য পরবে মেতে উঠেছিলেন গ্রামের মানুষ।” আগামী শনিবার এলাকার চারটি দল নিয়ে একটি নকআউট ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ডোমকলের কুশাবাড়িয়া যুব সংঘ পাঠাগার। এই মাঠে নাইজেরিয়ানদের পাশাপাশি আসছেন আফগান খেলোয়াড় শামি সোলেমান। ওই ক্লাবের অন্যতম কর্তা ওহিদুল ইসলামের কথায়, “বছর দু’য়েক থেকে এই এলাকার মাঠে খেলতে আসছেন নাইজেরিয়ান ফুটবলাররা। আমরা এই প্রথম আফগান ফুটবলার নিয়ে এসে সবাইকে চমকে দেব।” আর ঠিক এইখানেই পাল্টে যাচ্ছে ফুটবলের মেজাজটাও কী রকম? ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাস বলেন, “ডোমকলের মানুষের ফুটবল নিয়ে বরাবরই একটা অন্যরকম উৎসাহ রয়েছে। লিগের খেলাগুলো দেখতেও দর্শকদের ভিড়ে প্রত্যন্ত মাঠগুলোও কানায় কানায় ভরে যায়। এদিকে গত কয়েকবছর ধরে এই এলাকার মাঠগুলোতে নাইজেরিয়ান ফুটবলাররা খেলতে আসায় সেই ভিড় বেড়ে গিয়েছে।’’ ধীমানবাবুর কথায়, ‘‘এর ফলে এখন শুধু ফুটবল খেলা হলেই হবে না, কে কতটা চমক দেবে, চলছে তারই একটা অদৃশ্য লড়াই। ফলে কোনও ক্লাব যদি নাইজেরিয়ানদের নিয়ে আসে তাহলে আর এক ক্লাব ছক কষছে কী ভাবে অন্য দেশের ফুটবলার নিয়ে আসা যায়। আর এই ভিনদেশের খেলোয়াড়রা গ্রামের মাঠে কেমন খেলছে, তা দেখার জন্যও মুখিয়ে থাকছেন সীমান্তের এইসব আটপৌরে গ্রামের বাসিন্দারা।” |