সম্পাদকীয় ১...
তবু ইতিহাস
নতার ভোট প্রায় মাঝ-বরাবর বিভক্ত। কার্যত দুই সমান খণ্ডে খণ্ডিত পঞ্চাশ প্রদেশ-সম্পন্ন অতিকায় দেশটি। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ জনসমর্থনের মাপকাঠিতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় সমান সফল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতির মহিমা অপার জনসমর্থন যথেষ্ট নয়, বিজয়ী হওয়ার জন্য চাই যথেষ্ট ‘ইলেকটোরাল ভোট’। সেই চূড়ান্ত ভোট নাগরিকদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের উপর নির্ভর করে, কিন্তু শুধু মাত্র তাহার উপরেই নির্ভর করে না। ফলে জনসমর্থনে সামান্য অগ্রবর্তী হইয়াও ওবামা ‘বিপুল’ জয়ে জয়ী। প্রেসিডেন্ট-আসনে তাঁহার দ্বিতীয় দফার অধিকার চূড়ান্ত। পুনর্বিজয় বলিয়াই এই সাফল্যের স্বাদ তাঁহার অনুগামীদের নিকট মধুরতর। প্রায় মহাকাব্যিক এই বিজয়, যেখানে জয়ের প্রতিটি পরতে মিশিয়া আছে পরাজয়ের নাছোড় ছায়া। আর সেই কারণেই ২০০৮ সালের তুঙ্গ-নাটকীয় হর্ষোল্লাস এ বার দেখা যায় নাই, দেখা দেয় নাই সে বারের নিশ্চিত আশাময়তা, সাফল্যের সুবাসিত সৌরভ ক্ষণে ক্ষণে ম্লান হইয়াছে সংশয়ের দুষ্ট বাতাসে। মেঘরৌদ্রের মধ্যেই ধরা রহিল বারাক হুসেন ওবামার জয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব: মার্কিন ইতিহাসে এত তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট আসন ধরিয়া রাখিবার এক ও একমাত্র দৃষ্টান্তপুরুষ এফ ডি রুজভেল্ট-এর (১৯৩৬) সঙ্গে যুক্ত হইল বারাক হুসেন ওবামার (২০১২) নাম।
প্রেসিডেন্ট ওবামার বিজয়-বার্তা তাঁহার নিজস্ব ধরনেই আবেগে তড়িৎস্পর্শী, যুক্তিতে ক্ষুরধার, শৈলীতে অসামান্য। সেই বক্তৃতায় যে কথাটি তিনি আলংকারিক ভাবে উচ্চারণ করিলেন, সেই বাক্যটিই প্রকৃতপক্ষে চূড়ান্ত বাস্তব, অভ্রান্ত সত্য: অতঃপর ক্যাপিটল হিলের দ্বিতীয় যাত্রা তাঁহার পক্ষে কঠিনতর হইতে চলিয়াছে। মার্কিন কংগ্রেস আবারও রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠের অধীন: যাহার অর্থ ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকে আগের বারের মতোই প্রতি পদে বাধা ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইতে হইবে। সম্ভবত আগের অপেক্ষাও বেশি। কেননা, নির্বাচনের ফল দেখাইয়াছে, রিপাবলিকানদের সঙ্গে রহিয়াছে অর্ধেক দেশ, অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের নীতি প্রণয়ন এবং প্রতিপক্ষের বাধাদান দুইয়েরই পক্ষে জনমত একই রকম স্পষ্ট! শুভ সংবাদ এই যে, প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট শাসনের আশাবাদ কিংবা উচ্ছ্বাস এই দ্বিতীয় দফায় অনুপস্থিত থাকিবে বলিয়া হয়তো গোড়া হইতেই প্রেসিডেন্ট ওবামা অত্যন্ত সতর্ক, সযত্ন ও বাস্তববাদী পদক্ষেপ করিবেন, আশার ফানুসে ভাসিবার অবকাশ পাইবেন না।
রিপাবলিকান পার্টিরও গুরুতর শিক্ষা লইবার আছে মিট রোমনির এই অভিজ্ঞতা হইতে। তিনি যে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে এতখানি বেগ দিতে সমর্থ হইলেন, তাহার কারণ কিন্তু এই যে, তিনি ক্রমাগতই দক্ষিণপন্থা হইতে নিজের বক্তব্য ও অ্যাজেন্ডাকে মধ্যপন্থায় টানিয়া আনিবার চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার সেই উদ্দেশ্য সফল প্রমাণিত। বস্তুত, অভিবাসী, সমকামী, অর্থনীতি কিংবা নারীসমাজ: যে কোনও বিষয়েই যখনই তিনি অতি-দক্ষিণে ঝুঁকিয়াছেন, তখনই চড়া দাম দিতে হইয়াছে রিপাবলিকানদের। বর্তমান মার্কিন সমাজে এই অতি-দক্ষিণবাদী আদর্শ আর গরিষ্ঠতা লাভ করিবার স্থানে নাই। ভবিষ্যতেও থাকিবে না। তাহার কারণ, দেশের জনবিন্যাস এবং আর্থিক ও সামাজিক কাঠামো বদলাইয়া গিয়াছে। এই বাস্তব রিপাবলিকানরা যত দ্রুত অনুধাবন করেন, দ্বিদলীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ততই মঙ্গল।
বহির্বিশ্বের পক্ষেও প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আরও এক বার ক্ষমতাসীন দেখিতে পাওয়া দুঃসংবাদ নহে। তাঁহার নীতি ও কার্যপদ্ধতি বিষয়ে যে ধারণা গত চার বৎসরে হইয়াছে, তাহার ভিত্তিতেই বিভিন্ন দেশের সহিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন ভাবে বহমান থাকিবে, সামগ্রিক মন্দার পরিস্থিতিতে যাহা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। ভারতের পক্ষেও একই কথা প্রযোজ্য। ওবামার এশিয়া নীতিতে ভারতের যে স্থান, তাহার পরিবর্তনের আশঙ্কা রহিল না, আউটসোর্সিং হ্রাসের আতঙ্কও গত বারের মতোই ধীরে, বৃহত্তর বিশ্বায়িত অর্থনীতির অভ্রান্ত যুক্তিতে প্রশমিত হইয়া যাইবে। তাই, ওবামার প্রত্যাবর্তনে মার্কিন সমাজ বিভক্ত হইলেও বহিঃপৃথিবী স্বস্তিতে সমবেত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.