ওবামা আবার... হাড্ডাহাড্ডি লড়ে হার রোমনির,
তফাত গড়ল মহিলা-কৃষ্ণাঙ্গ ভোট
রিবর্তনের পক্ষেই রায় দিল আমেরিকা। আবার।
কোন পরিবর্তন? যে পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে চার বছর আগে হোয়াইট হাউস দখল করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং যার অনেকটাই তিনি পূরণ করতে পারেননি।
তবু সংখ্যালঘু, মহিলা, কৃষ্ণাঙ্গ ও নিম্নবিত্ত ভোটারদের রায়ে দ্বিতীয় বার ফিরলেন সাদা বাড়িতে। ফ্লোরিডায় ভোটের ফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত ওবামার ঝুলিতে ৩০৩টি ভোট। তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনি পেয়েছেন ২০৬টি ভোট। গভীর রাত পর্যন্ত ফ্লোরিডার ভোট গণনা থেকে যা ইঙ্গিত মিলছে তাতে মনে হয়, এই রাজ্যের ২৯টি ভোটও ওবামার পক্ষে যাবে। তা হলে ওবামা পাবেন ৩৩২টি ভোট, রোমনির থেকে ১২৬টি বেশি।
এ বারও তা হলে এত সহজেই জিতে গেলেন ওবামা? ভোট-চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। জন-ভোটের নিরিখে ওবামা পেয়েছেন ৫০% ভোট, রোমনি ৪৯%। ইলেকটোরাল ভোট প্রক্রিয়ার ফলে ওবামার জয় এত সহজ দেখাচ্ছে। কিন্তু জয় যে সহজে আসেনি, তা আজ বিজয়-বক্তৃতায় মেনে নিয়েছেন ওবামা স্বয়ং। বলেছেন, “আজ প্রমাণ হয়ে গেল, সাধারণ মার্কিন জনতা ক্ষমতার স্বার্থকে হারিয়ে দিতে পারে।”
চার বছর আগের ভোট বলেছিল, আমেরিকার মানুষ পরিবর্তন চান। আর এ বারের ভোট বলছে, আমেরিকার মানুষের অবয়বটাই পাল্টে গিয়েছে। মার্কিন ভোট শ্বেতাঙ্গরা নিয়ন্ত্রণ করে এ কথাটা আর বলাই যাবে না এখন। বিভিন্ন বর্ণের মানুষ ভোটবুথে এসেছেন। সেই ভিন্নতাই ওবামাকে হোয়াইট হাউসে ফিরিয়ে এনেছে।
কাদের ভোট পেয়েছেন ওবামা? জনমত সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মার্কিন মহিলারা প্রেসিডেন্টকে ঢেলে ভোট দেবেন। ফল ঘোষণার পরে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ মহিলা-ভোট পেয়েছেন ওবামা। তার প্রধান কারণ, সমকামী বিবাহ বা গর্ভপাতের মতো বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা বরাবরই সংবেদনশীল। অন্য দিকে, ধর্ষণ বা গর্ভপাত নিয়ে অস্বস্তিজনক কথাবার্তা বলে প্রথম থেকেই বেশির ভাগ মহিলার বিরাগভাজন হন রোমনি।
সুখী পরিবার। শিকাগোর বিজয় মঞ্চে স্ত্রী-কন্যা-সহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
তাই বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আজকের ফল যত না ওবামার জয়, তার থেকে অনেক বেশি রোমনির হার। মার্কিন ভোটাররা আসলে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী রোমনির বিরুদ্ধে। যিনি গর্ভপাত থেকে স্বাস্থ্যবিমা থেকে অনুপ্রবেশকারী, বিভিন্ন বিষয়ে অত্যন্ত কট্টরপন্থীদের মতো কথা বলেছেন। সম্ভবত সে কারণে বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের ভোটও বেশি পেয়েছেন রোমনি। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।
আর ওবামা? কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিক (মূলত লাতিন আমেরিকান) ভোটার, মহিলা ও কমবয়সী ভোটার ওবামাকেই মূলত সমর্থন জানিয়েছেন। প্রতিশ্রতির বুলি আওড়াতেও বরাবরই দড় ওবামা। এ বারও মেক্সিকোর অনুপ্রবেশকারীদের তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, তাদের ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। সমকামীদের বলেছেন, প্রত্যেকটি রাজ্যে সমকামী বিবাহ বৈধ করার চেষ্টা করবেন। বিদেশের মাটিতে যে মার্কিন সেনা বসবাস করছেন, তাঁদের প্রতি প্রেসিডেন্টের বার্তা, “বাসস্থান বা সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আপনাদের কখনও ভাবতে হবে না। সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের।” এই আশ্বাসে প্রত্যাশাপূরণও হয়েছে।
তা হলে অর্থনীতি? এই যে ভোটের আগে বলা হচ্ছিল, এ বার প্রধান বিবেচ্য হবে দেশের আর্থিক হাল? দেশে বেকারের সংখ্যা ৭.২ শতাংশ। আমেরিকায় বেকারির হার এর আগে এত বেড়েছিল কেবল ১৯৩৬ সালে, ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের জমানায়। তবু কেন জিতলেন ওবামা?
বিশ্লেষকরা বলছেন, জর্জ বুশের উত্তরাধিকার হিসেবে ওবামা পেয়েছিলেন, একটি সম্পূর্ণ ধ্বস্ত অর্থনীতি। তাকে নিজের পায়ে ফের খাড়া করতে তিনি কোন পথে এগোতে চান, তা গত বার সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছিলেন ওবামা। সমালোচকেরা বলবেন, সেই প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগটাই পূরণ হয়নি। কিন্তু সমর্থকেরা বলবেন, আরও বেশি ভেঙে পড়া থেকে মার্কিন অর্থনীতিকে রক্ষা করেছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর প্রশাসনের কয়েকটা দাওয়াই বেশ কাজেও দিয়েছে। জেনারেল মোটরস, ক্রাইসলারের মতো মার্কিন গাড়ি নির্মাতা সংস্থাকে বাঁচাতে প্রেসিডেন্ট ওবামা বিভিন্ন ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। যে সব ত্রাণ প্রকল্পের ঘোরতর বিরোধী রিপাবলিকানরা। এর ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ওহায়ো ছিল অন্যতম দোদুল্যমান রাজ্য। আর এখানে প্রতি আট জনে এক জন কাজ করেন কোনও না কোনও গাড়ি সংস্থায়। গাড়ি নির্মাতাদের জন্য ত্রাণ প্রকল্পের পরে সেই রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে তাঁর সমর্থনে।
জয়ের হাসি হোয়াইট হাউসই ঠিকানা। বক্তৃতা-মঞ্চে তৃপ্ত প্রেসিডেন্ট।
গত চার বছর ধরে ওবামা কী করেছেন আর কী করতে পারেননি, তা আমেরিকার মানুষের সামনে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কী করতে চান, তা নির্বাচনী প্রচারে একবারও খোলসা করেননি রোমনি। আর বলেননি বলেই অর্থনীতি নামক তুরুপের তাসটাও তাঁর পক্ষে যায়নি। বাড়তি অস্বস্তি, তাঁর পুঁজিবাদী ভাবমূর্তি। তিনি যে এক সফল শিল্পপতি, এই তথ্যটা ডেমোক্র্যাট প্রচারে প্রথম দিন থেকে ব্যবহার করা হয়েছে। ওবামার প্রচার-টিম অত্যন্ত ধূর্ত ভাবে এ কথাটাই বারবার তুলে আনার চেষ্টা করেছে যে, রোমনি বিত্তবান, তাই সাধারণ মানুষের সাধারণ চাওয়া-পাওয়াটা ঠিক বোঝেন না। বস্তুত, বছরের গোড়াতেই তারা ঠিক করে নিয়েছিল, প্রচারে এটাই হবে বড় হাতিয়ার। প্রচারের জন্য যে বিপুল অঙ্ক ডেমোক্র্যাট দল বরাদ্দ করেছিল, তার বেশির ভাগটাই যায় এই নেতিবাচক-প্রচারে। রিপাবলিকান সূত্রের খবর, অ্যান রোমনি নাকি প্রথম থেকেই দলের প্রচার আধিকারিকদের বলে আসছেন, সাধারণ মানুষের মনে তাঁর স্বামীর সদর্থক ভাবমূর্তি তৈরি করতে আগে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু অ্যানের সেই কথায় কেউই বিশেষ কান দেননি। ডেমোক্র্যাটদের লাগাতার সমালোচনার মুখে পড়ে রিপাবলিকান দল যখন নড়ে চড়ে বসেছে, ভাবছে রোমনি-বিমুখ সাধারণ ভোটারদের কী ভাবে তাঁর দিকে নিয়ে আসা যায়, তখন যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছে। ভোটের ফল বিশ্লেষণ করেও দেখা যাচ্ছে, স্বল্প আয়ের লোকজন ঢেলে ভোট দিয়েছেন ওবামাকে, আর বেশি আয়ের লোকেরা রোমনিকে। রোমনির কপাল খারাপ, আমেরিকায় এখন স্বল্প আয়ের লোকই বেশি।
১৯৯২ থেকে ২০০০-এ বিল ক্লিন্টন, ২০০০ থেকে ২০০৮-এ জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বারাক হুসেন ওবামা। আমেরিকাবাসী পরপর তিন বার দেখালেন, প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয় দফায় সুযোগ দিতেই চান তাঁরা। সে কারণেই এ বার হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন ওবামার। আর সেটা তো পরিবর্তনের স্লোগান পূরণের সুযোগ দিতেই।

ওবামা উবাচ
এটা বরাতজোর নয়। বা আকস্মিক ব্যাপারও নয়। আপনারাই এটা সম্ভব করেছেন। আজ প্রমাণ হয়ে গেল, সাধারণ মার্কিন জনতা ক্ষমতার স্বার্থকে হারিয়ে দিতে পারে।
কুড়ি বছর আগে এই মহিলা (মিশেল) যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হতেন, তা হলে আজকের এই আমিটা তৈরি হত না।
সাশা আর মালিয়া, তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। শুধু আপাতত বোধহয় একটা কুকুরই যথেষ্ট!
আমরা শুধু ব্যক্তিগত উচ্চাশাগুলোর যোগফল না। শুধু লাল আর নীল স্টেটের সমাহার না। আমরা ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা। চিরকাল তাই-ই থাকব।



মার্কিন ভোট প্রক্রিয়া
ইলেক্টোরাল কলেজ কী?
আমেরিকায় ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। সারা দেশে মোট ৫৩৮ ইলেক্টর রয়েছেন। জিততে হলে কম পক্ষে ২৭০টি ভোট দরকার।
ইলেক্টোরাল ভোট পদ্ধতি কী রকম?
এক জন প্রার্থী যে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজের দিকে টানতে পারবেন, সেই রাজ্যের সব ক’টি ভোট তাঁর হয়ে যাবে। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫ জন ইলেক্টর। ওবামা এই রাজ্যে বেশি ভোট পেয়ে ৫৫ জন ইলেক্টর জিতে নিয়েছেন।
এই ভোট পদ্ধতির খামতি কোথায়?
অনেক সময়েই গোটা দেশের জন-ভোট (পপুলার ভোট) আর ইলেক্টর সংখ্যায় ফারাক থেকে যায়। যেমন, এই বছর ওবামা পপুলার ভোট পেয়েছিলেন ৫০% আর রোমনি ৪৯%। অর্থাৎ ওবামা রোমনির চেয়ে মাত্র ১% পপুলার ভোটে এগিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা গেল ওবামা রোমনির চেয়ে অনেক বেশি ইলেক্টোরাল ভোটে এগিয়ে।


ছবি: এএফপি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.