আজাদ মুন্সীর মতো দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা। তবু যেন নিছকই ‘সতর্কবার্তা’ দিতে মঙ্গলকোটের ‘উপদ্রুত’ গ্রামগুলিতে সিআরপিএফ নিয়ে টহল দিল বর্ধমান জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে আর এক ‘অশান্তিপ্রবণ’ এলাকা রায়নাতেও একই ভাবে টহল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “জামশেদপুর থেকে আধা সামরিক বাহিনী এসেছে। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে। এই জেলায় দু’টি উপদ্রুত থানা এলাকায় তারা টহল দেবে।” কিন্তু এই টহলের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ সিআরপি-র ৬৫ জনের বাহিনী টহল শুরু করে। নেতৃত্বে ছিলেন মেজর অমরেন্দ্র ঝা, সঙ্গে পুলিশের কাটোয়া সার্কেল ইন্সপেক্টর শচীন্দ্রনাথ পুড়িয়া ও মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকার। মঙ্গলকোট থানা থেকে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের বিশেষ গাড়ি ‘বজ্র’ ঝিলেরা গ্রামের দিকে রওনা দেয়। ইদানীং ওই গ্রামেই আশ্রয় নিয়ে ছিলেন আজাদ। দশমীর সকালে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল খানের বাহিনীর সঙ্গে তার দলের সংঘর্ষও হয়। দু’জন মারা যায়। সংঘর্ষের সময়ে যাতে পুলিশ এলাকায় ঢুকতে না পারে তার জন্য লাখুরিয়া থেকে ঝিলেরা যাওয়ার মোরাম রাস্তা তিন জায়গায় কেটেও দেওয়া হয়েছিল। |
এ দিন অবশ্য সিআরপি কোনও বাধা পায়নি। ঝিলেরার পথে অজয়ের বাঁধও তারা ঘুরে দেখে। পুলিশের অনুমান, আজাদ ও তার দলবল আপাতত মঙ্গলকোট থেকে পালিয়ে পাশেই বীরভূমের নানুরে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। সে কারণে নানুর থানাকেও সতর্ক করা হয়েছিল। এক পুলিশকর্তার কথায়, “টহল চলাকালীন যাতে কোনও দুষ্কৃতী অজয় পেরিয়ে নানুরে চলে যেতে না পারে, তার জন্যই এই সতর্কতা।” দশমীর সংঘর্ষের পর থেকে লাখুরিয়া ও কোটালঘোষ গ্রামের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ সাইফুলের অবাধ গতিবিধি এলাকার লোকজনের চোখে পড়েছে। ওই দুই গ্রামেও ‘রুট মার্চ’ করে সিআরপি। মঙ্গলকোট থানা সূত্রের খবর, দাগি দুষ্কৃতীদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু কাউকে ধরাও যায়নি, কিছু উদ্ধারও হয়নি। কাশেমনগর, শিমুলিয়া, নিগন, কৈচর এলাকা ঘুরে প্রথম পর্বের টহল শেষ হয়।
দ্বিতীয় পর্বের টহলে যোগ দেন এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব বিশ্বাস। বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ বাহিনী মঙ্গলকোট গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই গ্রামের একাংশ ছাড়াও পাশের দেউলিয়া ও জহরপুরে আজাদের ‘প্রভাব’ রয়েছে। গাড়িতে ওই সব এলাকায় টহল দিয়ে মঙ্গলকোট বাজার থেকে ফের ‘রুট মার্চ’ করা হয়। পরে মঙ্গলকোট মোড়ে পৌঁছে সিআরপি বর্ধমানের দিকে চলে যায়। এই গ্রামের পুরনো থানা এলাকায় কখনও পুলিশ, কখনও তৃণমূল নেতা আনু কাজির দলবল বারবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আজাদ-বাহিনী। |
চলছে নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, কুনুর নদীর পাশে পুরনো থানা দুষ্কৃতীদের অন্যতম ডেরা। তা সত্ত্বেও সেখানে হানা দেওয়া হল না কেন, এলাকাতেই সেই প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত ওই এলাকায় টহল দেওয়া হবে ভেবে এসডিপিও, সিআই এবং কিছু জওয়ানও গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন। টহল না হওয়ায় তাঁরাও কিছুটা অবাক হয়ে যান। টহলে ‘গাইড’-এর ভূমিকায় থাকা মঙ্গলকোটের ওসি অবশ্য বলেন, “ওই এলাকায় সকালেই টহল দেওয়া হয়ে গিয়েছে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও আধা সামরিক বাহিনীর এই টহল নিয়ে সংশয়ে। তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর মতে, “এলাকায় অশান্তি আটকাতেই এই উদ্যোগ বলে মনে হয়।” সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের প্রশ্ন, “আজাদ-সহ বিভিন্ন দুষ্কৃতীর বাড়বাড়ন্ত রুখতেই হয়তো এই টহল, কিন্তু দুষ্কৃতীদের ধরার উদ্যোগ কই?” জেলা কংগ্রেস নেতা জগদীশ দত্তের মন্তব্য, “আগে দুুষ্কৃতীরা ধরা পড়ুক, তবে তো বুঝব এই সবের কোনও মানে আছে!” পুলিশ অবশ্য জানায়, দুষ্কৃতীদের ধরার জন্য লাগাতার চেষ্টা চলছেই। |