বিনোদন: মামলা করা নিয়ে দোলাচল
‘তিন কন্যা’য় চক্রান্ত দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী
‘তিন কন্যা’ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন অগ্নিকন্যা! এবং ফের তুললেন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করে ‘তিন কন্যা’ প্রসঙ্গে পাল্টা আক্রমণে নামলেন, সে দিনই এই ছবি না-দেখানো নিয়ে মামলা ঘিরে জমে উঠল নাটক। রবিবার মামলার হুমকি দিয়েও সোমবার সকালে পিছু হটল ছবিটির পরিবেশক সংস্থা। তা নিয়ে সরব হলেন ছবির পরিচালক। সেই চাপের মুখে ফের দেওয়া হল মামলা করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তার আশ্বাস।
‘তিন কন্যা’ ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার, স্টার থিয়েটারে ছবিটি না দেখানোর পরে। শনিবার সেই বিতর্ক চূড়ান্ত আকার নেয়। অভিযোগ ওঠে, ছবিটিতে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া থাকায় সরকারি হস্তক্ষেপেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সেই দিনই মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক করে এই অভিযোগ খারিজ করেন। কিন্তু তার পরেও ধোঁয়াশা কাটেনি। বরং নানা ঘটনা সামনে আসায় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শাসক দলের ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ আরও জোরদার হয়। বস্তুত, মামলা করার কথা বলেও এ দিন পরিবেশক সংস্থার পিছিয়ে যাওয়ার পিছনেও চাপের রাজনীতিই দেখছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে।
বিভিন্ন মহলের এই সব অভিযোগ মোকাবিলার ভার সোমবার নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা সংস্কৃতি-শাসনের অভিযোগ উড়িয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মমতা লিখেছেন, “কলকাতা এবং রাজ্যের বহু জায়গায় ছবিটি দেখানো হচ্ছে। সরকার যদি ছবিটি নিষিদ্ধ করতে বদ্ধপরিকরই হতো, তা হলে এতগুলি হলে সেটি দেখানো হচ্ছে কী করে?” আর তার পরেই চক্রান্তের অভিযোগ তুলে মমতা লিখেছেন, “সরকারকে বিব্রত এবং হেয় করার লক্ষ্যে এটা একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।”


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সরকার যদি ছবিটি নিষিদ্ধ করতে বদ্ধপরিকরই হতো, তা হলে এতগুলি হলে সেটি দেখানো হচ্ছে কী করে? সরকারকে বিব্রত এবং হেয় করার লক্ষ্যে এটা একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।
কেন এই অপপ্রচার, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাস, সার, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরোধিতা করে তৃণমূল ইউপিএ ছেড়ে চলে আসার সাহস দেখিয়েছে। তাতেই কারও কায়েমি স্বার্থে ঘা পড়েছে। “সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ ভুল তথ্য এবং বানানো গল্প দিয়ে সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসাজশেই এটা করা হচ্ছে।” লিখেছেন মমতা।
যে অভিযোগ উড়িয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “উনি তো সব ব্যাপারেই চক্রান্তের ভূত দেখেন! আমরা তো কখনও বলিনি যে, উনিই ছবি দেখানো বন্ধ করেছেন। কিন্তু ঘটনা হল, আগে ঘোষণা হয়েও স্টারে ছবিটি চলছে না। হলটির মূল দায়িত্ব পুরসভার। কেন সেখানে ছবিটি বন্ধ, সেটা মুখ্যমন্ত্রী খোলসা করুন।”
আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, “স্টারে ছবির প্রদর্শন বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদে হইচই শুরু হওয়ায় আর কোথাও সেটি দেখানো বন্ধ করতে পারেনি সরকার! এর মধ্যে কংগ্রেস-সিপিএমের হাত মেলানো, চক্রান্তের কিছু নেই!”
‘তিন কন্যা’-কে ঘিরে এই রাজনৈতিক চাপানউতোরে নতুন মাত্রা জুড়েছে, মামলা নিয়ে পরিবেশক সংস্থার দোলাচল। স্টারে ছবি দেখানোর বিষয়টি দেখভাল করে যে সংস্থাটি, রবিবার তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন পরিবেশক সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। এ দিন সকাল থেকে হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা করার প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিন্তু বেলা বারোটা নাগাদ সংস্থার আইনজীবী বলেন, “পরিবেশক সংস্থা মামলা করছে না। তবে প্রযোজক-পরিচালক ইচ্ছে করলে মামলা করতে পারেন।” তিনি জানান, স্টারের বদলে হাতিবাগানের অন্য একটি প্রেক্ষাগৃহে ‘তিন কন্যা’ চলছে। ফলে উত্তর কলকাতায় দর্শক টানতে সমস্যা নেই।
বিকেলে ছবির প্রযোজক-পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় আবার পাল্টা দাবি করেন যে, মামলা না-করার ব্যাপারে চূড়াম্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার ফের অবকাশকালীন বেঞ্চ বসবে। সেখানেই মামলা করা হবে। অগ্নিদেব বলেন, “হঠাৎ কোনও সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করে দিলে, যত দিন সেই সিনেমার বুকিং ছিল, তত দিনের হাউসফুল শো-এর টাকা দিতে হয়। স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ দিনের টাকা চাওয়া হবে।”
‘তিন কন্যা’র অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও বলেন, “পরিবেশক সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডু আমাকে বলেছেন মামলা হবেই। তবে যে সময়টা নষ্ট হল, তাতে ছবির ক্ষতিই হয়েছে। কারণ, কলকাতার সর্বত্র ছবিটা হাউসফুল চলছে। স্টারে দেখানো হলেও হাউসফুলই হত।”
সন্ধ্যায় তাঁর আগের মন্তব্য থেকে কিছুটা সরে যান সংস্থার আইনজীবীও। তিনি বলেন, “সরকার বা পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে না। কিন্তু স্টার চুক্তিভঙ্গ করায় সংস্থার যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে মামলা করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে।” তবে তা ৮ নভেম্বর হবে কি না, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি।
কেন বার বার মত বদল করছে পরিবেশক সংস্থা? ওয়াকিবহাল মহলের অনেকের মতে, পরিবেশক সংস্থার কর্ণধার রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ। তাই মামলা নিয়ে দোলাচল। সরকার বা পুরসভার বিরুদ্ধে তো মামলা করা হচ্ছেই না, আর্টএজকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও দ্বিধা রয়েছে। যার পিছনে শাসক দলের চাপ কাজ করতে পারে বলে অনেকের ধারণা। অনেকে আবার মনে করছেন, বিষয়টি আপসে মিটে যেতে পারে, এই আশায় হাতে কিছুটা সময় নেওয়া হল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.