বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হল দুই গ্রামবাসীর। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে, কোচবিহারের শীতলখুচি থানার পুটিয়া বারমাসিয়া গ্রামের ঘটনা। রবিবার সকালের এই ঘটনায় বিএসএফ নিহত দু’জনকে পাচারকারী ও দুষ্কৃতী বলে দাবি করলেও এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এলাকায় বিএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন অনেকেই।
পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম আলি আহমেদ (৩৫) ও ইমতিয়াজ মিঞাঁ (২৫)। তাঁরা সম্পর্কে খুড়তুতো ভাই। আহমেদ গাড়ি চালক ও ইমতিয়াজ চাষি হিসাবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ওই ঘটনার পরে পুলিশ গেলে তাদের ঘিরে ক্ষোভ জানান এলাকাবাসী। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত সিংহ বলেন, “গরু পাচারকারীদের ধরতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে বিএসএফ। প্রাথমিক ভাবে খবর, বাধ্য হয়ে গুলি চালানোয় ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিবার বা বিএসএফ কোনও তরফেই অভিযোগ জমা পড়েনি।”
পুলিশের কাছে দেওয়া বিএসএফের বক্তব্য নিয়ে অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেছেন শীতলখুচির বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতী হামলায় কোনও জওয়ান জখম হয়েছেন বলে খবর পাইনি। মৃতেরা পাচারে জড়িত কি না, তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানোর নির্দেশ না থাকলেও কী করে এমন ঘটনা হল, সে ব্যাপারে শীঘ্রই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেব। মুখ্যমন্ত্রীকেও পুরো বিষয়টি জানাব।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতেই শীতলখুচির ওই সীমান্ত এলাকায় গরু পাচার নিয়ে বিএসএফ এবং দুষ্কৃতীদের মধ্যে গোলমাল হয়। জওয়ানদের উপরে হামলার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। বিএসএফের দাবি, এ দিন সকালে গ্রামে ঢুকে অভিযুক্তদের খোঁজে যাওয়া জওয়ানদের উপর ফের হামলার চেষ্টা হয়। দুষ্কৃতীরা জওয়ানদের অস্ত্র কাড়ার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষায় এক জওয়ান গুলি চালালে মারা যান পুটিয়া বারমাসিয়া গ্রামের ওই দুই যুবক।
বিএসএফ এই দাবি করলেও তা মানতে নারাজ গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, বিএসএফ বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে। ওই গ্রামেই বছর দু’য়েক আগে এক পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধর করার অভিযোগও উঠেছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত সদস্য মহাদেব বর্মন বলেন “বিএসএফের অত্যাচার নিয়মিত ব্যাপার। তবে, বৈঠকের পরেও এমন ঘটনা ঘটবে, ভাবিনি।”
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর রাজ্য কমিটির সহকারী সম্পাদক অভীরঞ্জন ভাদুড়িও বলেন, “সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ বহু বার উঠেছে। বহুক্ষেত্রে বিএসএফ অপ্রয়োজনে গুলি চালিয়েছে, এমন অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এই ধরনের ঘটনার পরে সব ক্ষেত্রেই চোরাকারবার ও আত্মরক্ষার যুক্তি দেখানো হয়। এ সব নিয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।” তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহও। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে এসপি-র সঙ্গে কথা বলব। ওই ঘটনা ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা না হয়, তা দেখা হচ্ছে।” |