উত্তরবঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে চলছে এক অরাজকতা। এ অঞ্চলের জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা নিত্য নাজেহাল হচ্ছেন। তাদের খপ্পরে পড়ে সকলে ক্ষতির শিকারও হচ্ছেন। সবারই অভিযোগ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেও ফল মিলছে না। দালালচক্রগুলি প্রতিদিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। কয়েক জন ডাক্তার, ওষুধের দোকানের মালিক এবং নার্সিংহোমের মালিক এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলেও তারা অভিযোগ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে সর্বত্র দালালরা ডাক্তারদের সঙ্গে এমন ভাবে মেলামেশা করেন যাতে রোগী ও তার পরিজনদের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারা ভুল করে দালালদের ডাক্তার বলেই মনে করেন। বাড়তি অবৈধ সুবিধা নেওয়ার লক্ষ্যে সে ভুলের সুযোগ নেয় তথাকথিত দালালেরা। প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ভবনকে কেন্দ্র করেই উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু ওষুধের দোকান ও নার্সিহোম গজিয়ে উঠেছে। দালালেরা মূলত তাদের প্রতিনিধি হয়েই কাজ করে থাকে। রোগীদের তারা নানা ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধা দেয়। এর জন্য তারা বেঠিক তথ্য প্রদান করতে এমনকী অভিনয় করতেও কসুর করে না। চক্রে জড়িত ডাক্তারেরাও দালালদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোগীদের হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী নার্সিংহোমগুলিতে ভর্তির জন্য প্ররোচনা দিয়ে থাকেন। তখন নিরুপায় হয়েই রোগীদের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। এর পরই ঝোপ বুঝে বিশাল অঙ্কের কোপ মারতে উদ্যত হয় ওই নার্সিংহোমগুলি।
তবে এ কথা ঠিক যে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগের খুবই নামডাক রয়েছে। সে কারণেই ওই বিভাগগুলিতে রোগীর ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু সেখানেও দালালরাজ সক্রিয় থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সহজে তাদের খপ্পরে পড়েন। দালালেরা সংশ্লিষ্ট রোগী বা তার সঙ্গে থাকা অন্যদের থেকে মোটা টাকা নিয়ে অবৈধ ভাবে আগেভাগে দেখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ফলে বৈধ ভাবে নাম লেখানো রোগীদের দুর্গতির সীমা থাকে না। অনেক সময় প্রতীক্ষায় সারা দিনও কেটে যায়।
দালালচক্র সম্পর্কে হাসপাতালগুলিকে প্রশ্ন করা হলে সন্তোষজনক উত্তর মেলে না। সকলের বক্তব্যই এক। তা হল, এ সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব পুলিশের। আবার পুলিশ বলে, এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ না পেলে তাদেরও কিছুই করবার নেই।
জয়ন্ত ভট্টাচার্য, পাণ্ডাপাড়া, জলপাইগুড়ি।
|
কোচবিহার জেলার প্রান্তিক ব্লক হলদিবাড়ি। মেখলিগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত এই ব্লক ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এবং একটি পুরসভা নিয়ে গঠিত। আয়তন ১৫০.৯৩ বর্গকিমি. জনসংখ্যা দেড় লক্ষের কাছাকাছি। স্বাস্থ্যদফতরের ২০০৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ১,১৮,৭৯৪ জন। অথচ এই বিপুল জনসংখ্যার চিকিৎসার জন্য রয়েছে একটি মাত্র গ্রামীণ হাসপাতালহলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল। এটি হলদিবাড়ি শহরে অবস্থিত। কোনও গ্রামীণ এলাকায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র হওয়া উচিত ছিল। এই গ্রামীণ হাসপাতালের অধীনে রয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আঙুলদেখা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হুদুমডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা মাত্র ৩০টি। এই হাসপাতালের উপর শুধু হলদিবাড়ি ব্লকের মানুষই নির্ভর করে না, নির্ভর করে জলপাইগুড়ি জেলার মালকানি, বোনাপাড়া, সাতকুড়া, মানিকগঞ্জ, খয়েরবাড়ি, বোয়ালমারি, ঘুঘুডাঙা, দক্ষিণ বেরুবাড়ি, মণ্ডলঘাটের বিপুল মানুষ। স্বাস্থ্যদফতরের হিসাব অনুযায়ী ১,২৪,০০০ জন। অর্থাৎ হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি। এই হাসপাতাল স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরিত হওয়ার দাবি রাখে। হলদিবাড়িবাসী এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন আবেদন-নিবেদন করলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্যদফতর থেকে। মানুষ প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে। এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অপারেশন থিয়েটার চালু হয়। কিন্তু কোনও সার্জেন নেই। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অপারেশন থিয়েটার। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। এই ব্লকের বেশিরভাগ মানুষই গরিব। গর্ভবতী মায়েদের সিজারের জন্য এখানকার মানুষকে দৌড়াতে হয় হাজার হাজার টাকা খরচ করে নার্সিংহোমে। সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করাতে মানুষ ভয় পায়। পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য এখানকার ডাক্তাররা রেফার করতে বাধ্য হন। এই হাসপাতালে ৯ জন ডাক্তার থাকার কথা, সেখানে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কোনও ভাবে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। নার্সের অভাবও রয়েছে। আরও বেড দরকার। বেড অল্প থাকায় রোগীরা বারান্দায় বা মেঝেতে ভর্তি থাকে। এখানকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। দেওয়ালে, মেঝেতে পানের পিক, বহুদিনের দাগ লেগেই আছে। জানালার কাচ ভাঙা। মেঝে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। হাসপাতালের চারপাশ জঙ্গলে ঢাকা। আবর্জনা যত্রতত্র। মশা-মাছির আঁতুরঘর। রক্ত, কফ-থুতু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদের ঘুরতে হয় রিপোর্টের জন্য। এক্স-রে প্লেটের অভাবে বন্ধ এক্স-রে। এই চিত্র আজকের নয়, গত কয়েক দশকের! মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিতে নজর দিয়েছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমস্ত হলদিবাড়িবাসীর পক্ষ থেকে অনুরোধ, সরেজমিনে তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হোক। তা হলেই পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটবে।
আব্দুল জলিল সরকার,
হলদিবাড়ি, কোচবিহার।
|
ক্রমেই শহরে দূষণ ছড়াচ্ছে।
নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আবর্জনার পচা গন্ধে। দিনহাটা পুর নাগরিকদের অভিযোগ সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। কোচবিহার জেলার অন্যতম এই পুরসভার পরিষেবার এই হাল দেখে জনগণ ক্ষুব্ধ। নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের তোয়াক্কা না-করে শহরের মাঝখানে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ডাম্পিং গ্রাউন্ড দেখে অবাক হতে হয়। অথচ শহরের বাইরে প্রচুর জায়গা রয়েছে আবর্জনা ফেলার। কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিন।
শুভাশিস দাশ, দিনহাটা।
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করে। |
|