চোর সন্দেহে বনগাঁর বাবুপাড়ার এক তরুণকে স্থানীয় বক্সি পল্লি এলাকায় পিটিয়ে খুনের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে বীরু রামফোঁড় (১৮) নামে ওই তরুণকে বক্সি পল্লিতে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম অবস্থায় রেললাইনের কাছে ফেলে রাখা হয়। শনিবার সকালে পরিচিত এক যুবক বীরুকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেন। বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে শনিবার সকালে বীরু মারা যান। বীরুর দাদা বিনোদ থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ তদন্তে নেমে বক্সি পল্লিরই বাসিন্দা উত্তম গায়েন, শ্যামল সাহা এবং মিহির বালা নামে তিন যুবককে গ্রেফতার করে। যদিও ঘটনাটি রেল পুলিশের এলাকায় হয়েছে, এই দাবি করে বনগাঁ থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ। রেল পুলিশ অবশ্য পরে জানায়, ঘটনাটি তাদের এলাকার নয়।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ব্যাটারি চুরি করেছে সন্দেহে বীরুকে মারধর করা হয়। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
বনগাঁ থানা জানিয়েছে, বীরুর বিরুদ্ধে কোনও চুরির অভিযোগ নেই। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরু কাঠ পালিশের কাজ করতেন। তাঁর মা লক্ষ্মীদেবী জানান, তিন ছেলের মধ্যে বীরু মেজো। শুক্রবার রাত ১২টার সময়ে তিনি ঘরে ঘুমোতে চলে যান। তার পরে কী হয়েছিল, তা তাঁরা জানেন না। সকালে উঠে ছেলেকে খুঁজে পাননি। পরে গুরুতর জখম অবস্থায় ছেলেকে বাড়িতে আনা হয়। ছেলে তাঁদের জানিয়েছে, বক্সি পল্লিতে তাঁকে মারধর করা হয়। প্রসঙ্গত, ওই এলাকায় কিছু দিন ধরে বিভিন্ন গাড়ি থেকে ব্যাটারি চুরি হচ্ছে।
পুলিশের উপরে ভরসা রাখতে না পেরেই এই গণপিটুনির ঘটনা বলে মনে করছেন ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ফলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বস্তুত, বনগাঁ থানা এলাকায় চুরি-ডাকাতি, খুন, বোমাবাজি, গুলি চালানোর ঘটনা বেড়েই চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। দুষ্কৃতীরা এখন আর পুলিশকে ভয় পাচ্ছে না। দিন কয়েক আগে ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েত অফিসে কম্পিউটার চুরির ঘটনার তদন্তে গেলে পুলিশকে আটকে রাখা হয়। আইসি জাফর আলমকে কটূক্তি করা হয় তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভও হয়। তার আগে হরিদাসপুর এলাকায় একটি খুনের ঘটনার তদন্তে গিয়েও কটূক্তি শুনতে হয় আইসি-কে।
পুলিশ সুপার অবশ্য দাবি করেছেন, আগের ঘটনাগুলিতে জড়িতদের বিষয়ে কিছু তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। তাদের গ্রেফতার করতে জোর তল্লাশি চলছে। |