|
|
|
|
তৃণমূলে আস্থা নেই, ক্ষোভ বাড়ছে কাজহারাদের |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজে না। পেটের ভাতও জোগাড় হয় না। এবিজি থেকে সদ্য কাজ হারানো প্রায় সাড়ে তিনশো শ্রমিক তাই ভরসা রাখতে পারছেন না তৃণমূল নেতাদের কথায়।
হলদিয়া ছেড়েছে এবিজি। শনিবারই ৩৪৮ জন শ্রমিকের মোবাইলে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার এসএমস-বার্তা আসে। নিশ্চিত হয়ে যায় এঁরা সকলেই কাজ হারাচ্ছেন। আর তারপর থেকেই আশঙ্কা আর দোলাচলে দিন কাটছে সুতাহাটায় অবস্থানরত এই সব শ্রমিকদের। তৃণমূল নেতারা যদিও গোড়া থেকেই বলে আসছেন, কাজ হারানো সব শ্রমিকের দায়িত্ব তাঁদের। শুক্রবার রানিচকের সভাতেও তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী জোর গলায় বলেছেন, “কাজ হারানো শ্রমিকদের পেট ভরে দিতে পারব।” কিন্তু কী ভাবে, বলেননি সাংসদ। কোনও তৃণমূল নেতাও সুতাহাটার অবস্থান মঞ্চের ধারেকাছে আসেননি। আসেননি ঝটিতি সফরে হলদিয়ায় আসা তৃণমূলপন্থী প্রতিনিধিরাও। আর তাতেই শ্রমিকদের আশঙ্কা বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে।
সুতাহাটায় অবস্থানরত করিম খান, মহম্মদ আফতাব আলমেরা বলেন, “অনেক আশা ছিল পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী লোকের চক্রান্তে আমরাও বেকার
হয়ে গেলাম। সাংসদ শুভন্দু অধিকারী ভাতের দায়িত্ব নেবেন বলেছেন। আমরা বোধ হয় সেই প্রতিশ্রুতি
থেকে বাদ পড়ে গিয়েছি।” সদ্য কাজ হারানো আর এক শ্রমিক মন্টু মান্নার কথায়, “ও সব শুকনো প্রতিশ্রুতি। যদি দায়িত্বই নেবেন, তবে
এখনও ওঁদের কেউ এখানে এলেন
না কেন?”
২০১০ সাল থেকে হলদিয়া বন্দরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের কাজ করত এবিজি। গত সেপ্টেম্বরে সংস্থা ২৭৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করার পরই অচলাবস্থা শুরু হয়। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন (আইএনটিটিইউসি) এবিজি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। দুই ও আট নম্বর বার্থে এবিজি’কে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়। রানিচকে মঞ্চ বেঁধে অবস্থানেও বসেন ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা।
সুতাহাটার পাশাপাশি সেই অবস্থান এখনও চলছে। আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব ভরসা দিচ্ছেন সব শ্রমিকের জন্য তাঁরা লড়ছেন। সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে বরাবরই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ছাঁটাই হওয়া এবং এবিজি চলে
যাওয়ায় কাজ হারানো সব শ্রমিককেই আমরা কাজে পুনর্বহাল করব।” তাহলে সুতাহাটায় অবস্থানরত শ্রমিকদের কাছে কেউ যাচ্ছে না
কেন? শিবনাথবাবুর মতে, “আমাদের পক্ষে কে, কোথায় অবস্থান করছে জানা সম্ভব নয়। এ বার জানলাম। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনা করব।” শুভেন্দু এ দিনও ফোন ধরেননি। ‘তৃণমূলপন্থী প্রতিনিধিদের’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এবিজি থেকে কাজ হারানো শ্রমিকেরা। ‘হাই পাওয়ার কমিটি ফর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম’ নাম নিয়ে ওই প্রতিনিধিরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবারই হলদিয়ায় এসেছিলেন। রানিচকে গিয়ে ছাঁটাই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। জানতে চান শ্রমিকদের সঙ্কটের কথা। তবে ওই বিশিষ্টজনেরাও সুতাহাটায় অবস্থানরত শ্রমিকদের কাছে যাননি। এতে ক্ষুব্ধ নূর আলম, শেখ সিরাজরা বলছেন, “আমরাও তৃণমূল করতাম। কিন্তু পেটে টান পড়ায় বিক্ষোভ করছি। ওঁরা আসবেন শুনে ভেবেছিলাম, সব কথা খুলে বলব। বুঝতে পারিনি, ওঁরা আসলে নাটক করতে এসেছেন।” এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলপন্থী যে প্রতিনিধি দল সে দিন হলদিয়া এসেছিলেন, তাঁদের এক জন বলেন, “সময়ের অভাবে আমরা সুতাহাটায় যেতে পারিনি। তবে আমাদের একজন প্রতিনিধি সেখানে গিয়ে দেখেছেন ৩৮ জন মতো রয়েছে।” এ দিনও অবশ্য সুতাহাটার অবস্থান মঞ্চে দুই শতাধিক শ্রমিককে দেখা গিয়েছে।
|
|
|
|
|
|