বাগানের আকাশে নক্ষত্র ওডাফা
মোহনবাগান-৩ (ওডাফা-হ্যাটট্রিক)
স্পোর্টিং ক্লুব-১ (পেরিরা)
‘গোল হচ্ছে না’-র অভিশাপ মুছতে সোজা হ্যাটট্রিকের মহাসাগরে ঝাঁপ ওডাফা ওকোলির!
‘পারছি না’-র লৌহকপাট ভেঙে ঘরের মাঠে ওডাফা গোলের মধ্যে ঢুকতে পারেন কি না তা নিয়ে স্থানীয় ফুটবলমহলের সেই স্বার্থপর কৌতূহল, যা বলে ক্লাবের আগে ব্যক্তি। দলের আগে মহাতারকা। ঔৎসুক্যের ঝাঁপি খুলে যাঁরা যুবভারতীতে জমাট বেঁধেছিলেন, তাঁদের কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর তিন ধাপে ভেঙে দিলেন ওডাফা। তিনটে চমকপ্রদ গোলের মধ্য দিয়ে।
প্রথম ধাপ১৫ মিনিটে ফুটে উঠল বিষাক্ত ফ্রি-কিক নেওয়ার দক্ষতা। সামনে চওড়া মানবপ্রাচীর। সেই দেওয়াল টপকে নাইজিরিয়ানের ডান পায়ের ইনস্টেপে নেওয়া বাঁক খাওয়ানো শট জড়িয়ে গেল জালে।
দ্বিতীয় ধাপ৪২ মিনিটে বক্সের ভেতর উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয়, যেটা স্ট্রাইকারদের মূলধন। বিপক্ষের আদিল ব্যাকহেড করে স্নেহাশিসের কর্নার ক্লিয়ার করতে গেলে বল পড়ল ওডাফার পায়ে। গোললাইনে বুটের জঙ্গলের মধ্যেও পথ বার করে নিয়ে মোহন অধিনায়কের ঠান্ডা মাথায় ২-০ করা।
তৃতীয় ধাপ৫৫ মিনিটে দেখালেন, জোঁকের মতো পায়ে বল জমিয়ে অসাধারণ সোলো রান-এ গোল করার ক্ষমতা। তিন ডিফেন্ডারকে কাঁধে নিয়ে সূক্ষ্ম টোকায় হ্যাটট্রিক। যেন ক্যানভাসে তুলির টান!
আরও তিনটে ধাপ যোগ হতে পারত, যদি একশো শতাংশ ফিট থাকতেন ওডাফা। নিজের মুখে স্বীকার না করলেও, তাঁর গোল নষ্টের ধরন থেকে কিন্তু অন্য ছবিই ফুটে উঠল। পায়ে-পায়ে বল জড়িয়ে একবার ‘একের বিরুদ্ধে এক’ নষ্ট। বিরতির ঠিক পরে নির্মলের ক্রসে সময় মতো হেড দিতে না পারা। আর একবার দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলকিপারের পাশ দিয়ে ওডাফার শট পোস্টের গা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। তবে সহকারী কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সিনেমায় এক জনই নায়ক হয়। ওডাফা তেমনই মোহনবাগানের নায়ক।”
যতই ওডাফার হ্যাটট্রিকে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়ে যাক, আই লিগের শুরুতেই ছ’পয়েন্ট হারানো মোহনবাগান ঘাটতি মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত কত উদ্বৃত্ত করতে পারে, সেটাই দেখার। এই সময় অনেক পেশাদারজীবন ভাঙবে-গড়বে। অনেক খ্যাতিমানের পুনর্মূল্যায়ন হবে। তালিকায় প্রথম নাম ইচে। রবিবারের আর একটা ব্যর্থতা বাগানের বিদেশি ডিফেন্ডারের ফুটবলজীবনের উপর লাভাস্রোত ঢেলে দিতে পারত। কিন্তু এ দিন অনেকটাই পরিণত দেখাল ইচেকে। শুধুই জায়গায় দাঁড়িয়ে বল বাড়ানোর একঘেয়েমি কাটিয়ে বল নিয়ে উঠতেও দেখা গেল তাঁকে। নিটফল, বাগানের মাঝমাঠ আর রক্ষণের মধ্যে দূরত্ব কমে যাওয়া।
নব্বই মিনিটই বুদ্ধি করে ব্যবহার করা হল স্ট্যানলিকে। ওডাফার দেশোয়ালির মধ্যে প্রকৃত স্ট্রাইকারের কোনও লক্ষণ নেই, সেটা আর গোপন নয়। রবিবার তাই তাঁকে মাঝমাঠের একটা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে খেলতে দেখা গেল। কখনও ইচে-আইবরদের সাহায্যে নেমে আসছেন রক্ষণে, কখনও ওডাফাকে বল সাপ্লাইয়ের লক্ষ্যে উঠে গেলেন আক্রমণে। স্পোর্টিংয়ের চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টিকর্তা এ দিন স্ট্যানলি-ই। কালুদের কোচ একেন্দ্র সিংহ বললেন, “ফুটবল হল স্ট্র্যাটেজির খেলা। মোহনবাগানের কাছে ওখানেই হেরে গেলাম।”
ওডাফাদের স্ট্র্যাটেজির যা ঝনঝনানি হল, তা সুদুরপ্রসারী প্রভাব তৈরি করতে পারে পরবর্তী ম্যাচগুলোর উপর। মোহনবাগান যে পাসিং ফুটবলের মডেল তৈরি এবং প্রয়োগে এত সফল হবে, সেটা ম্যাচের আগের দিন ফুটবলারদের ‘হতে পারে’ আর ‘দেখা যাক’-এ ফুটে ওঠেনি। কিন্তু ম্যাচে মৃদুল এমন মিডফিল্ড সাজিয়েছিলেন আর নবি-ডেনসনরা এত নিখুঁত ফাইনাল পাস খেললেন, কালুদের গতি বাড়িয়ে খেলার সিস্টেমই গোঁত্তা খেয়ে পড়ল। চিন্তা বলতে শুধু মণীশ মৈথানির গোড়ালির চোট।
বাগানের ফুরফুরে হাওয়ার মধ্যে গুমোট ব্যাপার একটাইপ্রায় সব ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করার বদভ্যাস। রবিবারও ইনজুরি টাইমে জো পেরিরার গোল। আইবরদের ক্লান্তি? মনঃসংযোগের অভাব? যত তাড়াতাড়ি উত্তর খুঁজে পাবেন ওডাফারা, ততই আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে বাগানের আকাশ।

মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, আইবর, ইচে, বিশ্বজিৎ, স্নেহাশিস (ভার্গব), মৈথানি (জুয়েল), ডেনসন (রাকেশ), নবি, স্ট্যানলি, ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.