আস্থা নেই পর্ষদের কাজে
শব্দদৈত্য বধে ফের সচেষ্ট নাগরিকেরাই
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে আস্থা হারিয়ে কালীপুজোয় শব্দবাজির উপরে নজরদারি বাড়াচ্ছে নাগরিক উদ্যোগ। দুর্গাপুজো এবং লক্ষ্মীপুজোয় বিভিন্ন জায়গায় অবাধে শব্দবাজি ফাটার পরে পরিবেশকর্মী ও পরিবেশ সংগঠনগুলির সম্মিলিত উদ্যোগ ‘সবুজ মঞ্চ’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর তারা যে নজরদারি শুরু করেছিল, এ বছর তারই পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ অবশ্য জানায়, কালীপুজোয় ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দের বাজি নিষিদ্ধ করতে কলকাতা শহরে লাগাতার প্রচার চলবে। সচেতনতার প্রচারে বিভিন্ন আবাসনে পোস্টারও বিলি হবে। নিয়ম মাফিক এ বছরও নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো সংক্রান্ত অভিযোগ এলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বছর উত্তর কলকাতা ও শহরতলি, দক্ষিণ কলকাতা ও বেহালা, হাওড়া এবং সল্টলেকে সবুজ মঞ্চের মোট চারটি দল নজরদারি চালাবে। তা ছাড়া, হাসপাতালগুলির উপরে বিশেষ নজর রাখা হবে বলে জানান মঞ্চের আহ্বায়ক, পরিবেশকর্মী নব দত্ত। তিনি জানান, ঘোষিত ‘সাইলেন্স জোন’ হওয়া সত্ত্বেও ফি-বছর প্রায় সব হাসপাতাল চত্বরেই শব্দবাজির তাণ্ডব চলে।

আলাপ-আলোচনা: কালীপুজো নিয়ে বহুতলের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
গত বছর দীপাবলিতে কলকাতা ও শহরতলিতে নজরদারির পরে সবুজ মঞ্চ ভেবেছিল, এই উদ্যোগের পরে এ বছর পর্ষদ শব্দবাজি রোধে আরও কড়া হবে। নববাবুর অভিযোগ, পর্ষদ উল্টে তার অবস্থান আরও শিথিল করেছে। তিনি বলেন, “হাবড়া, বারাসত এবং হাওড়ায় পুজোর আগেই বাজারে প্রচুর নিষিদ্ধ শব্দবাজি পৌঁছে গিয়েছে। তা কলকাতা এবং শহরতলির বাজারেও এসে গিয়েছে বলেই আমাদের আশঙ্কা। আমাদের অভিযোগ সত্যি প্রমাণ করে পর্ষদ এ বছর নজরদারি শিথিল করেছে।” নববাবুদের অভিযোগ, পুজোয় মাইক বাজানো এবং শব্দবাজি নিয়ে বহু অভিযোগ এসেছে। হাওড়ার একটি নার্সিংহোম থেকেও অভিযোগ আসে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই পর্ষদ জানা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
সবুজ মঞ্চের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “এ বছর দুর্গাপুজোয় মাইক বা শব্দবাজির কোনও উপদ্রব ছিল না। মাইক বাজানো নিয়ে মাত্র একটিই অভিযোগ পেয়েছি। শব্দবাজির কোনও অভিযোগই আসেনি।” একে তিনি পর্ষদের ‘বড় সাফল্য’ হিসেবেই দেখছেন।
নববাবুর পাল্টা অভিযোগ, বিনয়বাবু সত্য গোপন করছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই, প্রতিটি অভিযোগ নথিভুক্ত করে ডকেট নাম্বার দিক পর্ষদ। তা হলে আর বিভ্রান্তি হবে না।”
শব্দবাজির তাণ্ডব রোধে দুর্গাপুজোর অন্তত তিন মাস আগে থেকে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও মুর্শিদাবাদের বাজি কারখানাগুলিতে হানা দেওয়া হত অন্যান্য বছর। অভিযোগ, এ বছর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অভিযান চালায়নি। আগাম ব্যবস্থা না নিয়ে পর্ষদ শব্দবাজি নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাতেই ব্যস্ত এই অভিযোগ করে নববাবু বলেন, “বছর বছর প্রচার চলছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে কি? হাতে আইন রয়েছে, ক্ষমতা রয়েছে, তা প্রয়োগ না করে কেবল প্রচারে যে লাভ হয় না, ফি-বছর কালীপুজোর রাতে তা মালুম হয়।”
বিনয়বাবু অবশ্য প্রচারে যথেষ্ট আস্থা রাখেন। তিনি জানান, সোমবার থেকে শহরে ১৬টি অটো নিয়ে মাইকে প্রচার চলবে। শব্দবাজির অপকারিতা বোঝাতে পর্ষদের তৈরি কিছু সিডিও বাজানো হবে। তাতে কাজ হবে কি? বিনয়বাবুর কথায়, “মানুষ সচেতন হলে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ হবে। এ বার দুর্গাপুজো এবং লক্ষ্মীপুজোতেই তার কিছুটা প্রমাণ মিলেছে।”
সবুজ মঞ্চ বিনয়বাবুর এই অভিমত মানতে নারাজ। নববাবু বলেন, “কলকাতায় এত সব নজরদারি সত্ত্বেও কালীপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডব সহনমাত্রা ছাড়ায়। তা হলে মফস্সল বা গ্রামে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হয়?” মঞ্চের দাবি, কলকাতার বাইরেও নজরদারি করতে হবে।
এই চাপান-উতোরের মধ্যেই রবিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হলে শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবাশিস রায়, ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশোক বিশ্বাস, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত-সহ বেশ কয়েক জন আধিকারিক। সেখানেই নিষিদ্ধ বাজি বন্ধে প্রচার ও পোস্টার বিলির কথা বলা হয়।
বৈঠকে দেবাশিসবাবু বলেন, “বাজি কেনার আগে দোকানটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কি না দেখে নিতে হবে। বহুতলের ছাদে বাজি না পোড়াতে আবেদন করা হচ্ছে।” পুলিশ ও পর্ষদের কর্তারা জানান, কালীপুজোয় পুলিশ ও পর্ষদের ২০০টি দল শহরে ঘুরবে। গল্ফগ্রিনের এক আবাসনের প্রতিনিধি তপনকুমার দাস বলেন, “আমরা সচেতনতার পোস্টার নিয়ে নিয়েছি।” যদিও বৈঠকের পরে আবাসনের প্রতিনিধিদের একাংশের অভিযোগ, তাদের তরফের কোনও বক্তব্য শোনা হয়নি। দেওয়া হয়নি নিষিদ্ধ বাজির তালিকাও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.