রাজনীতিকে ব্রাত্য করে প্রতিবাদ সুনীল-স্মরণে
রাজনীতিকদের আমন্ত্রণ নেই, জানত জনতা। রবিবার সন্ধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মরণসভা উপলক্ষে রবীন্দ্রসদনে সেই জনতার ভিড়ই বুঝিয়ে দিল, জীবনের সব ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপ তাদের পছন্দ নয়। যে রাজ্যে ডকে জাহাজ আসবে কি না থেকে সিনেমা হলে কোন ছবি চলবে, সবই রাজনীতিকরা নিয়ন্ত্রণ করেন, কবির স্মরণসভায় সেই রাজ্যের সাধারণ মানুষই নীরবে প্রতিবাদ জানাল রাজনীতির ওই প্রবণতার বিরুদ্ধে।
প্রায় ১১০০ আসনের রবীন্দ্রসদনের সামনে এ দিন বিকেলে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের ভিড়। ভিতরে ঢুকতে না পেরে অনেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবু ভিড় ছিল সুশৃঙ্খল, সারিবদ্ধ। মানুষ নিজেই লাইন করে দাঁড়িয়েছে, পায়ে পায়ে এগিয়েছে। জনতা নীরবে বুঝিয়েছে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে ভিড় ‘কন্ট্রোল’ করার জন্য অযাচিত ভাবে নেতানেত্রীদের আসার দরকার নেই।
স্মৃতিচারণায় শীর্ষেন্দু। —নিজস্ব চিত্র
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম অবশ্য এটিকে সার্বিক ভাবে রাজনীতির প্রতি অনাস্থা ভাবতে নারাজ। তাঁর মতে, ‘এটি একটি প্রবণতার বিরুদ্ধে বার্তা।’ তাঁর বক্তব্য, ‘সুনীলবাবুর শেষ যাত্রায় যেমন দেখা গিয়েছিল, ওই রাজনৈতিক দখলদারির প্রবণতার বিরুদ্ধে সুনীল-অনুরাগীরা হয়তো বার্তা দিতে চেয়েছেন।’ বার্তাটিকে এড়িয়ে যেতে পারছেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও, “ওঁর শেষ যাত্রায় রাজনীতির অনেকেই অনধিকার চর্চা করেন। তাই হয়তো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল অনেকের মনে হয়েছে, এর মধ্যে রাজনীতি না ঢুকলেই ভাল।”
কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েই তো শুরু নয়। নেতানেত্রীদের প্রতি অনীহা আজকের নয়। নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পর বাম সরকারকে ধিক্কার দিয়ে শঙ্খ ঘোষ, অপর্ণা সেন, জয় গোস্বামী এবং আরও অনেকে মিছিলে হেঁটেছিলেন। তাতে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও আসার কথা ছিল। কিন্তু শঙ্খ ঘোষ এবং কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, রাজনীতিকরা থাকলে তাঁরা হাঁটবেন না। বাধ্য হয়ে সেই মিছিলে মমতা যাননি।
জমানা বদলের পর, রাজনীতিকদের প্রতি অনীহা বেড়েছে বই কমেনি। নন্দীগ্রাম-মিছিলে থাকা নাট্যকার সুমন মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এই স্মরণসভায় কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়া নেই জেনেই মানুষ স্বচ্ছন্দে ভিড় করেছেন।” গত মাসে নাট্যকর্মী বিমল চক্রবর্তীর উপর আক্রমণের প্রতিবাদ জানাতে অ্যাকাডেমির সামনে একটি সভায় ছিলেন সুমন। হাল আমলের রাজনীতি সেই প্রতিবাদী সভাকেও ঘুলিয়ে দিয়েছিল। কয়েক দিন পর সেই সভার বিরুদ্ধে তৃণমূলপন্থী বিদ্বজ্জনদের পাল্টা সভা ডাকা হয়।
কৃত্তিবাস পত্রিকা ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিজনদের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের স্মরণসভা এই রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের খপ্পর থেকেই নিজেকে মুক্ত রাখতে চেয়েছিল। ফলে, গত সপ্তাহ থেকে তারা বারংবার জানিয়েছে, এই সভায় রাজনীতিকদের আমন্ত্রণ নেই। তাঁরা এলে স্বেচ্ছায় আসতে পারেন। কিন্তু ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ না থাকলে নেতারা যাবেন কোন দুঃখে? বাম এবং ডান দু’পক্ষের কোনও নেতাকেই এ দিন তাই দূরবীণ দিয়েও রবীন্দ্রসদনে দেখা যায়নি। ব্যতিক্রম এক জন। দর্শকাসনে লেখক শংকরের পাশেই বসে ছিলেন অসীম চট্টোপাধ্যায় (কাকা)। ভিড় দেখে তাঁরও মনে হয়েছে, “এটি ক্ষমতার রাজনীতিকদের প্রতি মানুষের নীরব প্রতিবাদ।”
ক্ষমতার রাজনীতিকরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মুকুল রায়ের মন্তব্য, “আনন্দবাজার-ই পিছন থেকে রাজনীতি করছে। ওরা বরং সরাসরি সামনে এসে রাজনীতি করুক।”
কিন্তু যে দর্শকরা রবীন্দ্রসদনে ভিড় করে সুনীল-স্মরণ দেখলেন? যাঁরা ভিতরে জায়গা না পেয়ে হলের বাইরে স্ক্রিনের সামনে ভিড় করে দাঁড়ালেন?
লোরকার মৃত্যু নিয়ে ‘কবির মৃত্যু’ কবিতায় একদা ‘মিলিত মানুষ ও প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব বিপ্লব’-এর কথা লিখেছিলেন সুনীল। রবিবারে কবির স্মরণসভা দেখাল, মানুষের সেই নিঃশব্দ, নিজস্ব বিপ্লবে রাজনীতিকদের প্রবেশাধিকার নেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.