সন্ধেবেলায় বাড়ির সামনে পায়চারি করতে বেরিয়েছিলেন মা। লাগোয়া বইয়ের দোকান থেকে সেই সুযোগে বাবাকে ডেকে নিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেটি। তারপর রান্নাঘর থেকে সব্জি কাটার ধারাল ছুরি দিয়ে নিমেষে কেটে দিয়েছিল তাঁর গলা।
রান্নাঘরের পিছনে রক্তমাখা ছুরিটা ফেলে দিয়ে গল্প ফেঁদে ছিল সে‘দুষ্কৃতীরা এসে বাবাকে খুন করে গিয়েছে।’ ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য করতে নিজের হাতেও ছুরির আঁচড় কেটে নেয় সে। তবে তার ‘সাজানো নাটক’ ভেঙে পড়ে পুলিশের জেরায়। শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনা শেষ পর্যন্ত কবুল করে সে। চিৎকার করে জানায়, “বাবাকে খুন করেছি আমি-ই!”
কিন্তু মাদারিহাটের ওই প্রাথমিক শিক্ষককে খুন করল কেন তাঁর ছেলে? স্কুলে কিংবা পাড়ায় ‘ভাল ছেলে’ বলেই পরিচিত মাদারিহাট হাইস্কুলের ওই ছাত্র। দু’বছর আগে মাধ্যমিকে স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছিল সে। পড়তে চেয়েছিল ইংরাজি নিয়ে। পুলিশ জানিয়েছে সে সময় তার কিঞ্চিৎ মাদকাসক্তিরও ইঙ্গিত পেয়েছে তারা। কিন্তু বাবার অনুশাসনে তার ইংরাজি পড়াই শুধু নয়, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খেলাধুলা, বন্ধু-সঙ্গও। ছেলে যাতে কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে না পারে তাই সতেরো বছরের ছেলেকে নিজেই বাইকে চাপিয়ে মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গৃহশিক্ষকের বাড়িতেও নিয়মিত নিয়ে যেতেন ওই শিক্ষক। গিটার বা তবলা শিক্ষকের কাছেও নিজে যাওয়ার স্বাধীনতা ছিল না ওই ছাত্রের। পড়শিরা জানান, পুজোর সময়েও বাবা-মা’র হাত ধরেই ছেলেকে পুজো দেখতে হয়েছিল। এক পড়শি বলেন, “বাবার শাসন মাত্রা ছাড়িয়েছিল। রোজই শুনতাম ছেলেকে বকছেন দেবব্রতবাবু। বাবার উপরে ক্রমেই রাগ জমছিল তার।” তার জেরেই কী খুন?
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, উচ্চ মাধ্যমিকে তার ইচ্ছেমতো বিষয়ে পড়তে না দেওয়া থেকেই বাবার উপরে ক্রোধ জন্মেছিল তার। দিনের কোনও সময়েই তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না। পড়ার জন্য বকতেন। বাবার সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তার।”
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক আশিস সরকারের মত, “যে সময়ে তার মনের বিকাশ ঘটছে, সে সময়েই তাকে যদি বার বার বাধা দেওয়া হয়, তাতে মানসিক প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা অবচেতনে শত্রু হয়ে যায়। ছেলেটি ভাবতে শুরু করে শত্রুকে সরিয়ে দিলে সে স্বাধীন থাকতে পারবে। সম্ভবত এ থেকেই খুনের রাস্তা বেছে নেয় সে।” |