চিকিৎসায় গাফিলতিতে ছাত্রী-মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মৃত ছাত্রী পূজা বর্মনের বাবা ও মা’র দাবি, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে দেহ ময়নাতদন্ত করানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তা শোনেননি বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে মেয়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন তথা নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “অভিযোগ গুরুতর। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিশদ রিপোর্ট চেয়েছি।”
কেন ওই ছাত্রীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়নি? জবাবে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র বলেন, “ময়নাতদন্ত করানোর দাবি উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু ওই ছাত্রী তো খুন হয়নি। খুন হলে কিংবা পুলিশ মামলা করলে অবশ্যই ময়নাতদন্ত হত। তা ছাড়া অভিযোগ ছিল, চিকিৎসার গাফিলতির। সে ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হয় না।”
পুরাতন মালদহের মির্জাপুরের বাচামারি কলোনির নিরঞ্জন বর্মনের বড় ছেলে গত মঙ্গলবার জ্বর ও পেটের ব্যাথা নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। জ্বর নিয়ে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হয় ছোট মেয়ে পূজা। বৃহস্পতিবার সকালে পূজা মারা যায়। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “ভর্তির পর মেয়ের জ্বর কমে গিয়েছিল। রাতে পেটে ব্যাথা শুরু হয়। নার্সদের বলেছিলাম ডাক্তারবাবুকে ডাকতে, মেয়েকে ওষুধ দিতে। নার্সরা কথা শোনেননি। ভোরে এক নার্স মেয়েকে একটা ইঞ্জেকশন দেন। কিছুক্ষণ পর মেয়ে মারা যায়।”
পুলিশে কাছে কেন অভিযোগ জানাননি? নিরঞ্জনবাবু বলেন, “এখনও বড় ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে ওঁরা ছেলেকে না দেখে কলকাতায় রেফার করলে কী করব? আমরা গরিব। কী ভাবে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাব। এই ভয়ে অভিযোগ জানাইনি।”
উজ্জ্বলবাবু জানান, ওই ছাত্রীর গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের কাছে বাড়ির লোক অভিযোগ করতেই পারেন। সে জন্য তার ভাইয়ের চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হবে না বলে তিনি নিরঞ্জনবাবুদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর রক্তে সংক্রমণ হয়েছিল। ওই দিন ছাত্রীটিকে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। তাতে কারও মৃত্যু হতে পারে না। সেপ্টিসিমিয়ায় ছাত্রীটির মৃত্যু হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। তা পাওয়ার পরে গাফিলতির বিষয়ে স্পষ্ট বলা সম্ভব।” |