ফেসবুকে কেউ তাঁর নামে ভুয়ো প্রোফাইল খুলেছে, এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশে জানাতে গিয়েছিলেন এক তরুণী।
অভিযোগ, এফআইআর দায়ের করার বদলে সাধারণ জেনারেল ডায়েরি করেই তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কর্তব্যরত অফিসার। এর পরে উচ্চকর্তাদের হস্তক্ষেপে এফআইআর দায়ের করা হলেও তার প্রতিলিপি পেতে চার মাস অপেক্ষা করতে হল অভিযোগকারিণীকে।
এই চার মাসে তদন্তের ব্যাপারে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। সম্প্রতি বারাসত থানার বিরুদ্ধে এমনই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।
কী হয়েছিল অভিযোগকারিণীর সঙ্গে?
বারাসতের বাসিন্দা ওই তরুণী কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত জুন মাসে তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার একটি ফেসবুক প্রোফাইল খোলা হয়েছে। সেখানে একের পর এক অশ্লীল ছবি ‘আপলোড’ করা হচ্ছে। এর পরই বিষয়টি তিনি বারাসত থানায় জানাতে যান। তাঁর অভিযোগ, বারাসত থানার কর্তব্যরত অফিসার তাঁর অভিযোগ নিতে চাননি। পরে একটি জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরই ওই তরুণী ফেসবুক মারফৎ কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগকারিণীর কথায়, “কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখার ফেসবুক প্রোফাইলে বিষয়টি জানালে, এক গোয়েন্দা কর্তা আমাকে এফআইআর দায়ের করতে বলেন। পরে জুন মাসের ২৭ তারিখে বারাসত থানা থেকে আমার বাড়িতে এসে এফআইআর নিয়ে যাওয়া হয়।” এর পর তিনি ভবানীভবনে সিআইডি-র সাইবার অপরাধ শাখাতেও দেখা করেন।
তরুণীর অভিযোগ, এফআইআর দায়ের করার পর প্রতিলিপি দেওয়া তো দূর অস্ৎ, তদন্তের কাজও কিছুই এগোয়নি। মাস চারেক পরেও প্রতিলিপি না পেয়ে ওই তরুণী শেষ পর্যন্ত উকিলের দ্বারস্থ হন। উকিলের সহায়তায় বারাসত থানার আইসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই তরুণী ওই প্রতিলিপি হাতে পান বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, “চার মাস পরেও পুলিশ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।”
যদিও এ বিষয়টি স্বীকার করতে চায়নি পুলিশ। তাঁদের দাবি, ওই তরুণীর অভিযোগপত্রে এফআইআর-এর তথ্য লিখে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এফআইআর-এর ক্ষেত্রে এ ভাবে দায় ঝেড়ে ফেলা যায় না। এফআইআর-এর প্রতিলিপি অভিযোগকারিণীর প্রাপ্য ছিল। তিনি বিষয়টি না জানলেও পুলিশেরই কর্তব্য তাঁকে বিষয়টি জানানো।
একই সঙ্গে প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতিও মানতে চায়নি জেলা পুলিশ। একটি সূত্রের দাবি, বারাসত থানা বিষয়টি নিয়ে সিআইডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। প্রাথমিক ভাবে তদন্তের কাজও অনেকটা এগিয়েছে। অপরাধী শীঘ্রই ধরা পড়বে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু হয়েছে।”
যদিও এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের ‘অসহায়তা’ নতুন কিছু নয়। মাস কয়েক আগে উত্তরবঙ্গের এক মহিলা কাউন্সিলর তাঁর ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইলের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার তদন্তে নেমেও কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের তদন্তকারীরা। কেন?
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, সাইবার অপরাধের তদন্ত করার মতো পরিকাঠামো নেই জেলা পুলিশের হাতে। এক পুলিশকর্তা বলেন, রাজ্য পুলিশের আওতাধীন এলাকায় সাইবার অপরাধের তদন্ত করার জন্য সিআইডি-র সাইবার অপরাধ শাখা রয়েছে। কিন্তু জেলা পুলিশের অফিসারদের এই তদন্ত করার জন্য কোনও প্রশিক্ষণ-ই নেই। তাই এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করে, তা সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। বারাসতের তরুণীর ক্ষেত্রেও জেলা পুলিশের সঙ্গে সিআইডি বিষয়টি যৌথ ভাবে দেখছে বলে এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন। কী ভাবে ধরা যেতে পারে অপরাধীকে? সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যে কম্পিউটার ব্যবহার করে ওই ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছিল, তার ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস’ (আইপি অ্যাড্রেস) খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি, কোন দিন ওই কাজ করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করতে হবে তদন্তকারীদের। সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারটি কোনও সাইবার কাফে-র হলে সেখানে ওই দিন কারা এসেছিল, সেটাও খুঁজে বার করতে হবে গোয়েন্দাদের। এই ধাপগুলি পেরিয়েই অপরাধীকে পাকড়াও করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। |