রেশনের চাল-গম কেনার জন্য দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারকে দেওয়া কেন্দ্রের ভর্তুকি সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার কথা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই ব্যবস্থা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী এক সময় বলেছিলেন, দিল্লি থেকে ১ টাকা পাঠালে উপভোক্তার কাছে পৌঁছয় মাত্র ১৭ পয়সা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আঙুল ছিল বিতরণ ব্যবস্থার গলদ ও দূর্নীতির দিকে। সেই প্রেক্ষাপটেই ভর্তুকির টাকা সরাসরি রেশন গ্রাহকদের কাছে পাঠিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্র। কারণ দিল্লিও মনে করে, এর ফলে ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সরকারি কর্মীদের ‘অশুভ আঁতাত’ ভাঙা যাবে। পাশাপাশি, ভুতুড়ে রেশন কার্ডধারীদের ছেঁটে ফেলা এবং ভর্তুকি কমানো যাবে। কেন্দ্রের বক্তব্য, ব্যাঙ্কে জমা পড়া টাকা দিয়ে যেমন গ্রাহকরা রেশন দোকান থেকে চাল-গম কিনতে পারবেন, তেমনই অন্য খাতেও ওই অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজ্য সরকার।
কেন? কেন্দ্র জানিয়েছে, ভর্তুকির টাকা পেতে ‘আধার কার্ড’-কে মানদণ্ড ধরা হবে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এ রাজ্যে দরিদ্রসীমার নীচে থাকা বেশি ভাগ মানুষই ভর্তুকির টাকা থেকে বঞ্চিত হবেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, ভর্তুকির টাকায় রেশন থেকে চাল-গম কেনা বাধ্যতামূলক না হলে রেশনে ওই দুই পণ্যের বিক্রি কমে যাবে। চাষিদের অভাবী বিক্রির প্রবণতাও বাড়তে পারে।
মন্ত্রীর কথায়, গ্রাহকদের সরাসরি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা চালু হলে খাদ্য দফতরের ১০ হাজার কর্মীর একটিই কাজ হবে, গ্রাহকের নামে প্রতি মাসে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অন্য দিকে, ২০ হাজার রেশন দোকানদার, ৩৩ হাজার কেরোসিন দোকানদার, ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার এবং রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন।
রাজ্যের এই আশঙ্কার কথা জেনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলেও রেশন দোকান উঠে যাবে না। কারণ, রেশনে চাল-গম ছাড়া অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। রেশন দোকানিদের কমিশনও বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। রাজ্যের মন্ত্রী অবশ্য তাঁর ব্যাখ্যায় অটল। তবে কেন্দ্র নতুন ব্যবস্থা কার্যকর স্থগিত রাখায় খুশি জ্যোতিপ্রিয়বাবু দাবি করেছেন, “এটা রাজ্য সরকারের জয়।” |