|
|
|
|
|
|
|
ল্যাজে পা |
স্বপন ঘোষ
|
গরুতে কেন খায়? কেন রে গরু খাস? বউ কেন ভাত দেয় না? কেন রে বউ ভাত দিসনি? বউ এখন বাঙালিয়ানার চ্যানেলে ক্রাইম টাইমে পাঁচঘেঁটুলে চচ্চড়ি চিবুচ্ছে। দামি বড়লোক, ন্যাকা ন্যাকা গ্যাঁড়া-গেঁড়ি, ভোঁদকা অভিনেতা, আর পুরো বাড়ি গ্যাদগেদে মেলো ডায়ালগ ফিঁচফাঁচ। সব চ্যানেলের একই চুলোচুলি ফ্যাঁসফেঁসে কূটকচালি এর বউ ওর ঘরে, ওর স্বামী শাশুড়ির আঁচলে। হিংসুটি ননদ, ভ্যাবলা ভাশুর। বাঙালি বাচ্চা সেলেব, ফেরেশবুক, রিংটোন, মেসেজ, বিগবাজার, মধ্যমেধা, মোমোজীবী এই প্যাকেটে সব পাবেন। ঝুরো ফনফনে দাড়ির নাট্যপরিচালক শিল্পী থেকে চার ফুটের বেঁটে লালন কলপ-করা কুচো দাড়ির চিত্রপরিচালক। আরও লিস্টি আছে। সময়মত হবে। হ্যাট হ্যাট, এই গরুর বাচ্চা না ছাগল, কী খাচ্ছিস রে? যা পাই তাই খাই, ঘুষ খাই, তোলা খাই, টু-জি খাই, কয়লা খাই, বফর্স খাই, খাবি খাই, আর রইল চ্যাট। সে দিন দিনদুপুরে বাবুদের চ্যাটপুকুরে হঠাৎ বালা চ্যাট মারে। জানো, এখন আমার শরীর খারাপ, bp আছি। এটা কি সাংকেতিক বাংলা? হ্বিটগেনস্টাইন বলতে পারত। আপাতত আমার পাশে এক জন জিন্স-টপ-ধারিণী কলিগ। হ্যাঁ রে, এর মানে কী? তুমি না... মাইরি! বি ফর ব্যান্ডেজ, বাকিটা মোটা মাথায় গুঁজে নাও। বাঙালি জন্ম থেকেই লাইনে/বেলাইনে কেরোসিন ফিল্মি ফেস্টে, বিগবাজারে, বাসে, ট্রেনে, মোমোয়, ভোটে, ডাক্তারের চেম্বারে, হাসপাতালে, মর্গে, থানায়, কোর্টে ভাত খেয়ে আঁচায় না, ছোটে বাক্যি-চচ্চড়ি গিলতে চাটতে চুষতে ও দিকে অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে, গ্রামবাসীরা সব দোর বন্ধ করে পুজো-আচ্চায় মন দিয়েছে। বিরিয়ানির হাঁড়ি থেকে রসমালাই উড়ো ফোনে বোমাতঙ্ক সবেতেই অর্জিনাল বাঙালিকে পাবেন। গুন্ডাভোগ্য জিলিপি, মাটন রোল। এই ডেঙ্গি পালাচ্ছিস কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী সজাগ হইয়াছেন। আসছে বছর আবার হবে। ইন্ডিয়াকে চিন্ডিয়া হতে কত লাখ মাইল ছুটতে হবে? সীমান্তে মেয়ে পাচার রুখতে মেয়েপুলিশ রাখলেই তো হয়! ধর্ষণ যত পাপকাজ হোক না কেন, স্বমেহনের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, কারণ যৌন মিলনের মূল লক্ষ্য সন্তান উৎপাদন। র্যান্ডি থর্নহিল আর ক্রেগ টি পামারের গবেষণা থান ইট ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব রেপ’। দমনমূলক যৌনতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজেছেন। কাকা এটা কী হল? কেন রে সরকার সেক্স হাব দিস না? জমির মালিক কেন জমি দেয় না? আজকাল কলেজের পাশে ওষুধের দোকানে কনট্রাসেপ্টিভ পিল্স পাওয়া যাচ্ছে গুরু, হেবি সেল! ও গিন্নিমা, নেবে নাকি একটা মডেল সেলেব মেয়ে, আদর করে, গা-গতরে সাবান বোলাতে পারে, চুলে ফলমূল রস করে মাখতে পারে। মিহি সুতোর ট্যানা পরতে পারে। আগের বাঙালির তবু ঘেন্নাপিত্তি ছিল। বিদেশি নাটক টুকে একটা খুদে ‘অনুপ্রাণিত’। এখন বিদেশি নাটকের বাংলা অনুবাদের স্রষ্টার পুরো লাইন বাই লাইন টুকে মহান নাট্যকার। মা লতা বাপ হাতা ছেলেগুলো সব নকশা কাটা। চিৎপুর পুরো জ্যাম, এখন হাতের কাছেই চাটু গরম শেক্সপিয়র ফাতড়া পাবেন। হায় রে হাইনে ম্যুলার! তোমার ‘হ্যামলেট মেশিন’ জার্মানি থেকে অ্যাকাডেমি পৌঁছতে কত বছর লাগবে? ভ্রমুন স্পেশালকে জিগেস করতে হবে। কত খরচ? ও দিকে চ্যানেলের প্রোডাকশন হাউস কমেডিয়ান খুঁজে পাচ্ছে না। তাই প্রোডিউসাররা ঐক্যবদ্ধ ভাবে পলিতবুড়োর জার কারাতোভস্কিকে একটা দলিল পাঠায়। দয়া করে রাজ্যের প্রতিভাবান কমেডিয়ান কমরেডদের আমাদের কাছে পাঠান।
|
|
কথা দিচ্ছি যথাসাধ্য তোলা দেব। প্যালেস্তাইন, গুয়াতেমালা, শ্রীলঙ্কা, কোকড়াঝাড়, তেহরান। মানুষ মাটি খুঁজছে একটু আশ্রয়ের জন্য। ব্রেকিং নিউজ! আজ রাত ১০টায় এসপেসাল টেলিকাস্ট। আবু ঘ্রাইবের টর্চার চেম্বার। কাকা আজ আমি মাইরি ঘরেই থাকব। হেবি হট। এখন বাজারে চলছে দেশভাগ, বটতলা, পাঁজি, মুদ্দোফরাস। কচি তাজা প্রকাশকরা এখন হাত পেতে বসে আছে, গ্লসি ফুলঝুরি নামাবার জন্য। এখন অ্যাকাডেমিক লেখালেখি রিয়েল এস্টেটের মতো। লন্ডভন্ড করে দে মা লুটেপুটে খাই। বাঙালি বাচ্চা এখন ইংরেজি মিডিয়াম হড়কে পার্ক স্ট্রিটে টাই পরে, স্যুট পরে, বুকে আই-ডি ঝুলিয়ে আলু বেচছে। একেই বলে উন্নয়ন। বাঙালির হাতে এখন স্পাই-ক্যামেরা, আই ডি পড পাঁচু যাব্বি কোতায়? সাইরাস মিস্ট্রি-র লেটেস্ট নভেল ‘ক্রনিক্ল অব আ কর্প্স বেয়ারার’ থেকে মুরাকামি মুড়ি-মুড়কি সব ঘাঁটা একদর। নারদ-নারদ। ইটালীয় ফিউচারিজ্মের প্রথম ম্যানিফেস্টো প্রকাশের সময় থেকেই ‘মাদ্রিদ স্কুল অব কবিতা’র কবিরা যেমন র্যামন গোমেজ, সেরনা, জেরাডো, পেরুর কবি সেসার ভায়েখো লিখলেন, ‘কেন আমার বাঁচা! আমার চুল আমাকে ব্যথা দেয়। আমি বলতে চাই আমার ভীতু স্বদেশ, ভক্তির চুল আঁচড়ানো।’ খাটো করে কাটো চুল, দাড়ি-গোঁফ ছাঁটো রে, সে দেশেতে সব ব্যাটা কানে নাকি খাটো রে! দূর মুখপোড়া, বাঙালির এখন কানে তালা। রাধাভাবে বিভোর। ন্যাড়ানেড়ি, ছোকরাছুকরি, প্যান্ট টি-শার্ট, ধুতিপাঞ্জাবি, সব কানে তালা গুঁজে চলেছে। সেলফোন ভক্তিরস বাঙালির চিত্তভূমি রতির প্লাবনে আহা আহা চুপি চুপি অ্যাকাডেমিকদের একটা টিপ্স দিই। ‘পোস্ট কলোনিয়াল রতি ও ভীমরতি’ নিয়ে একটা থান ইট নামান না। নো স্পনসর। সে গুড়ে বালি। আরে বাবা মাসকাবারি লাখ টাকা তো আছে। হাঁটো ভাই হাঁটো রে যেতে হবে বাজারে আর দেওয়ালে রং দিতে হবে না। বাঙালি ফিল্মি পোস্টার বাচ্চারা সব জেগে উঠেছে। চাটু গরম। সিনেমা হলগুলো সব এখন আলুর গুদাম। মাল্টিপ্লেক্স। প্রতি দিন একটা শো, খুব জোর তিন দিন। তার পর ফুটুর ডুম। কেন, মিডিয়া আছে না! তিন দিনকে তিন হপ্তা করে দেবে। তার পর গাঁদার মালা, পেজ থ্রি-র দ্যায়লা। ‘ক্যাবারে ভলটেয়ার’ ডাডাইজ্মের প্রথম ও শেষ সাহিত্য পত্রিকা। রুমানিয়ার হুগো বল ডাইরিতে লিখছেন, ‘হাজার বছরের সংস্কৃতি ভেঙে পড়ছে। আর কোনও স্তম্ভ নেই, কোনও ভিত নেই। পৃথিবীর অর্থ হারিয়ে গেছে আজ আমি জীবনকে খুব কম পছন্দ করছি।’ দূর কাকা এখন সবাই লিখছে কেউ পড়ছে না। কেন রে পাঠক পড়িস না? লেখক কেন ফ্রি গিফ্ট দেয় না? বাঙালির গল্প পড়ে বাঙালি এখন আর ঢেকুর তোলে না। একটা এগ রোলেই বাঙালির অ্যাসিড হয়। যাঃ, এটা কী হল! জন বেলামি ফস্টার নামে সায়েব আছে, সে আবার ‘মান্থলি রিভিউ’-তে কী সব আনতাবড়ি লিখে ইন্টারনেটের সঙ্গে পুঁজিবাদের অশুভ বিবাহ অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ল! কাকা কী হবে? বাংলু অ্যাকাডেমিকরা যা হোক ইন্টারনেট থেকে টুকে দেরিদা ফুকো লাকাঁ বিনির্মাণ প্রাক |
|
|
|
|
|