|
|
|
|
|
|
স্বপ্নময় চক্রবর্তী |
আমাদের দু’জন ড্রিল স্যর ছিলেন। ছোট আর বড়। বড় ড্রিল স্যরের মোটা গোঁফ ছিল, গলাটাও বাজখাঁই। প্যারেড শেখাতেন। ছোট ড্রিল স্যর গোঁফহীন। ব্রতচারী শেখাতেন। ‘ছুটব খেলব হাসব সবারে ভালবাসব...’, ‘চল কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই...’ এই গানের শেষে ছিল ‘পেটের খিদের জ্বালায় খাব ক্ষীর আর মালাই’। গানের সঙ্গে নাচতেও হত। ছোট ড্রিল স্যর নাচের মাঝখানে হঠাৎ বলে দিতেন ‘স্ট্যাচু’। তক্ষুনি স্ট্যাচু হয়ে যেতে হত। হয়তো চলছে যত ব্যাধির বালাই, বলবে পালাই পালাই নিচু হয়ে পেটে হাত দিয়ে মুখ খিঁচিয়ে ব্যাধি বোঝাচ্ছি, তক্ষুনি ‘স্ট্যাচু’ কমান্ড। ওই অবস্থায় স্থির থাকতে হত। বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে বলতেন ‘গো’। তখন আবার নড়তে পারতাম। এটা নাকি মনকে স্থির আর অচঞ্চল রাখার ব্যায়াম। আমাদের ক্লাসের চানু দারুণ স্ট্যাচু হতে পারত। দশ-বিশ সেকেন্ডেও পড়ত না। এমনকী চোখের পলকও পড়ত না। অথচ চানুর ভাল নাম ছিল চঞ্চল।
চানুকে প্রায়ই স্ট্যাচু করিয়ে মজা পেতাম আমরা। তুই বেশ হনুমান, বুক চিরে রাম-সীতা দেখা স্ট্যাচু; তুই বেশ রাজ কপূর, বোল রাধা বোল সঙ্গম স্ট্যাচু। এক বার গঙ্গাস্নানে গামছা পরেছিল, পাঁচু নামের এক দুষ্টু ছেলে বলেছিল, একটা স্ট্যাচু দশ সেকেন্ড করতে পারলে একটা গোটা ঢাকাই পরোটা খাওয়াব। যে গানটা গাইব, তার সঙ্গে নাচবি। গানটা হল মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই। ও মাথায় তুলে নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পুণ্যতোয়া গঙ্গাতীরে ওই স্ট্যাচু দু’তিন সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু স্পোর্টস-এর ‘অ্যাজ-ইউ-লাইক’-এ কবি সুকান্ত সেজে ফার্স্ট হল। টেবিলে কনুই, গালে হাত রেখে স্থির।
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
চানুর জীবনে প্রেম এসেছিল স্ট্যাচু মাহাত্ম্যেই। তরুবালা কলা কেন্দ্রে নাচ-গান শেখানো হত। পাড়ার দুর্গাপুজোর ফাংশনে ওরা একটা নৃত্যনাট্য নামাবে ঠিক করল। ‘মহিষাসুর বধ’। একটা অসুর দরকার। অসুর নিধনের পর একটা ফ্রিজ শট। ‘আকাশকুসুম’ সিনেমাটার পর ফ্রিজ শট খুব চালু হয়েছিল। ইতিমধ্যে স্ট্যাচু শিল্পী হিসেবে চানুর বেশ নাম হয়ে গিয়েছে। ওকেই ধরা হল। এ ছাড়া চানু বেশ গাট্টাগোট্টাও ছিল। চানু বলল, আমি কি নাচতে পারি? নাচের মাস্টার বলল, নাচতে হবে না, শুধু লাফালেই হবে, আর লাস্টে একটু স্ট্যাচু। চানু জেনেছিল মিনুই দুর্গা হচ্ছে।
খুব সাফল্যের সঙ্গে অসুর নিধন সম্পন্ন হয়েছিল, এবং শূলবিদ্ধ হওয়ার পর কোনও ছটফটানি নয়, শুধু মিনুদুর্গার মুখপানে অপলক তাকিয়ে স্ট্যাচু। অনুষ্ঠানের পর মিনুদুর্গাকে চানু বলেছিল, আর এক বার দুর্গা হয়ে আমায় নিধন করিস, অ্যাঁ? কিন্তু স্কার্ট পরে। দুর্গা ‘যাঃ, অসভ্য’ বলেছিল। বোঝাই যাচ্ছে, অসুরের ওই বাক্যবলেই দুর্গা প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। তার পর আমরা চানু-মিনুকে দেখতাম এখানে-ওখানে, গঙ্গার ধারে, ফুচকায়, এবং সদ্য শুরু হওয়া চাউমিনে। সিনেমাতেও।
‘চারুলতা’ সিনেমাটা দেখে মিনু চানুকে জিজ্ঞাসা করেছিল লাস্টে ওরা স্ট্যাচু হয়ে গেল কেন গো? চানু বলেছিল, ও সব হাই থট, হাই থট। বোঝাতে টাইম লাগবে, নিরিবিলিতে বোঝাব।
চানু-মিনু বড় হল। গঙ্গার জল বয়ে গেল। ওদের প্রেম রয়ে গেল। চানু ভাল চাকরিবাকরি জোগাড় করতে পারল না। একটা কারখানায় কাজ পেয়েছিল, কাশীপুরের দিকে।
মিনুর সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল চানুর। বিয়েতে গিয়েছিলাম।
তার পর আমরাও এ ধার ও ধার ছিটকে গেলাম। ওর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হত না। অনেক দিন পর একটা বিয়েবাড়ির থার্মোকল আর বেলুন সাজানো দরজার সামনে ঝোলা গোঁফ, মাথায় পাগড়ি, এয়ার ইন্ডিয়ার মহারাজ স্ট্যাচু হয়ে ঝুঁকে নীরব অভিবাদন জানাচ্ছিল অতিথিদের। আমি ওকে চিনতে পারিনি। টুক করে প্যান্টের বেল্ট ধরে টেনেছিল। তবুও চিনতে পারিনি। বলল চানু, আসিস। বলি, সেই বাড়িতেই? হুম, স্ট্যাচুদের কথা বলতে নেই।
যখন গিয়েছিলাম, তখন চানু সত্যিকারের স্ট্যাচু। ওর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। বছর সাত-আট আগেকার কথা। শুনলাম ও কারখানার কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিয়েবাড়িতে বা বড় বড় দোকানে মহারাজ, চার্লি চ্যাপলিন, গোপাল ভাঁড় এদের স্ট্যাচু হত। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর স্ট্যাচু কাজটাই প্রধান হয়ে গেল। সে বার একটা দুর্গাপুজোর থিম ছিল, গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনা। দোমড়ানো ট্রেন, জানলা দিয়ে হাত-পা বেরিয়ে আছে। ওগুলো নকল। কয়েকটা মৃতদেহও পড়েছিল। ওই সব মৃতদেহের পাশ কাটিয়ে জাজেরা শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার দেবেন। মৃতদেহগুলো সব স্ট্যাচু দেহ। চানুও একটা স্ট্যাচু ছিল। পড়ে ছিল লাইনের ধারে। রিয়েলিটি শোয়ের নর্তকী-জাজের হাত থেকে গরম কফি চলকে পড়ল মৃতদেহের উপর। মৃতদেহ নড়ল না। জাজ বলেছিলেন, কী ফ্যান্টাস্টিক অভিনয়! অ-অ-সাম। আসলে ওই স্ট্যাচুটা ছিল চানু। কিন্তু তত ক্ষণে সে মৃতদেহই হয়ে গিয়েছিল। ওখানেই মরে গিয়েছিল ও। মৃতদেহর স্ট্যাচু হতে গিয়ে স্ট্যাচুর মৃতদেহ হয়ে গেল।
এখন এ সময়ে চানু নেই। কত মনীষী সমারোহ এখন! ট্যাবলোতে উইগ পরা লম্বু পরেশ রামমোহন, দাড়ি আর আলখাল্লা পরানো রবীন্দ্রনাথ সেজেছে টাকলু স্বপন, বিবেকানন্দ মেলায় জ্যান্ত রামকৃষ্ণ। ভোটের মিছিলে হাঁটছেন মনীষীরা। চানু বেঁচে থাকলে ক’টা মনীষী কাজ পেত যা হোক। |
|
শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় |
|
• আত্মহত্যা করবেন বলে সকাল থেকেই তৈরি। দাড়িও কামালেন না। তার পর গিয়ে দেখেন, কী একটা অবরোধে, মেট্রো আজ বন্ধ! |
|
|
• অসম্ভব জোর পেয়েছে, ট্যাক্সি ধরে কোনও মতে বাড়ি
পৌঁছে পোঁ-পোঁ দৌড়ে চার তলা। শান্তি! কিন্তু না। বাথরুমের
দরজা বন্ধ। ছেলে সবে হিন্দি গানের মুখড়াটা ধরেছে। শেষ
না হলে, বেরোবার কোনও চান্সই নেই। |
• ডবকা মেয়েটিকে চোখ দিয়ে গিলতে গিলতে অটোয় এলেন।
আরে,
মেয়েটি আপনার স্টপেই নামল, তার পর আপনার
বাড়িতেই
ঢুকল! আপনার মেয়ের বন্ধু! ‘কাকু’ বলে
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল! |
|
|
|
|
• আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের গোড়ায় ভারতবাসীকে দূরদর্শনে অনর্গল হাসিয়েছেন যিনি, কেব্ল-ডিশরহিত একঘেয়ে ন্যাশনাল টিভির পর্দায় কমেডি-অনুষ্ঠান ‘উল্টা পুল্টা’(খুব ছোট্ট, মাত্র কয়েক মিনিটের শো),‘ফ্লপ শো’ (পনেরো মিনিটের, মাত্র দশটা এপিসোড দেখানো হয়েছিল, তাতেই হুলস্থূল) পরিচালনা ও মূল ভূমিকায় অভিনয় যাঁকে দিয়েছিল ‘হাউসহোল্ড সুপারস্টার’ তকমা, সেই যশপাল সিংহ ভাট্টি পথ-দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। সমকালীন রাজনীতির অবক্ষয়ের হাঁড়ি ভাঙতেন হাসির হাটে, তুলে ধরতেন আম-ভারতীয়ের রোজকার জীবন-যন্ত্রণার খুঁটিনাটি। জন্ম অমৃতসরে, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পথ-নাটকাভিনেতা, সংবাদপত্রে কার্টুনিস্ট। অভিনয় বেঁধে রাখতেন নিচু পর্দায়, কাজের ও ভাবনার উদ্ভটতা তাতে আরও ফুলেফেঁপে উঠত। ঠিক ভোটের আগে, হাওয়ায় ভাসাতেন ‘হাওয়ালা পার্টি’, ‘সুটকেস পার্টি’, ‘রিসেশন পার্টি’, প্রতীক ড্রাগ-অ্যালকোহল-আফিম, ছদ্ম-ইস্তাহারে বলতেন: তিনি ক্ষমতায় এলে ওগুলো ঘরে ঘরে মিলবে দেদার। স্থূল ভাঁড়ামো আর কলার খোসায় মোটা লোককে আছাড় খাইয়ে হাসানোয় বিশ্বাসী ছিলেন না। অপদার্থ উদ্ধত কর্তৃপক্ষকে নাগাড়ে ব্যঙ্গ করতেন, সমাজ-শোধনের অস্ত্র হিসেবে চোখা বিদ্রুপকে ব্যবহার করতেন।
• বিট্ল্স-এর পল ম্যাককার্টনি টিভি সাক্ষাৎকারে বোমা ফাটালেন বিট্ল্স ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে ইয়োকো ওনো-র কোনও সম্পর্ক নেই, দল আগে থেকেই ভাঙছিল নিজে নিজেই। ঠিক ওই সময়েই দলের লিড-গায়ক লেনন ও ইয়োকোর তুমুল প্রেম নেহাত সমাপতন। অবিশ্যি বিট্ল্সের রেকর্ডিং সেশনেও ইয়োকোর বসে থাকা, দলের হরেক সিদ্ধান্তে খবরদারি, সবই ছিল বেশ বিরক্তিকর। তবু তিনি নির্দোষ। সে কী? এত বছর লাখো ভক্তের বুকে বিশ্বাস দগদগে : ইয়োকো-ই যত নষ্টের গোড়া। কারণ এ তো স্বতঃসিদ্ধ, পুরুষদের মাস্টারপিস-প্রক্রিয়ায় আচমকা নারী ঢুকে পড়েই যত গাঁইয়া বাগড়া দেয় ও নিশ্চিত মহত্ত্ব থেকে প্রোজেক্টটিকে টেনে নামায়। বাসে-ট্রামেও চলে মহাকাব্যিকে সাক্ষী মেনে হেলেন-সীতা-দ্রৌপদীকে তেড়ে দোষারোপ: ওরাই তো চুকলি কেটে যুদ্ধ বাধায়, বুনে দেয় পথের কাঁটা, বন্ধু-বিচ্ছেদের কুটিল বীজ। যুগ যুগ ধরে পুরুষের মনোযোগী সৃষ্টির পথে নারী লোভ-টোপ, হার্ডল। তাকে দোষ না দিলে ব্যর্থতার ও নষ্টামির দায় পুরুষকেই নিতে হবে। সে সম্ভব? পুরুষতান্ত্রিকতার অকাট্য মাচো ফানুসে হঠাৎ-সত্যের পিন ফোটালে মানছি না মানব না। |
|
|
২০০০০০০০০০
২০৫০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে
মোট যত সংখ্যক নারীপুরুষ
হবেন ‘সিনিয়র সিটিজেন’ |
৩.৩৩
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের
মিড ডে মিলের জন্য মাথাপিছু দৈনিক
যত টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার |
৬২
শনিগ্রহের যতগুলো
চাঁদমামা (প্রাকৃতিক
উপগ্রহ) আছে |
১
গুজরাতের গির অরণ্যের
বানেজ গ্রামে স্থাপিত
ভোট
কেন্দ্রের ভোটার-সংখ্যা
|
১৭
রাস্তাঘাটে থুতু ফেলার জন্য এ
বছর জুলাই অবধি যত লক্ষ
মানুষকে জরিমানা করল
গ্রেটার মুম্বই পুরসভা
|
বিশ্বের সবচেয়ে দামি
ককটেল ‘সালভাটোরস
লেগাসি’-র এক গেলাসের
দাম যত টাকা!
| |
|
১২১৬৫
যত পয়েন্ট নিয়ে এ বছর
টেনিস মরসুম শেষ করলেন
বিশ্ববিখ্যাত তারকা
রজার ফেডেরার
|
৫.৫
ফিলিপিন্সের নয়া সাইবার-আইনে ফেসবুক বা টুইটারে অপমানজনক মন্তব্য করলে যত বছর
জেলের
ঘানি টানতে হবে |
|
|
|
|
অ
সী
ম
রা
য় |
|
|
অ্যাকাডেমির মাথার থেকে সরিয়ে দেওয়া সোজা, আরও
সহজ কবিকে কোনও বিভূষণ না দেওয়া। কিন্তু তাঁকে
ভালবেসেছে অবাধ্য সব প্রজা!
শ্মশান তাই
হবে দখল।
সবুরে ফলে মেওয়া। |
পেছন দিকে এগিয়ে যাও বঙ্গবাসী এ বার কন্ডাক্টর
উৎসাহ দেন সাধ্য যেটুক দেবার
ভাঙুক শিল্প
শিক্ষা স্বাস্থ্য
রাজনীতি স্রেফ থাকুক আস্ত
দুর্গতি না বাড়লে সুযোগ কোথায় জনসেবার? |
|
|
লেটারিং বেটারিং |
|
যত পথ, তত মত, পুলিশের শুধু বাঁধা গত |
|
|
|
|
|
|
|
|
এই ছবির সংলাপ লিখেছেন চিত্রল মজুমদার, হাওড়া |
|
ওপরের ছবির দু’জন কী বলছে? সাদা পাতায়
লিখে পাঠান।
প্রতি ডায়লগ ২০ শব্দের মধ্যে।
ঠিকানা:
নয়া সংলাপ,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১
|
|
|
|
|
|
|
|