ঐরাবতে বনভ্রমণে সমানাধিকার।
সপরিবারে হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে দুলকি চালে গন্ডার-বাইসন এমনকী ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে বাঘ-দশর্নের সুযোগটা এ বার সকলের জন্যই হাট করে খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে বন দফতর।
গরুমারা, চাপরামারির বন বাংলো কিংবা হলং-জলদাপাড়ার পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাস--হাতির পিঠে জঙ্গল ঘোরার অগ্রাধিকার পেতেন সরকারি এই আবাসগুলির পর্যটকেরা। হস্তি-হাওদায় তাঁদের ‘জঙ্গল সাফারি’র পরে আসন ফাঁকা থাকলে তবেই সুযোগ মিলত উত্তরবঙ্গের অন্যান্য বেসরকারি পর্যটন আবাসের পর্যটকদের।
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “আমাদের (পড়ুন সরকারি আবাসের পর্যটক) পর্যটকদের হাতির পিঠে চড়ানোর পরে জায়গা ফাঁকা থাকলে ওঁরা সুযোগ পেতেন।” পর্যটন-প্রসারী বন দফতর ওই ‘আমরা-ওরা’ বিভাজন মুছেতে চাইছে। ফালাকাটা, লাটাগুড়ি বা গরুমারা জাতীয় উদ্যানকে আঁকড়ে গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা শ-খানেক রিসর্টের পর্যটকেরাও এ বার হাতিতে জঙ্গল ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। |
হেড অফ ফরেস্ট সম্পদ সিংহ বিস্ত বলেন, “অসমে এ ব্যবস্থা আছে। বেসরকারি রিসর্টের মালিকেরা হাতি কিনে বা ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের হাতির পিঠে বন ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এখানেও তা চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।” এ নিয়ে আগ্রহী বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও। মন্ত্রী বলেন, “আয়ের রাস্তা খুলবে ঠিকই তবে এখনও কোনও স্থির সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।” কেন? কারণ কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কত এখনও মেলেনি। দেশের বন্যপ্রাণ আইনানুসারে হাতি কেনা-বেচা বেআইনি নয়। কিন্তু পোষা হাতির সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশের প্রশ্নে বন-আইনে কিছু বাধা রয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের অধীনে থাকা প্রজেক্ট এলিফ্যন্টের এক কর্তা বলেন, “জঙ্গলের হাল হকিকৎ সম্পর্কে হাতিটি প্রশিক্ষিত কিনা তা নিয়ে নিশ্চিৎ হলেই তাকে জঙ্গলে পর্যটনের কাজে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে।” ব্যবসায়িক কাজে হাতির ‘যথেচ্ছ’ ব্যবহার নিয়ে আগাম প্রশ্ন তুলেছেন এলিফ্যান্ট লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা ইএ ভেঙ্কটটচলম। তিনি বলেন, “জঙ্গল ভ্রমণে বেসরকারি সংস্থাগুলি যতটা সম্ভব লাভের মুখ দেখতে চাইবে। হাতিদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম তারা দেবে তো!” শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুও বলছেন, “হাতিদের খাবার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।”
তবে হাতির পিঠে চড়ানোর সুযোগে পর্যটন ব্যবসায় যে জোয়ার আসবে তা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কমল ভৌমিক বলেন, “হাতির পিঠে চড়ার সুযোগ সহজে পেলে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের ঢল নামবে। অসম থেকেই প্রশিক্ষিত হাতি আনা যেতে পারে।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু হলং বা গরুমারা নয়, বেসরকারি পর্যটন সংস্থগুলিকে এ ব্যাপারে তিতি, খুন্তিমারি কিংবা গয়েরকাটার জঙ্গলগুলি ব্যবহার করতে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যেখানে বন্য পশু তেমন না থাকলেও পর্যটকেরা অন্তত হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গল ভ্রমণের মৌতাতটা নিতে পারেন। কিন্তু কবে?
তারই উত্তর খুঁজছে বন দফতর। হয়তো পর্যটকেরাও। |