বিনোদন তিন কন্যার মুক্তি ঘিরে
নাটকটাই আসল স্টার
বির গল্পে সংবাদমাধ্যম এসেছিল একটা বড়সড় ভূমিকা নিয়ে। শনিবার সংবাদমাধ্যম তোলপাড় হয়ে গেল সেই ছবিকে নিয়েই।
‘তিন কন্যা’ ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের চরিত্রটা সাহসিনী টিভি-সাংবাদিকের। একটি সরকারি প্রেক্ষাগৃহে ‘তিন কন্যা’র মুক্তি সংক্রান্ত ধোঁয়াশাকে কেন্দ্র করে শনিবার যে নাটকীয়তার সাক্ষী থাকল শহর, সেটা নিজেই একটা ‘ডেভেলপিং স্টোরি’।
শুক্রবার রাজ্যের ৩৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘তিন কন্যা’র। ছবির পোস্টারে সেই তালিকায় উত্তর কলকাতার সরকারি প্রেক্ষাগৃহ স্টার থিয়েটারেরও নাম ছিল। কিন্তু শুক্রবার বা শনিবার, দু’দিনের কোনও দিনই ছবিটি স্টারে দেখানো হয়নি। অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি চলেছে।
কেন? ছবির প্রযোজনা সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, শনিবার সকালে মিস্টার দাভে বলে এক ব্যক্তি তাঁদের ফোন করেন। তিনি জানান, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশে স্টার থিয়েটারে ছবিটি দেখানো যাচ্ছে না। মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূল নেতা দেবাশিস কুমার ওই নির্দেশ দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়। রাজনৈতিক-প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এই মর্মে দ্রুত খবর চাউর হয়ে যায়। ছবির পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সংবাদমাধ্যমে তাঁদের অসন্তোষ জানান। “গোটা ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক। আশা করি দ্রুত এর নিষ্পত্তি হবে”, বলেন ঋতুপর্ণা।
‘তিন কন্যা’-র একটি দৃশ্য
কিন্তু ঘটনা হল, স্টারে ‘তিন কন্যা’ না-দেখানো নিয়ে নানাবিধ তত্ত্ব শনিবার সারা দিন ধরে সংবাদমাধ্যমে, লোকমুখে, ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে-বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছে। বিভিন্ন মহলে এমনও বলা হয়েছে যে, ‘তিন কন্যা’ ছবিটিতে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া আছে বলেই সরকারি তরফে ছবিটির প্রদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ছবির গল্পে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ, ধর্ষিতার টিভি ক্যামেরার সামনে মুখ খোলা, ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ইত্যাদি বিষয় ঘুরেফিরে এসেছে। এক মাল্টিপ্লেক্স কর্তা জানান, দর্শকরা ক্রমাগত ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন, ছবিটা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে কি না। গোটা ব্যাপারটাই ছবির প্রচার-চমক কি না, এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছে।
‘তিন কন্যা’র পরিচালক অগ্নিদেব নিজে কী বলছেন? “শুনেছি ছবিতে সরকার-বিরোধী কথাবার্তা আছে বলে প্রচার করেই ছবিটা আটকানো হচ্ছে।” অথচ এ ছবিতে অভিনয় করেছেন খোদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ব্রাত্য নিজে পরে বলেছেন, “ছবিটা এখনও দেখিনি। আমার তো দু’মিনিটের গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স।” ঋতুপর্ণার বক্তব্য, “যাঁরা বলছেন, ছবিতে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড তথা দময়ন্তী সেনের ছায়া আছে, তাঁরা আদপেই ঠিক বলছেন না।”
সরকারি তরফে অবশ্য ছবির মুক্তি আটকানোর বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। স্বয়ং দেবাশিস কুমার বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ঋতুপর্ণার কাছ থেকেই তিনি গোটা ঘটনাটি জেনেছেন বলে দাবি করেন। তা হলে কে বা কারা কেন তাঁর নাম জড়াল? দেবাশিসবাবু বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” পুরসভার তরফে কি ‘তিন কন্যা’র প্রদর্শনের বিরুদ্ধে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ দু’জনেই এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তাঁদের বক্তব্য, “স্টার থিয়েটার কলকাতা পুরসভার অধীনে ঠিকই, কিন্তু সেখানে সিনেমা দেখানোর দায়িত্ব দেওয়া আছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তারাই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। পুরসভা নাক গলায় না।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “পুরসভা ওই হল চালানোর জন্য একটা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। কী ছবি দেখানো হবে, তারাই ঠিক করে। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক নেই।”
দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার এ ব্যাপারে বক্তব্য কী? সংস্থার প্রধান জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সারা দিনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি বিদেশে আছেন বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার এক কর্মী পবন রায় বলেন, “ছবিটা আসার কথা ছিল। কিন্তু আসন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় ছবির প্রদর্শন বাতিল করা হয়েছে।” অথচ মিস্টার দাভে ওই সংস্থার হয়েই স্টারে ছবি প্রদর্শনের বিষয়টি দেখভাল করেন। তিনিই কিন্তু সকালে ‘তিন কন্যা’র প্রযোজকদের কাছে ফোন করে রাজনৈতিক হুমকির কথা জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দুপুর সাড়ে বারোটায় মিস্টার দাভেকে আনন্দবাজারের তরফে ফোন করা হয়েছিল। দাভে স্বীকার করেন, প্রযোজকদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। “কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। ছবি দেখানোর বিষয় পুরসভাই ঠিক করেছে,” বলেন তিনি।
‘তিন কন্যা’ ছবির পোস্টার। রয়েছে স্টারের নামও।
অর্থাৎ? পুরসভা বলছে, ছবি দেখানোর ব্যাপারে তাদের হাত নেই। আবার দাভে বলছেন, দায়িত্বটা পুরসভারই। এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়, স্টার থিয়েটারের কর্মীদের বক্তব্য। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে প্রেক্ষাগৃহের কর্মী সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, “এমন কোনও ছবি (তিন কন্যা) এখানে দেখানোর কথা ছিল বলে আমার জানা নেই। তাই ছবি প্রদর্শন বাতিলের প্রশ্নই ওঠে না।” শুক্র-শনি দু’দিনই সন্ধেবেলা স্টারে নাটকের শো হয়েছে।
‘তিন কন্যা’ নিয়ে তা হলে স্টারের সঙ্গে প্রযোজক সংস্থার ঠিক কী চুক্তি হয়েছিল? ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ছবি দেখানোর ব্যাপারে আজকাল প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে লিখিত চুক্তিপত্রের দরকার পড়ে না। মৌখিক বোঝাপড়াতেই কাজ হয়। কিন্তু স্টারের ক্ষেত্রে এ বারেই তার ব্যতিক্রম ঘটেছিল। কেন? সূত্রের দাবি, প্রথমে ‘তিন কন্যা’ স্টারে রিলিজ না করারই পক্ষপাতী ছিলেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের আগের একটি ছবি ‘ল্যাপটপে’র টাকা এখনও মেটায়নি স্টার। কিন্তু উত্তর কলকাতার দর্শক টানতে শেষ মুহূর্তে স্টারে যাওয়াই সাব্যস্ত হয়। ঠিক হয়, ১০ তারিখ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়ে গেলে ‘তিন কন্যা’র প্রদর্শন বন্ধ থাকবে। তার আগের দিনই, অর্থাৎ ৯ তারিখ টাকা মিটিয়ে দেবে স্টার। এই কথার ভিত্তিতেই ৩ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্টারে ‘তিন কন্যা’ প্রদর্শনের জন্য ৬০ হাজার টাকা ভাড়া জমা করেছিলেন প্রযোজকরা। স্টারের ডিজিটাল প্রোজেকশন ব্যবস্থা ইউএফও-তে তিন কন্যা ‘লোড’ করা হয়েছিল বলে ইউএফও-র তরফে জনৈক মিস্টার রুদ্র স্বীকারও করেছেন। লোড করার খরচ বাবদ করসমেত ২২ হাজার টাকা ইউএফও-কেও মিটিয়ে দেন প্রযোজকরা।
তা হলে শেষ মুহূর্তে ছবিটা দেখানো হল না কেন? টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির একাংশ বলছেন, ‘‘সরকার নয়। সরকারের কিছু বন্ধুবান্ধবই এর জন্য দায়ী।” কী রকম? অভিযোগ উঠেছে, অন্য একটি বাংলা ছবির প্রদর্শন চালিয়ে যাওয়ার জন্যই এই ঘুরপথের আশ্রয়। স্টারে এই মুহূর্তে একটিই বাংলা ছবি, ‘পাঁচ অধ্যায়’ দেখানো হচ্ছে। সেই ছবির প্রযোজক কৌস্তুভ রায় বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ রটানো হচ্ছে। স্টার কী ছবি দেখাবে, সেটা স্টারের ব্যাপার। প্রতি সপ্তাহে যত ছবি রিলিজ হয়, তার সব স্টারে দেখানো হয় নাকি?”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.