এ বারে মন ভাল নেই। অন্য বারের মতো বড় করে পার্টি হবে না, বলে দিয়েছিলেন তিনি।
তবু অন্য বারের মতোই মন্নতের বাইরে ঠাসা ভিড়। শাহরুখ খানকে এক ঝলক দেখতে ভক্ত আর সাংবাদিকদের জমায়েত। একটা সময় সাদা ব্লেজারে কালো সানগ্লাস পরে তিনি এলেন। হাত নাড়লেন। কাটলেন কেকও। হেসে বললেন, “আপনারা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভালই লাগছে। এ ভাবেই জন্মদিন কাটাতে চাই, আপনাদের সঙ্গে।”
কিন্তু বিষণ্ণতার একটা সুর কোথাও যেন বেজে চলল। পিতৃপ্রতিম যশ চোপড়ার মৃত্যুটা এখনও মেনে নিতে পারেননি তিনি। ক’দিন আগেও বলছিলেন, ছবিটা মুক্তির আগে বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একটা গানের শ্যুট বাকি ছিল। শাহরুখ-ক্যাটরিনা-আদিত্যরা সকলেই ঠিক করেন, ওটায় আর হাত দিয়ে কাজ নেই। ‘যশ আঙ্কল’-এর অনুপস্থিতিতে শ্যুট করার মনটাই নেই। কত কীই তো ঠিক করা ছিল! ঠিক ছিল, এই জন্মদিনের সাংবাদিক সম্মেলন আর পার্টিটাই হবে ‘জব তক হ্যায় জান’-এর সবচেয়ে বড় প্রচার-মঞ্চ। হল না তো! |
সাংবাদিকদের ডেকে নিলেন ঠিকই। কিন্তু এই শাহরুখের মুখে হাসি আছে, উচ্ছ্বলতা নেই। নেই শাহরুখ-সুলভ চোখা চোখা কথা। অজয় দেবগণের ‘সন অফ সর্দার’ নিয়ে এর মধ্যেই আবার মামলায় জড়িয়েছে যশরাজ ফিল্মস। অজয় দেবগণের অভিযোগ, যশ রাজ ফিল্মসের দাপটে ‘সন অফ সর্দার’ মুক্তির জন্য যথেষ্ট হল পাচ্ছে না। দিল্লি হাইকোর্ট আজই বলেছে, ‘কম্পিটিশন কমিশন’ই নির্দেশ দিক, যাতে এর নিষ্পত্তি হয়।
এমনিতেই শাহরুখের কাছে যশ চোপড়ার ছবি বরাবর আলাদা জায়গা পেয়ে এসেছে। যশ এটাকে তাঁর শেষ ছবি বলে ঘোষণার পর জব তক... আরও বেশি আলাদা হয়েই গিয়েছিল। যশ মারা গিয়ে বিষয়টাই স্বাভাবিক ভাবেই একটা অন্য আবেগঘন উচ্চতা পেয়েছে। সেই ছবি নিয়ে অজয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার রাস্তায় গেলেনই না শাহরুখ। ঘনিষ্ঠ মহলে দুঃখ করেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সামনে খানিকটা স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই যেন সংযত থাকলেন আজ। বলেন, “কিছু বলতে চাই না। এটা আমার প্রোডাকশন নয়। অজয় আমার শত্রু নয়। এটা ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যাপার।”
এটুকুই? তা-ই যদি হবে, তা হলে এই শাহরুখই তো এক সময় দীপাবলির রিলিজ নিয়ে কম তৎপর হননি! দীপাবলি রিলিজ নিয়েই সঞ্জয় লীলা বনশালী বা শিরিষ কুন্দরের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে তাঁর। এ বারেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেয়েছিলেন, অজয়ের ছবির সঙ্গে সংঘাত না হোক! কিন্তু সেটা এড়ানো গেল না। শাহরুখের গত কয়েকটা ছবি প্রত্যাশিত বাণিজ্য পায়নি। আমির বা সলমন খানিকটা পিছনে ফেলেছেন তাঁকে। তা নিয়ে চাপে আছেন। যশ চোপড়ার ছবিতে নিজের পুরনো ইমেজে গিয়ে পুরনো বাজারটা ফিরে পাওয়ার তাড়নাও আছে। তবু উন্নাসিক, আগ্রাসী শাহরুখকে ততটা দেখা গেল না আজ। বরং অনেকটা দার্শনিক ভঙ্গিতে বললেন, “কাজটা মন দিয়ে করাটাই দরকার। তার পর কোনটা কার কেমন লাগবে, সেটা নিশ্চিত বলা যায় না!” |
৪৭ পেরিয়ে শাহরুখও কি তবে বদলাচ্ছেন? ‘পরাজয়’ শব্দটাকেই যিনি সহ্য করতে পারতেন না, সেই শাহরুখ কি তবে পোড় খেয়ে অন্য রকম হতে শিখছেন? নইলে কেন বলবেন, ‘‘বিতর্ক চাই না। সবার ছবি ভাল হোক!” বিতর্ক এড়াতেই বোধহয় ফিরে গেলেন জন্মদিনের কথায়। বললেন, “আমি ঘুমোচ্ছিলাম। ছেলে এসে বলল, বাইরে ব্যান্ড বাজছে! নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় যে আমার জন্মদিনটা এত মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ!” এর পরেই উঠল কলকাতার প্রসঙ্গ। ১০ নভেম্বর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে যৌথ ভাবে উদ্বোধন করবেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। এখানেও সাবধানী তিনি, “আমি পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। ১০ তারিখ কলকাতায় চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে যাচ্ছি। এর সঙ্গে ‘জব তক হ্যায় জান’-এর প্রচারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।” জন্মদিনটা পরিবারের সঙ্গেই কাটানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন, বললেন।
তবু জন্মদিনের রাত! একেবারে নির্জন কি আর হয়? কর্ণ জোহর, অভিষেক-ঐশ্বর্যা, ফারহা খানেরা গেলেন বন্ধুর কাছে। শাহরুখের মন ভাল নেই, তাঁরাও জানেন যে! |