কিশোর-কিশোরীর প্রেমকে ঘিরে দুই পরিবারের গোলমালে উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার পালপাড়া। শুক্রবার রাতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে গোলমাল চলে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ইট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশকর্মীরাও গ্রামবাসীদের একাংশের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ৩ জন পুলিশ কর্মী-সহ ওই ঘটনায় ১০ জন জখম হয়েছেন। দশটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে থানায় বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকরা। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও জি পাল বলেন, “পুলিশের উপর হামলা এবং বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও দুটি অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি করা হচ্ছে।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |
পুলিশ সূত্রের খবর, পালপাড়ার প্রতিবেশী দুই নাবালক-নাবালিকার মধ্যে এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ইদানিং গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে ওই দু’জনকে কথা বলতে দেখে কয়েকজন আপত্তি করেন। এর পরেই নাবালিকার বাবা বিশ্বজিৎ পাল ওই এলাকার সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুশান্ত পালের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। অভিযুক্ত ছেলেটি সুশান্তবাবুর দাদা ভোলানাথবাবুর ছেলে। গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ ওই দু’জনের বিয়ের দাবি করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তা নিয়েই পঞ্চায়েত সদস্যের নেতৃত্বে সালিশি সভা বসে। নাবালিকার পরিবারের পক্ষের অভিযোগ, সালিশি সভায় ভোলাবাবু বা তাঁর পরিবারের পক্ষে কেউ ছিলেন না। পঞ্চায়েত সদস্য জোর করে একটি সাদা কাগজে সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীদের সই নেওয়ার চেষ্টা করলে গণ্ডগোল শুরু হয়।
সুশান্তবাবু ও তাঁর দাদা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, গ্রামবাসীদের একাংশ তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। নাবালিকার বাবা বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “আমার মেয়ের বদনাম হচ্ছিল। তা সহ্য করতে না পেরেই পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হই। আমি বিয়ের দাবি করিনি। একটি সুষ্ঠু মীমাংসা চেয়েছিলাম, যাতে আমার মেয়ে বদনামের হাত থেকে রক্ষা পায়। তা হয়নি। উল্টে পুলিশ ডেকে আমাদের উপরে হামলা করা হয়েছে।” সুশান্তবাবু বা তাঁর দাদা কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
|
সুশান্তবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা দেবী বলেন, “আমার স্বামী সুষ্ঠু মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন। কিছু লোক তা না মেনে আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে।”
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা মহাসচিব কৃষ্ণ পালের অভিযোগ, “পুলিশ বেছে বেছে সিপিএম করেন না, এমন বাসিন্দাদের মারধর করেছে। পুলিশের একটি অংশের সঙ্গে ওই এলাকার সিপিএমের নেতাদের একটা আঁতাত রয়েছে। তাঁদের কথা শুনেই পুলিশ নিরীহ মানুষ যারা সিপিএম করেন না তাঁদের উপরে অত্যাচার করেছে। একজন প্রতিবন্ধীকেও মারধর করা হয়। এ দিন থানায় যাওয়া হলে আমার সামনেই গ্রামবাসীদের মারধর করে কয়েক জন পুলিশ কর্মী। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।” সিপিএমের মাটিগাড়া জোনাল সম্পাদক অরবিন্দ ঘোষ বলেন, “আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
|