কুকুরের কামড়ে ইঞ্জেকশন নিয়েও জলাতঙ্কে মৃত দুই
পাগলা কুকুরে কামড়েছিল পরপর চার জনকে। সময় মতো তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল জলাতঙ্কের টিকা এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন।
কিন্তু ইঞ্জেকশন দেওয়ার পদ্ধতিটাই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ক্ষতস্থানের বদলে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হয় রোগীর কোমরে। কিছু দিনের মধ্যেই জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় চার জনের মধ্যে দু’জন। তার মধ্যে ১১ বছরের এক বালকও রয়েছে। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের সগড় গ্রামের এই ঘটনায় চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সগড় গ্রামে রাস্তায় খেলা করছিল বছর পাঁচেকের সুজয় বাউরি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি পাগলা কুকুর তার গলায় ও উরুতে দাঁত বসিয়ে দেয়। বাড়ির লোক তাকে উদ্ধার করার কিছু ক্ষণ পরেই খবর আসে কুকুরটি মল্লিকা বাউরি নামে এক বধূর গালে ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইনজামুল হকের মুখে কামড়েছে। বিকেলে কুকুরটি একটি হাঁসকেও কামড়ায়। সেটিকে কুকুরের মুখ থেকে ছাড়াতে গিয়ে সাগর বাউরি নামে এক তরুণ কামড় খায়। গ্রামবাসীরা কুকুরটিকে পিটিয়ে মারেন। আহতদের সকলকেই দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ানো শুরু হয়। পাশাপাশি, অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামে সিরাম-ও দেওয়া হয়।
কিন্তু তিনটি টিকা নেওয়ার পরেই জ্বর ও মুখ থেকে লালা ঝরার উপসর্গ নিয়ে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হন সাগর বাউরি (১৯)। ৪ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখে, ‘জলাতঙ্ক’ (র্যাবিস)। টিকাকরণ চলাকালীন কী করে সাগরের মৃত্যু হল, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আতঙ্কও ছড়ায়। আক্রান্ত বাকি তিন জনকে নিয়ে পরিবারের লোকেরা সিউড়ি হাসপাতাল, তার পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল, শেষে পাস্তুর ইনস্টিটিউটে যান।
ইনজামুল হকের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসী মুজিবর রহমান, জামির চৌধুরী, শেখ ইসরাফিলদের দাবি, “পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কথাবার্তা বলার পর ভুল বুঝতে পারি। গ্রামীণ হাসপাতাল টিকার পাশাপাশি ইমিউনোগ্লোবিউলিনও দিয়েছিল কোমরে। অথচ পাস্তুরের ডাক্তারবাবুরা জানান, ওটা ক্ষতস্থানে দেওয়ার কথা। সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।” সেখান থেকে ফেরার পরে তিন জনকে বাকি টিকাগুলিও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইমজামুল হক (১১) অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর ও মুখ দিয়ে লালা ঝরা ও খাবার গিলতে না-পারার উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার সকালে তাকেও সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারা যায় সে-ও। মৃত্যুর কারণ বলা হয়, ‘জলাতঙ্ক।’
কুকুর, বিড়াল, বেজি, হনুমানের মতো প্রাণী কামড়ালে বাধ্যতামূলক ভাবে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হয়। ইন্ট্রাডার্মাল জলাতঙ্কের টিকা নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৪টি এবং ইন্ট্রামাসকুলার টিকা নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৫টি নেওয়া নিয়ম। যদি কামড়ে রক্ত বেরিয়ে থাকে (চিকিৎসার পরিভাষায় ‘স্টেজ-৩’), সে ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী টিকার পাশাপাশি ক্ষতস্থানে একটি ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। কতখানি ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হবে, তা ঠিক করা হবে রোগীর ওজন অনুযায়ী।
সিউড়ি হাসপাতালের সুপার মানবেন্দ্র ঘোষের দাবি, “ইমিউনোগ্লোবিউলিন কিছুটা ক্ষতস্থানে, কিছুটা কোমরে দেওয়ার কথা।” যা-র সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে পাস্তুর ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা নীলরতন শিকদার বলেন, “যেখানে ক্ষত থেকে রক্ত বের হবে, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ঠিক সেখানেই দিতে হবে।” জলাতঙ্ক বিশেষজ্ঞ সুমিত পোদ্দারের মন্তব্য, “ইমিউনোগ্লোবিউলিন ক্ষতস্থানে না-দেওয়াটা ‘ক্রিমিন্যাল অফেন্স।’ পৃথিবীতে যেখানে-যেখানে জলাতঙ্কের টিকা ব্যর্থ হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়ার ত্রুটি ছিল। যদি একাধিক ক্ষত থেকে রক্ত বার হয়, তবে সব ক্ষততেই এটি দিতে হবে।”
দুবরাজপুরের বিএমওএইচ কুণাল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কোনও চিকিৎসকই তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা রোগীর মৃত্যু চান না। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা চিকিৎসার কাগজপত্র না দেখে মন্তব্য করব না।” ডেপুটি সিএমওএইচ-২ দিলীপ দত্ত-ও বলেন, “দুবরাজপুর, সিউড়ি হাসপাতাল ও পাস্তুর ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিচ্ছি।”

উত্তর-পূর্বেও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি
অসম, মণিপুর, অরুণাচলে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। এরমধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি অরুণাচল প্রদেশে। গত কয়েক দিনে অরুণাচলের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা ৫৮৬টি রক্তের নমুনা সংগর্হ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরমধ্যে, ১৬৫টি নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণুর অস্তিত্ব মিলেছে। রাজ্যের এপিডার্মিওলজিস্ট এল জাম্পা জানান, অগস্ট মাস থেকেই পূর্ব সিয়াং জেলায় ডেঙ্গির খবর আসছিল। পাপুম পারে, পশ্চিম সিয়াং ও আপার সিয়াং-এও ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখছে। অরুণাচল রাজ্য হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইটানগরেও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সে মশা মারার ধোঁয়া দেওয়ার কাজ চলছে। পাশাপাশি, অসমে প্রায় শ’খানেক ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গির সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের হাতে এসেছে। এর মধ্যে, কামরূপেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫। কামরূপে ৩ জন ও লখিমপুরে এক জনের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ স্বাস্থ্য বিভাগকে ডেঙ্গি রুখতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.