রবিবারে মন্ত্রিসভার রদবদলে গদি টিকবে না যাবে তা নিয়ে যখন একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আতঙ্কিত, তখন আম-দিল্লিবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গি। ফি-দিনই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলিতে। এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হলেও চলতি মরশুমে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। পাশাপাশি চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, হেমারেজিক ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি। ঘটনাচক্রে কলকাতাতেও এ বারে হেমারেজিক ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্য বারের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, গোড়ার দিকে যে রোগীরা আসছিলেন, তাঁরা মূলত টাইপ-১ ডেঙ্গি ভাইরাসের শিকার। এতে রোগীকে ঘরে রেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু চলতি মাসে বিভিন্ন হাসপাতালে হেমারেজিক ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এ ক্ষেত্রে ভাইরাস শরীরে হানা দেওয়ার পরেই রোগীদের রক্তক্ষরণ শুরু হচ্ছে। প্লেটলেটও কমছে দ্রুত। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দিল্লিতে ৮৩৫ জন ডেঙ্গির শিকার। যদিও বেসরকারি মতে সংখ্যাটি দু’হাজার ছাড়িয়েছে। কারণ এর মধ্যে অনেকেই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানোয় প্রকৃত চিত্র পেতে ব্যর্থ সরকারি সংস্থাগুলি। শুধু মাত্র চলতি সপ্তাহেই মঙ্গলবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ জন। চলতি বছরে এই রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে দক্ষিণ ও উত্তর দিল্লিতেই।
ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের আক্রমণ দিল্লিতে নতুন নয়। ইনস্টিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলারি সায়েন্সের সহকারি অধ্যাপক এ গুপ্ত-র মতে, গত পনেরো বছরে রাজধানীতে দফায় দফায় ডেঙ্গি হানা দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে রাজধানীতে কার্যত মহামারীর আকার নেয় এই রোগ। পরবর্তী সময়ে ২০০৩, ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০১০ সালেও ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছে গোটা দিল্লিতে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গত দু’বছর আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামুলক ভাবে কম থাকলেও চলতি বছরে ফের স্বমহিমায় ফিরেছে ডেঙ্গি। পরজীবী বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখন পর্যন্ত দিল্লিতে টাইপ ১ (ডেং-১) থেকে টাইপ ৪ (ডেং-৪) এই চার ধরনের ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করেছেন, যে ভাবে চলতি বছরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এর পিছনে নতুন কোনও ভাইরাস থাকলেও থাকতে পারে। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স (এইমস) এর পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে রাজধানীতে ডেঙ্গির জন্য প্রধানত দায়ী ছিল যথাক্রমে ডেং-৪ ও ডেং-১। এ বছর মূলত কোন ভাইরাসের জন্য দিল্লিতে ডেঙ্গির এই প্রকোপ, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু করেছে এইমস ও ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল।
ডেঙ্গি দমনে কী করছে দিল্লি সরকার?
মশাবাহিত এই রোগ রোখার চেয়ে এখন পারস্পরিক তরজায় বেশি ব্যস্ত দিল্লি সরকার ও পুরসভা। দিল্লির কংগ্রেস সরকার এই রোগের প্রকোপ বাড়ার পিছনে দায়ী করেছে বিজেপি পরিচালিত পুরসভাকেই। দিল্লি পুরসভার তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় কোটি বাড়িতে পুরসভার বিশেষ দল তল্লাশি চালিয়েছে। জল জমে থাকার জন্য প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি বাড়ির মালিককে নোটিস ধরিয়েছে পুরসভা। যদিও পুরসভার এই দাবি মানতে চাননি দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কে ওয়ালিয়া। তাঁর বক্তব্য, “সরকারের কাজ হল নির্দেশিকা জারি করা। আর তা রূপায়ণ করার দায়িত্বে থাকে পুরসভা। কিন্তু বিজেপি পরিচালিত পুরসভা মশা দমনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তা না হলে ফি বছর এ ভাবে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি মহামারীর আকার নিত না।” |