পুণে অধিনায়ক চাইছে মাইকেল ক্লার্ককে
সৌরভের আইপিএল ইনিংস শেষ হতে যাচ্ছে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি অবশেষে তাঁর ক্রিকেটজীবন শেষ করলেন? নাকি এর পরেও আইপিএল সিক্সে দেখা যাবে ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ককে?
ভারতীয় ক্রিকেটের আইপিএল অলিন্দে শনিবার প্রশ্নটা দিনভর ঘুরপাক খেল। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি সান টিভি বাদ দিয়ে বাকি সবারই এখন নতুন হালখাতা খোলার সময়। তার আগে পুরনো স্টক ঝাড়াই-বাছাই করে নিতে হবে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আইপিএল কমিটিকে জানিয়ে দিতে হবে কোন কোন প্লেয়ার আগামী মরসুমের জন্য তারা রাখছে। কাকে কাকে ছেড়ে দিচ্ছে। নাইট রাইডার্স যেমন ঠিক করে ফেলেছে মোটামুটি একই টিম ধরে রাখবে। এখন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যে সব প্লেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে তারা খোলা বাজারে চলে যাবে নিলামের জন্য। আর যদি কেউ নিজের প্লেয়ার বিক্রি করতে চায়, তা হলে সেই ‘ট্রেডিং উইন্ডো’ খুলবে আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে। দু’একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স কী করে?
বিশেষ করে ক্রিস গেইলকে নিয়ে কী করবে ঠিক করে? আরসিবি মালিক বিজয় মাল্য যেমন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছেন, তাতে এত টাকা দিয়ে তিনি গেইলকে রাখতে পারবেন কি না, অনেকেই সন্দিগ্ধ। তাঁদের মনে হচ্ছে যদি বা গেইলকে রাখে, এবি ডে’ভিলিয়ার্সকে ছেড়ে দিতে হবে। তখন এঁদের টেনে নেওয়া যাবে। নতুন প্লেয়ার তোলার জন্য সবচেয়ে তৎপরতা এখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, সান টিভি আর পুণে ওয়ারিয়র্সের।
গেইলের জন্য অধৈর্য অপেক্ষা ছাড়া নিলামে সবচেয়ে দর ওঠার সম্ভাবনা মাইকেল ক্লার্কের। যাঁকে গত বার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সই করিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। টি-টোয়েন্টিতে মোটেও আহামরি নয় ক্লার্কের রেকর্ড। ৪৬ ম্যাচে রান করেছেন ৭৩৭। সর্বোচ্চ মোটে ৬৭। স্ট্রাইক রেট ১০৮। গড় ২১। শেষ আইপিএলে তো শোচনীয়। পুণের হয়ে ৬ ম্যাচে করেন মাত্র ৯৮। গড় ১৬। স্ট্রাইক রেট ১০৪। তবু ক্লার্ককে নিয়ে টানাটানির কারণ তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মনে করছে সচিন আর বেশি দিন খেলবেন না। মাঠে ও মাঠের বাইরে টিমের অধিনায়কত্বের কাজটা সামলানোর জন্য এমন একজন মানুষ দরকার, তার নাম আর যা-ই হোক হরভজন সিংহ না। মনে করা হচ্ছে কখনও কোনও বিতর্কে জড়াতে না চাওয়া, শান্ত স্বভাবের অথচ অনুপ্রেরণাদায়ক ক্লার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির এই দিকটা সামলে দিতে পারবেন। এমনিতে ক্লার্ককে ধরে রাখা সম্ভব হলে পুণে তাঁকে নিলামে পাঠানোর ঝুঁকি নিত না। কারণ কোনও নিশ্চয়তা নেই যে, নিলামে তাঁকে কেনা যাবেই। অথচ উপায়ও নেই। ক্লার্কের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল মাত্র এক বছরের।
পুণের অন্দরমহলের খবর, যুবরাজ সিংহকে এ বার আইপিএলে পাওয়া যাবে জেনেও অধিনায়ক হিসেবে ক্লার্কের কথাই ভাবা হয়েছে। গত বারের অধিনায়ক সৌরভের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজির সম্মানজনক বোঝাপড়া হয়েছে। সৌরভ নিজেই অনুরোধ করেছেন এই সিজনটা আর খেলতে চান না। তারাও সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছে। চল্লিশ বছরে পা দেওয়া সৌরভ এ বছর খেলবেন কি না তা নিয়ে প্রচুর জল্পনা চলছিল। সৌরভ পরিষ্কার করে কোথাও বলেননি তিনি খেলবেন না। কিন্তু পুণে কর্তাদের নাকি জানিয়েছেন নিজের অনাগ্রহের কথা।
সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে শনিবার রাতে সৌরভ আনন্দবাজারকে বললেন, “পুণে অফিশিয়ালদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বোধহয় আমি আর আইপিএল খেলব না। গত বারই পুণে কর্তাদের বলে দিয়েছিলাম যে আর হয়তো আইপিএল খেলব না।”
পুণের ভেতরকার একটা মহল গত বছর টিম খারাপ খেলতে শুরু করা মাত্র সৌরভ সম্পর্কে পরিষ্কার বিতৃষ্ণা প্রকাশ করতে থাকে। এরা চাইছিল আইপিএল সিক্সে বিদেশি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের হাতে টিমের ভার তুলে দিতে। অর্থাৎ হেড কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। আর মনোবিদ প্যাডি আপটন। কিছু দিন আগে মুম্বইয়ে দিলীপ সরদেশাই স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সৌরভ বলেছিলেন, আইপিএল অধিনায়কত্ব করতে গেলে প্রচুর চাপের সম্মুখীন হতে হয়। বসদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এর চেয়ে ভারত অধিনায়কত্ব করা সহজ। অন্তত ফোন করে কেউ জবাবদিহি চায় না। ইউ-টিউবে সৌরভের সেই সাক্ষাৎকার রয়েছে। সৌরভ-বিরোধী শিবিরের একাংশ মাসখানেক আগে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের লিঙ্ক পাঠিয়ে দেন পুণে কর্তাদের মেলে। কাহিনির সারমর্ম: এই অধিনায়ক শৃঙ্খলাপরায়ণ নয়।
পুণের টিমটাকে নিয়ে গত বার কিন্তু চমক সৃষ্টি করেছিলেন সৌরভ। পুণে শেষ পর্যন্ত টেবলে সবার নীচে শেষ করে। সৌরভ শেষ করেন ১৫ ম্যাচে ২৬৮ রান নিয়ে। গড় ১৭.৮৬। যা আইপিএলে তাঁর দুঃস্বপ্নের পরিসংখ্যান। অথচ প্রথম ম্যাচে দুধর্র্র্ষ অধিনায়কত্ব করে জিতিয়েছিলেন। কোটলায় দিল্লির বিরুদ্ধে তো ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। পুণেকে টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স মনে হচ্ছে এই অবস্থায় অশোক দিন্দার চোট লেগে যায়। আর বেঙ্গালুরুতে এক অভিশপ্ত ওভারে আশিস নেহরা ২৪ রান দিয়ে টিমকে হারিয়ে দেন। এইখান থেকে শুরু হয় অধিনায়ক সৌরভের ভাগ্য বিপর্যয়। টিমের সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা রবিন উথাপ্পা ১৬ ম্যাচে মাত্র ১১৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে গড় রাখেন ২৭। স্টিভ স্মিথ বাদ দিলে সৌরভ কার্যত দলে কারও কাছ থেকে ম্যাচ জেতার রসদই পাননি। টিমও সব সময় তিনি বেছেছেন এমন নয়। ইডেনেই তো সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে সাত নম্বরে খেলতে হয়েছিল। তবু খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য যেমন অধিনায়কই অভিযুক্ত হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে সৌরভও ব্যতিক্রম নন। অদৃষ্টের এমনই পরিহাস, শোনা যাচ্ছে সেই নেহরাকে পুণে ঠিক করেছে রাখবে বলে। উথাপ্পাতিনিও থাকছেন।
সৌরভের পক্ষে বাস্তব হল অকাট্য কিছু যুক্তি। মহাতারকা হিসেবে আপাতত তিনি যে কক্ষপথে বিচরণশীল, তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি সব সময় ব্যাট-বল আর অধিনায়কত্ব দিয়ে তাঁর বিচার না-ও করতে পারে। অন্তত গত আইপিএলের নিরিখে জনআকর্ষণের প্রশ্ন তর্কাতীত ভাবে সৌরভ দেশে তিন নম্বর। তাঁর আগে শুধু সচিন আর ধোনি। বিরাট কোহলি তরুণদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আইকন। কিন্তু পুণের হয়ে গোটা আইপিএল সৌরভ যে ভাবে লোক টেনেছেন, সেটা কোহলির পক্ষেও বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। সৌরভ যে ভাবে ব্র্যান্ড সম্পর্কে কৌতূহল ধারাবাহিক ভাবে রেখে দিয়েছিলেন, তাতে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি কৌতূহলী হতেই পারে। বিশেষ করে সান টিভির মতো নতুন কেউ। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেখা গিয়েছে তিনি খেললে টিআরপি রেটিং বেড়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটে বেশি সংখ্যক হিট হয়েছে আগ্রহী দর্শকদের। এই বাজার বিপণনের জগতে চট করে এমন মহাতারকা কেউ ছেড়ে দিতে চায় না। বিশেষ করে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে খুবই আকর্ষণীয়। কেকেআর যেমন পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েও ব্রেট লি-র ব্যাপারে তাদের নানা মহলের অভক্তি জেনেও বিপণনের কথা ভেবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে থমকে যাচ্ছে। সৌরভ তো সেখানে ব্রেট লি-র চেয়ে অনেক বড় তারকা। শোনা যাচ্ছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে কিছু রদবদল হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সৌরভের মতো বড় চৌম্বকক্ষেত্র পেলে ছেড়ে দেবে তারা? ডাগআউটে বসে থাকলেও তো তিনি জনমানসে আগ্রহ উৎপাদন করবেন।
সৌরভ উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই সম্ভাবনা। বললেন, “কোচ-টোচ হওয়ার তো অনেক সময় পড়ে রয়েছে। প্লেয়ার হিসেবে অন্য কেউ অ্যাপ্রোচ করলেও আমি রাজি হব না। পুণেতে না খেললে অন্য কোথাও খেলারও প্রশ্ন নেই। আইপিএল না খেললে বাংলার হয়েও মাঠে নামব না।” পুণে কর্তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা পরিষ্কার ভাবে ভাঙলেন না সৌরভ নিয়ে পরিকল্পনা কী? মেন্টর করা হবে কি না? কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে ডোনাল্ড-ক্লার্ক-আপটন এই শাসন ব্যবস্থায় সৌরভ যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না।
আইপিএল মহাকাশে নাইট রাইডার্সের প্রত্যাখ্যানের পর মনে করা হয়েছিল ক্রিকেটার সৌরভ শেষ। পুণেতে অত্যাশ্চর্য অবতরণের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন, মৃত্যুর পরেও জীবন থাকতে পারে। এ বার কী হবে? জীবনের পর জীবন? না জীবনের পর মৃত্যু? সৌরভ নিজে জানাচ্ছেন, এই শেষ। তা হলে কি ২৩ মার্চ ১৯৯০ রঞ্জি ফাইনালে ইডেনে যে বর্ণময় ক্রিকেটজীবনের সূচনা হয়েছিল, তার বিসর্জন হয়ে গেল ২৭ অক্টোবর ২০১২-তে? পাকা উত্তর দু’দিনের ভেতর পাওয়া যাবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.