সমস্যা পিছু ছাড়ছে না সিটি গ্রুপের। বিক্রম পণ্ডিতের পর এ বার সংস্থা ছাড়তে হল গোষ্ঠীর শেয়ার সংক্রান্ত বিশ্লেষক মার্ক মাহানে-কে। ফেসবুকের শেয়ার ছাড়ার আগে হওয়া অনিয়মের জেরে সিটি গ্রুপে নিজের পদটি খোয়ালেন তিনি। পাশাপাশি, এই অনিয়মের জরিমানা হিসেবে ম্যাসাচুসেটসের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ২০ লক্ষ ডলার দিতে বাধ্য হয়েছে সিটি গ্রুপও। প্রশ্ন উঠেছে সংস্থার পরিচালন পদ্ধতি নিয়েও।
গত মে মাসে প্রথম বার শেয়ার বাজারে ছাড়ে মার্কিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক। সিটি গ্রুপের হয়ে মাহানে ওই বিষয়ে পরামশর্দাতা হিসেবে কাজ করার সময় গোপন তথ্য বাইরে বেরিয়ে যায়। মাহানের অধস্তন এক বিশ্লেষক এরিক জেকব্সই সংবাদ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট টেক-ক্রাঞ্চ-এ তাঁর বন্ধুদের ই-মেলে এই তথ্য পাচার করেন বলে অভিযোগ। যার মধ্যে ছিল ফেসবুক নিয়ে সিটি গ্রুপের তৈরি প্রাথমিক রিপোর্ট এবং শেয়ার ছাড়ার পর ফেসবুককে দেওয়া গোষ্ঠীর পরামর্শের খসড়া। অধস্তন কর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারারই খেসারতই এ বার দিতে হল সিলিকন ভ্যালির বিখ্যাত বিশ্লেষক মাহানে-কে। সরানো হল এরিক জেকব্সককেও। যদিও এ বিষয়ে মাহানে, জেকব্স এবং টেক-ক্রাঞ্চের কোনও সাংবাদিকই মুখ খুলতে চাননি।
নব্বইয়ের দশকে মর্গ্যান স্ট্যানলির হাত ধরেই তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় প্রবেশ মাহানের। কাজ করেছেন রাজারত্নম পরিচালিত হেজ ফান্ড সংস্থা গ্যালিয়নেও। ২০০৫-এ যোগ দেন সিটি গ্রুপে। গত ৫ বছর টানা সেরা তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকের সম্মান পাওয়া মাহানে পরিচিতি ভাল ব্যবহারের জন্যও। তাই তাঁর অপসারণে কিছুটা অবাক মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। নিখুঁত বিশ্লেষণ ও পরামর্শে বার বার যে শিল্পের বহু দিকপালকে সাহায্য করেছেন তিনি।
এ দিকে, পর পর দুই সপ্তাহে সিটি গ্রুপের দুই উচ্চপদস্থ কর্তার পদ খোয়ানো নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মার্কিন শিল্প মহলে। সংস্থার চেয়ারম্যান মাইকেল ও নিলের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে গত সপ্তাহেই পদত্যাগ করেন বিক্রম পণ্ডিত। সূত্রের খবর, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঘনিষ্ঠ বোর্ড সদস্যের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছেন ও নিল। পণ্ডিতের বিরুদ্ধে শিখণ্ডী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন প্রতি সদস্যকেই। শেষে গত সপ্তাহে পণ্ডিতকে ডেকে পাঠিয়ে তিনটি বিকল্পের একটি বেছে নিতে বলেন ও নিল। এক, অবিলম্বে সিইও পদ ছাড়তে হবে। দুই, বছর শেষে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তিন, নয়তো জোর করে সরিয়ে দেওয়া হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, পর্ষদ আস্থা হারিয়েছে পণ্ডিতের উপর থেকে। সম্মানের সঙ্গে সরে যেতে প্রথম সমাধানটিই বাছেন পণ্ডিত। নয়া সিইও হন ও নিলের পছন্দের মাইকেল এল কোবার্ট।
এর পরই একটি সংস্থায় চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সংশ্লিষ্ট মহল। পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্থার সুস্থ পরিচালনাই যেখানে চেয়ারম্যানের মূল লক্ষ্য, সেখানে প্রত্যাশার তুলনায় ভাল ফল করার পরও এক জন সিইও-কে কী করে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা নিয়েই ধন্দে তারা। পণ্ডিতের এই অবস্থা হলে, ভবিষ্যতে তাঁদের কী হবে তা নিয়ে আতঙ্কে সিটি কর্মীরা। আর তারই মধ্যে এ বার সরাসরি অনিয়মে যুক্ত না হয়েও মাহেনের এই অপসারণ সেই আতঙ্ক আরও বাড়াল। অবশ্য ফেসবুক শেয়ার নিয়ে বিতর্কের শুরু তা বাজারে আসার দিন থেকেই। পরামর্শদাতা মর্গান স্ট্যানলি সংস্থাটির চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ও পুরো অর্থবর্ষের ফলের পূর্বাভাস কমিয়েছিল। কিন্তু সে তথ্য সাধারণ লগ্নিকারীদের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে শেয়ার দরের পতনে লোকসান হয় তাঁদের। সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়। শেয়ার ছাড়ার দিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও ক্ষতির মুখে পড়ে ফেসবুক ও লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। আশ্চর্যের বিষয় হল, ফেসবুকের শেয়ার ছাড়া নিয়ে মর্গ্যান স্ট্যানলি, জে পি মর্গ্যান ও গোল্ডম্যান স্যাক্সস-এর মতো সংস্থা প্রথম থেকেই উঁচু আশা তৈরি করে দিয়েছিল। বরং বিষয়টি নিয়ে অযথা মাতামাতি না-করারই পরামর্শ দিয়েছিলেন মাহেনে। অথচ শেষে তাঁর উপরেই নামল শাস্তির খাঁড়া। |