গত ২২ সেপ্টেম্বর এবং ৬ অক্টোবরের তুলসীচরণ মণ্ডলের চিঠির প্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর এবং ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত সৈয়দ খালেদ নৌমানের চিঠি দু’টি নানা অসঙ্গতি ও আপত্তিকর মন্তব্যে ভরা। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর বড় দাদা। অতএব তিনি বেশি জানেন বলে দাবি করেছেন। খালেদের লেখা ‘মুর্শিদাবাদের কবিতা চর্চার ধারা’ গ্রন্থের ১১১-১১২ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে, ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত আলকাপ করেছেন মুস্তাফা সিরাজ। ওই গ্রন্থেরই ১৬১ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, খালেদ নৌমানের জন্ম ১৯৪৫ সালে। অর্থাৎ সিরাজ যখন আলকাপ শুরু করেন খালেদ তখন ৫ বছরের শিশু ও সিরাজ যখন আলকাপ ছাড়েন খালেদ তখন ১১ বছরের বালক। অথচ খালেদ লিখেছেন, জেলায় ও জেলার বাইরে সিরাজের ছায়াসঙ্গী হয়ে আলকাপ দেখার জন্য রাতের পর রাত কাটিয়েছেন তিনি। বয়সের কথা চিন্তা করে তাঁর চিঠির ওই তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত? তুলসীচরণের ভুল ধরে খালেদের দাবি, সিরাজ কোনও দিন ঝাঁকসার দলে ছিলেন না। অথচ ১৪০৭ সালের ‘বৈশাখী’ পত্রিকার শরৎকালীন সংখ্যায় ‘মুশির্দাবাদের লোকনাট্য: আলকাপ’ নিবন্ধের ৮৩ পৃষ্ঠায় সিরাজ সম্পর্কে খালেদ নিজেই লিখেছেন, “প্রথম দিকে ওস্তাদ ঝাঁকসুর দলে পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে কিছুদিন যুক্ত থাকলেও পরে ওস্তাদ হিসাবে তিনি (সিরাজ) আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।” প্রতিভারঞ্জন মৈত্র সম্পাদিত ‘মুর্শিদাবাদ চর্চা’ গ্রন্থের ২১২-২১৩ পৃষ্ঠায় ‘মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি: আলকাপ’ নিবন্ধে খালেদ লিখেছেন, “ওস্তাদ ঝাঁকসুর আমন্ত্রণে ওস্তাদ সিরাজের সঙ্গে তিনি (সুধীর দাস) ঝাঁকসুর দলে যোগ দেন। সিরাজ সেই সময় পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে ওস্তাদ ঝাঁকসুর দলে সামান্য কিছুদিন অভিনয় করার পর নিজেই ওস্তাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে সুধীর সিরাজের দলে চলে আসেন।” খালেদের দু’টি নিবন্ধই প্রমাণ দিচ্ছে, সিরাজ অল্প কিছুদিন হলেও ঝাঁকসার দলে ছিলেন। তুলসীচরণ ঝাঁকসাকে ‘আলকাপের সম্রাট’ বলে অপরাধী হলে ‘মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি: আলকাপ’ নিবন্ধের ২১২ পৃষ্ঠায় খালেদ নিজেই ঝাঁকসাকে ‘আলকাপের রাজা’ বলে একই অপরাধ করেছেন। স্বয়ং সিরাজ তাঁর ‘মায়ামৃদঙ্গ’ উপন্যাসের ৮৮ পৃষ্ঠায় ঝাঁকসাকে ‘ওস্তাদের রাজা’ বলেছেন। ‘মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি: আলকাপ’ নিবন্ধের ২১১ পৃষ্ঠায় সিরাজ ঝাঁকসার অবদান নিয়ে বলেছেন, “ছি-ঘেন্না করা অশ্লীলতার বহু নিন্দিত আলকাপকে তিনি (ঝাঁকসা) সম্মানের আসনে বসিয়েছিলেন। আলকাপকে নোংরা ধুলোবালি থেকে কুড়িয়ে মানুষ করেছিলেন ওস্তাদ ঝাঁকসা।” চিঠিতে খালেদ লিখেছেন, আলকাপে কোনও দিন মেয়েরা নামেনি এবং নামলেই তা পঞ্চরস হয়ে গিয়েছে। কোনও শিল্পেরই এরকম শর্ত থাকে নাকি? একদা নাটক-যাত্রা-আলকাপ-গম্ভীরার মতো কোনও শিষ্টশিল্প বা লোকশিল্পে মেয়েরা নামত না। আলকাপে ঝাঁকসাই প্রথম তাঁর দুই মেয়ে মীরা এবং চিনিকে নামান। তার জন্য তাঁকে ‘একঘরে’ হতে হয়। সূক্ষ্ম হাস্যরস থেকে স্থূল আদিরস আলকাপ শিল্পে এলে তা ‘পঞ্চরস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়। দীপক বিশ্বাস, বহরমপুর। |