কমিশনারেট গঠনের পরে খনি ও শিল্পাঞ্চলে অবৈধ কয়লা কারবার প্রায় বন্ধ রয়েছে বলে বারবার দাবি করেছে পুলিশ। কিন্তু এই দাবি যে পুরোপুরি ঠিক নয়, সম্প্রতি ইসিএল কর্তৃপক্ষের একটি অভিযোগে তা ফের সামনে এসেছে। সালানপুর, বারাবনি এলাকায় তাদের লিজ নেওয়া জমিগুলিতে অবৈধ খনন চলছে জানিয়ে পুলিশের কাছে উপযুক্ত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়েছে ইসিএল। সম্প্রতি কয়লা চুরি ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে ইসিএল কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠকও হয়। ইসিএল ওই অবৈধ খাদান ভরাটের ব্যবস্থা করবে এবং পুলিশ তাতে সাহায্য করবে, বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ইসিএলের অভিযোগ, দিঘলপাহাড়ি, খররাবাঁধ, সংগ্রামগড়, মোহনপুর, গৌরান্ডি, সরিষাতলি, রসুনপুর, ডাবর, শালঘাটে তাদের লিজ নেওয়া এলাকায় কয়েকশো খাদানে কয়লা চুরি চলছে। গত বিধানসভা ভোটের সময় থেকে কিছু দিন এই খাদানগুলিতে কয়লা চুরি বন্ধ ছিল। কিন্তু সেগুলি ফের চালু হয়েছে। সিআইএসএফ দিয়ে চুরি আটকানোর চেষ্টা করেও ফল না হওয়ায় পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয় বলে জানিয়েছে ইসিএল।
সম্প্রতি সালানপুর এরিয়া অফিসে একটি বৈঠক হয়। ওই এরিয়ার জিএম অজয়কুমার সিংহের নেতৃত্বে মোহনপুর, বারমুন্ডিয়া ও বনজেমারির কোলিয়ারির এজেন্ট এবং সিআইএসএফের আধিকারিক-সহ একটি প্রতিনিধি দল তাতে যোগ দেয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক জন এসিপি ও দুই থানার আধিকারিকেরা বৈঠকে ছিলেন। ইসিএলের তরফে জানানো হয়, অবৈধ খাদানগুলি আগে বহু বার বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মাফিয়ারা সেখানে ফের খনন চালাচ্ছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ইসিএল সেগুলি ফের ভরাট করবে। জিএম অজয়কুমার সিংহ জানান, খাদান বন্ধে পুলিশি সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রতবাবু বলেন, “আমরা ইসিএলকে সাহায্য করব। যারা অবৈধ খাদান চালাচ্ছে, ইসিএলকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।”
কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে অবৈধ খাদানগুলি থেকে ফের কয়লা চুরি শুরু হল কেন? ইসিএল কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, বর্ষায় জল ঢুকে খাদানগুলি বিপজ্জনক হয়ে যায়। খননকারীরা সেখানে নামতে ভয় পায়। তাই সেগুলি এত দিন বন্ধ ছিল। বর্ষা মিটতেই ফের খনন শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ আবার মনে করছেন, এলাকার বেকারদের কাছে এই খাদানগুলি রোজগারের উপায়। বহু বাসিন্দা এই খাদানগুলির উপরে নির্ভরশীল। ভোটবাক্সের দিকে তাকিয়ে নানা রাজনৈতিক দলও তাদের মদত দেয় বলে অভিযোগ। তাই পঞ্চায়েত ভোট সামনে আসতেই অবৈধ খাদানের রমরমা শুরু হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অবৈধ খাদান বন্ধে ইসিএল ও পুলিশ কতটা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, তা-ই এখন দেখার। |