সরকারি উদ্যোগে ধাক্কা, উঠছে প্রশ্ন
মনোরোগীদের পুজোয় প্রাপ্তি পোশাক-প্রহসন
সালোয়ারের ঝুল কমতে কমতে কারও ক্ষেত্রে কেপ্রির চেহারা নিয়েছে। কুর্তা এতই আঁটোসাঁটো যে, পরে অস্বস্তিতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছিলেন না অনেকে। সঙ্গে দোপাট্টাও ছিল না। ওই পোশাকে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার সময়ে বেঁকে বসেছিলেন রোগিণীদের একটা বড় অংশ। লজ্জায় কেঁদেও ফেলেন কেউ কেউ। পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে মনোরোগীদের পুজোয় নতুন পোশাক দেওয়ার নামে এই ‘প্রহসন’ চলেছে কলকাতার বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগে সরব হয়েছে মনোরোগীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই মানসিক হাসপাতালগুলিতে পুজোয় নতুন পোশাক সরবরাহ করার রেওয়াজ রয়েছে। মূলত ‘তন্তুজ’ থেকেই ওই পোশাক নেওয়া হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতার পাভলভ, লুম্বিনী পার্ক, ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি, বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল এবং পুরুলিয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল কেয়ার-এর ৯৩৯ জন রোগীর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা। প্রত্যেক রোগী বা রোগিণী-পিছু সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয় ৬০০ টাকা। বলা হয়েছিল, ওই টাকায় মহিলাদের জন্য শাড়ি বা সালোয়ার এবং পুরুষদের জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি বা শার্ট-প্যান্ট কিনতে হবে। বাস্তবে দেখা গেল, নতুন পোশাক কেনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা পরে রোগিণীদের অস্বস্তি বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। সালোয়ার কামিজ মাপে ছোট হয়েছে প্রায় সকলেরই। যাঁরা কস্মিনকালেও শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পরেননি, তাঁদের জন্যও সালোয়ার-কামিজই এসেছে। লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালে একাধিক বয়স্কা রোগিণী সালোয়ার-কামিজ পরতে অস্বীকার করেছেন। একই অবস্থা ছিল পাভলভ এবং ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতেও।
যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা করেছিল, তাদেরই এক সদস্যের অভিযোগ, “নার্সরা বহু রোগিণীকেই জোর করে পোশাক পরান। কারও কারও ক্ষেত্রে অন্তর্বাসও ছিল না। ওই অবস্থায় বাধ্য হয়েই আঁটোসাঁটো পোশাক পরে তাঁদের অনেকেই চোখের জল ফেলতে ফেলতে ষষ্ঠীর সকালে আমাদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “হাসপাতাল সুপারদের উপরে পোশাক কেনার দায়িত্ব ছিল। তাঁরা আবার দায়িত্ব দিয়েছিলেন দফতরের কোনও কর্মীকে। কেন মাপ নিয়ে পোশাক কেনা হয়নি, কেন গোটা বিষয়টি যথাযথ ভাবে তত্ত্বাবধান করা হয়নি, সেই বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে। এই আচরণের জন্য সরকারের উদ্যোগটাই ধাক্কা খাচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগে সরব হয়েছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশও। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনিক স্তর থেকেও মনোরোগীদের ঠিক কী নজরে দেখা হয়, এই ঘটনা থেকে তা স্পষ্ট। এর জেরে রোগীদের অবসাদ আরও বাড়বে। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “রাজ্য জুড়ে যখন ম্যালেরিয়ার দাপট, তখনও ওঁরা মশারি পাননি। যুক্তি ছিল, যদি মশারির দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগান! খালি পায়ে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে ঘুরে হাজারো রোগ বাধালেও ওঁদের জন্য হাওয়াই চটি বরাদ্দ করা নিয়ে আপত্তি উঠেছিল। যদি ওই চটি নিয়ে তাঁরা পরস্পরকে মারতে যান! এ ভাবেই নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছেন মানসিক রোগীরা।” লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ঘটা করে লোক জানিয়ে পুজোর দিনে বিশেষ খাওয়াদাওয়া আর নতুন জামা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার মান নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।”
মানসিক হাসপাতালগুলিতে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায় এ বিষয়ে বললেন, “পুজোর দিনে মনোরোগীদের নতুন পোশাক দেওয়ার উদ্যোগকে আমরা নিশ্চয়ই স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু বিষয়টা স্রেফ নিয়মরক্ষায় আটকে থেকে গিয়েছে। ছোট মাপের পোশাক সরবরাহের মধ্যে দিয়ে চূড়ান্ত অবজ্ঞা আর অযত্নই নির্মম ভাবে ফুটে ওঠে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.